নতুন কমিশনের কার্যক্রম আশাব্যঞ্জক নয়-সংস্কারবিমুখ ইসির সংস্কার প্রস্তাব

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অস্তিত্বকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদাভাবে শনাক্ত করা যাচ্ছে বলে দাবি করা কঠিন। কমিশনের ১৭টি সভায় এ পর্যন্ত এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি, যা থেকে তাদের নেতৃত্বে আগামী সাধারণ নির্বাচন অধিকতর সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে জনমনে অধিকতর আস্থা সৃষ্টি হতে পারে।


ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা ছাড়া নির্বাচন কমিশনের আর কোনো উদ্যম এখনো চোখে পড়েনি। গত নভেম্বরে উপজেলা পরিষদ আইন সংশোধন করা হলেও তারা একটি বিধি পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি। এর ফলে উপজেলা পরিষদ তথা স্থানীয় সরকারের প্রাণকেন্দ্র পূর্ণাঙ্গতা পাচ্ছে না। সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের সুনির্দিষ্ট আদেশের লঙ্ঘন ঘটছে। কিন্তু এ নিয়ে পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশনের কোনো শিরঃপীড়া আছে বলে মনে হয় না। এমনকি উপজেলা স্তরের উপনির্বাচন অনুষ্ঠানেও তারা উদাসীন। অথচ ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ ও অন্য কিছু ইস্যুতে তারা দ্রুততার সঙ্গে তাদের পূর্বসূরিদের সমালোচনায় মুখর হয়েছে। সার্বিক বিচারে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত আশার সঞ্চার করতে পারেনি। তাদের এই অবস্থা প্রকারান্তরে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিকে আরও বেশি গ্রহণযোগ্যতা দিতে পারে।
সিইসি যুক্তি দিয়েছেন, সংবিধানে নির্বাচন কমিশনকে যথেষ্ট ক্ষমতা দেওয়া আছে। এটা তিনি যদি ভারতীয় সংবিধানের দিকে তাকিয়ে বলেন, তাহলে তিনি অসত্য বলেননি। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইনি কাঠামোর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী সংস্কৃতি, যা ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে নগণ্য। আর সে কারণেই প্রায় অভিন্ন সাংবিধানিক কাঠামো থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় নির্বাচন কমিশন যা পারে, বাংলাদেশ তা পারে না।
সিইসি বলেছেন, সরকারের আন্তরিকতাই মুখ্য। দলীয় বা নির্দলীয়, যে দলই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। সিইসি একটুখানি ভ্রান্ত। নির্দলীয় হলে বর্তমান ক্ষমতাই ঠিক আছে; কিন্তু দলীয় হলে ঠিক নেই। তা ছাড়া উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আরও সংস্কারের পথে হাঁটতে হবে। বর্তমান ইসি চাইলেও বিভক্ত ঢাকায় নির্বাচন অনুষ্ঠানে অপারগ। কারণ, ক্ষমতাসীন দলের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ। এখন ইসি যদি এই বাস্তবতা অস্বীকার করতে চায় এবং জনগণকে তাদের সঙ্গে সুর মেলাতে বলে, তাহলে তারা প্রকৃতপক্ষে বাস্তবতা-বিবর্জিত একটি অবস্থানেই নিজেদের দাঁড় করাবে।
আগের নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার যে চিন্তা করেছে, তার সঙ্গে আমরা নীতিগতভাবে একমত। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ারও এই ধারণা সমর্থন করেছেন। এ রকমের একটি অবস্থায় বর্তমান ইসি এ প্রস্তাবের চেয়ে উন্নত কিংবা কোনো উপযুক্ত বিকল্প প্রস্তাব না দিয়ে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। কেবল সংবিধান দিয়ে নয়, প্রচলিত আইনি কাঠামোতে যথেষ্ট পরিবর্তন আনার সুযোগ রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.