অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চল-উন্নয়ন বরাদ্দ বাড়ূক

পদ্মা নদীতে সড়ক ও রেল সেতু নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে দক্ষিণাঞ্চল তথা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে জরুরি পরিকল্পনা প্রণয়নের তাগিদ দিয়েছেন ওই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি, শিল্প-বাণিজ্যের উদ্যোক্তা এবং সুশীল সমাজ।


শনিবার রাজধানীতে বরিশাল পরিক্রমা পত্রিকা আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, এক সময় প্রাচুর্যের জন্য খ্যাতি ছিল দক্ষিণাঞ্চলের। ধান-নদী-খালের এ অঞ্চলে মৎস্য ও ফলফলাদি উৎপাদন হতো প্রচুর। সুগন্ধ ও স্বাদের জন্য আমন মৌসুমের বালাম চালের খ্যাতি দেশের সীমা অতিক্রম করেছিল। শিক্ষায় অঞ্চলটি ছিল অন্য অনেক এলাকার তুলনায় এগিয়ে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও ছিল গর্ব করার মতো। এখন সবই যেন সুখস্মৃতিচারণের মতো। অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় মাথাপিছু আয়ে পিছিয়ে পড়েছে বরিশাল বিভাগ। ঝড়-বন্যা-জলোচ্ছ্বাস এবং নদীভাঙনের কারণে অভাবী লোকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সর্বোপরি রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত চরম হুমকি, যা সাগরগর্ভে বিলীন করে দিতে পারে উপকূলের বিস্তীর্ণ ভূখণ্ড। এ বিভাগের ছয় জেলায় শিল্প প্রতিষ্ঠান হাতেগোনা কয়েকটি। মাছ, সবজি ও ফলমূল প্রচুর উৎপাদন হলেও তা সংরক্ষণের জন্য পুরো বিভাগে একটিও কোল্ড স্টোরেজ স্থাপিত হয়নি। উন্নয়ন বাজেটে ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগও রয়েছে এ বিভাগের বাসিন্দাদের। এ প্রেক্ষাপটেই বরিশাল পরিক্রমার আলোচনা সভায় আসন্ন জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর তাগিদের পাশাপাশি জোর দেওয়া হয়েছে তৃণমূল পর্যায়ের চাহিদা বিবেচনায় রেখে কর্মপন্থা প্রণয়নের ওপর। পদ্মায় সেতু নির্মাণ হলে সড়ক-রেল ও নৌপথের সুবিধা বিনিয়োগের অপরিমেয় সুযোগ সৃষ্টি করবে। রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে কাছের বিভাগীয় শহর বরিশালকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পাবে নতুন গতিবেগ। পটুয়াখালী সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর নির্মিত হলে সেটাও হবে চট্টগ্রাম ও মংলার তুলনায় রাজধানীর কাছের বন্দর। একই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদীগুলোর ড্রেজিংয়েরও সুপারিশ করা হয়েছে। এতে কৃষিকাজ ও মৎস্যচাষের সম্ভাবনা আরও ভালোভাবে কাজে লাগানো যাবে। কুয়াকাটাকে কেন্দ্র করে পর্যটন অঞ্চল সৃষ্টিরও রয়েছে অপার সম্ভাবনা। ভোলায় মিলেছে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তা ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই চালু রয়েছে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিভাগের একাধিক এলাকায় এ গ্যাসভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন সম্ভব। এ ধরনের নানা উদ্যোগ বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করবেই। সরকার শুল্ককর ছাড় প্রদান করলে তাদের উৎসাহ বাড়ে, এটাই অভিজ্ঞতা। পিছিয়ে পড়া কিন্তু সম্ভাবনাময় এ অঞ্চলের জন্য সরকার এ ধরনের পদক্ষেপ নিতেই পারে। এটাও মনে রাখা দরকার, সড়কপথ উন্নত এবং রেল সার্ভিস চালু হলে বরিশাল, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের বিপুলসংখ্যক লোক নিজেদের বাড়িতে থেকেই রাজধানী ঢাকার সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবে। রাজধানী ঢাকায় মানুষের চাপ কমানোর যে প্রত্যাশা এভাবে তা পূরণ হতে পারে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে ছাত্রছাত্রী ভর্তি শুরু হবে। পাশাপাশি চাখার এলাকায় ফজলুল হক কলেজের যে বিপুল অবকাঠামো সুবিধা রয়েছে তা কাজে লাগিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা যেতে পারে। মোট কথা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বিকেন্দ্রীকরণ এবং রাজধানীর ওপর জনবসতি ও অন্যান্য চাপ কমানোর যে পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে তা রূপায়ণের বাস্তব সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে পদ্মা সেতু এবং তা কাজে লাগাতেই হবে।
 

No comments

Powered by Blogger.