জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশবিনাশী কুঠার থামান-সবুজ হত্যার তাণ্ডব

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শীত-গ্রীষ্ম, ঈদ-পার্বণ মানেই একদল গাছের মৃত্যু। ঈদের ছুটিতে যখন ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীশূন্য, ঠিক সেই মুহূর্তেই কাটা পড়ল ৩০টি পরিণত বৃক্ষ। এর আগে গত জুন মাসে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতেও গাছ কাটার হিড়িক লাগে। গত কয়েক বছরে এমনটাই দেখা গেছে।


আশা করব, প্রশাসন অবিলম্বে ‘সবুজ হত্যা’ বন্ধ করবে। একটি গাছও না কেটে পরিবেশ ও বৃক্ষপ্রেমের নজির স্থাপন করবে, এটাই প্রত্যাশা।
আর্থিক স্বার্থে গাছ কাটার কাজটি বিভিন্ন স্বার্থবাদী মহল হরহামেশাই করে যাচ্ছে, কিন্তু পরিবেশ ও মানুষের জন্য ক্ষতিকর সেই কাজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করলে ভরসা রাখার আর জায়গা থাকে না। গত রোববারের প্রথম আলোয় প্রকাশিত সংবাদে দেখা যাচ্ছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সৌন্দর্যবর্ধনের অজুহাতে ৩০টি গাছ কেটে ফেলেছে। এর মধ্যে দেবদারু ও বটের মতো সুন্দর গাছও রয়েছে। উদ্দেশ্য: ক্যাম্পাসে ঢোকার সদর দরজা থেকে ক্যাম্পাসের মধ্যস্থলের শহীদ মিনারটি দৃশ্যমান করা। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রায় পোয়া কিলোমিটার দূরের মহাসড়ক থেকে শহীদ মিনারটি দেখানোর ব্যবস্থা করতে হলে শুধু অজস্র গাছই নয়, কয়েকটি ভবনও ভেঙে ফেলতে হয়। সৌন্দর্যবর্ধনের এ কেমন মহিমা যে ছুটির সময়ই গাছ কাটতে হয়? যে সৌন্দর্য দৃশ্যমান করা হয় অজস্র সবুজ হত্যা করে, তা কেমন সৌন্দর্য? প্রশাসনিক দৃষ্টিতে যা সুন্দর, ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকেরই কাছে তা এক অমানবিক সবুজবিরোধী আয়োজন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ আকর্ষণ এর সবুজময় মনোরম পরিবেশ। তাহলেও সামাজিক বনায়নের নামে পরিবেশ ও পাখপাখালিবান্ধব দেশি গাছ কেটে একাশিয়া, আকাশমণিজাতীয় ক্ষতিকারক গাছ সেখানে লাগানো হয়েছে। এখন আবার পরিবেশের নামেই সেগুলো কাটার কথা বলে উপকারী ও দৃষ্টিনন্দন গাছও সাবাড় করা হচ্ছে। বোঝা যায়, পরিবেশের চেয়ে গাছের ‘কাষ্ঠমূল্য’ই গাছ কাটার পেছনে প্রশাসনের উৎসাহের কারণ। শিক্ষার্থীসহ সচেতন মানুষ যেখানে গাছ দেখলে প্রাণ দেখে, সেখানে গাছমাত্রই ‘কাষ্ঠমূল্য’—এমন প্রশাসকীয় দৃষ্টিভঙ্গির আমরা ঘোরবিরোধী। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বারবার গাছ কেটে প্রমাণ করেছে, গাছের প্রাণের চেয়ে গাছের কাঠই তাদের কাছে বেশি মূল্যবান; কারণ তা বিক্রি করা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দাবি করেছেন, যা হয়েছে ‘স্বচ্ছ প্রক্রিয়া’তেই হয়েছে। গত কয়েক বছরে অজস্র গাছ কাটা যদি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া হয়, তাহলে বলতে হবে, প্রশ্নটা স্বচ্ছতার নয়, দৃষ্টিভঙ্গির। শুধু গাছ কাটাই নয়, বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদি নকশার বিকৃতি করে, লেক ভরাট করে, গাছ কেটে ভবন-স্থাপনা ইত্যাদি নির্মাণ করে এর সৌন্দর্যহানি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্তৃপক্ষই যখন এমন, তখন আরও উচ্চতর কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপই মনে হয় প্রয়োজন।

No comments

Powered by Blogger.