মধ্য আয়ের দেশ হতে হলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ জরুরি by রাহীদ এজাজ

একমাত্র শক্তিশালী ও সক্রিয় বেসরকারি খাতের সহযোগিতায়ই বাংলাদেশের একটি মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া সম্ভব। এ লক্ষ্য পূরণ করতে হলে আইনের শাসন, উন্নত অবকাঠামো ও নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা চাই।
ঢাকা সফরের প্রাক্কালে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইডো ভেস্টারভেল বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে এ অভিমত দিয়েছেন।


গত বৃহস্পতিবার ই-মেইলে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আগামী বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। তা ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি নিরাপত্তা, সুশাসন ও আইন সংস্কারে জার্মান সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
দুই দিনের সফরে ভেস্টারভেল আজ শনিবার সকালে ঢাকায় আসছেন। এ সফরের সময় তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁর মতবিনিময়ের কথা রয়েছে।
সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভেস্টারভেল বলেন, ‘একটি মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে কঠোর পরিশ্রম করছে বাংলাদেশ। একমাত্র একটি শক্তিশালী ও গতিশীল বেসরকারি খাতের সহযোগিতায়ই এ লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব। এ জন্য আইনের শাসন, উন্নত অবকাঠামো ও নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। উন্নয়ন সহযোগিতার অংশ হিসেবে এসব ক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি টেকসই প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা কাজ করে চলেছি।’
গুইডো ভেস্টারভেল অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা সম্প্রসারণের ওপর জোর দিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে জার্মান বিনিয়োগ বাড়বে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘জার্মানি হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী। এক বছরেই জার্মানিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়ে তিন বিলিয়ন ইউরো ছাড়িয়েছে। দুই দেশের ব্যবসা আরও বাড়ার সুযোগ আছে। তাই এ সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে আমার সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে সফর করছে।’
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার পর থেকে গত চার দশকে বাংলাদেশকে ২০০ কোটি ইউরোর সমপরিমাণ অর্থ দিয়েছে জার্মানি।
বাংলাদেশের উদীয়মান জাহাজ নির্মাণশিল্প নিয়ে ইতিমধ্যেই জার্মানিতে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। ভবিষ্যতে জার্মানিতে বাংলাদেশের জাহাজ রপ্তানি বাড়বে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জার্মানির ব্যবসায়ীরা এর ভালো উত্তর দিতে পারবেন। উন্নত মান ও প্রতিযোগিতামূলক দামের কারণে ইতিমধ্যেই জার্মানিতে বাংলাদেশে তৈরি জাহাজ সুনাম কুড়িয়েছে। তাই জার্মানিতে বাংলাদেশের জাহাজের সম্ভাবনা উজ্জ্বলই বলা যেতে পারে।’
দুই দেশের সম্পর্ককে কীভাবে মূল্যায়ন করেন জানতে চাইলে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘চার দশক ধরে বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা একে অন্যের অংশীদার হিসেবে কাজ করছি।’
অভিবাসন, বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো থেকে লোকজনের জার্মানিতে যাওয়াকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন জানতে চাইলে গুইডো ভেস্টারভেল বলেন, ‘আধুনিক জার্মানি একটি মুক্ত ও সহনশীল দেশ। লাখ লাখ অভিবাসীর অবদান ছাড়া জার্মানির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি হতো না, এটা আমরা অকপটে স্বীকার করি। একটি মুক্ত ও সহনশীল দেশ হিসেবে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর।’
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ আসছেন
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুইডো ভেস্টারভেল দুই দিনের সফরে আজ শনিবার ঢাকায় আসছেন। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করা তাঁর এ সফরের মূল লক্ষ্য।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারত সফর শেষে সেখান থেকে আজ শনিবার সকালে ঢাকায় আসবেন গুইডো ভেস্টারভেল। তিনি আজ দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন। এরপর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেবেন। এ ছাড়া তাঁর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের কথা রয়েছে।
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবে সে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে তিনি ঢাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন।
দুই দিনের সফর শেষে আগামীকাল রোববার সকালে গুইডো ভেস্টারভেলের বার্লিনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার কথা।

No comments

Powered by Blogger.