রোজার পণ্যের সরবরাহ বেড়েছে, তবু দাম নিয়ে শঙ্কা by মাসুদ মিলাদ

আসন্ন পবিত্র রমজান মাসের কথা মাথায় রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারের হাতেও অন্যবারের চেয়ে এবার মজুদ বেশি। নিত্যপণ্যের সরবরাহ বেড়েছে। তবে রমজানের কেনাকাটা শুরু হওয়ার আগেই বেড়ে চলেছে দাম।


এ কারণে সরবরাহ বেশি থাকা সত্ত্বেও রোজার মাসে বাজারের স্থিতিশীলতা ধরে রাখা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রোজায় সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে যেসব পণ্যের, সেগুলো হলো: ছোলা, চিনি, সয়াবিন ও পাম তেল, মসুর ডাল, মটর ডাল ও খেজুর। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত বছরের রোজার আগের সময়ের তুলনায় এবার এসব পণ্যের সরবরাহ অনেক বেশি।
তবে সরবরাহে সুখবর থাকলেও বাজারে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। খুচরা বাজারে শুধু চিনির দাম স্থিতিশীল আছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, এক মাসের ব্যবধানে খুচরা বাজারে মটর ডাল, মসুর ডাল, ছোলা ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি দুই থেকে পাঁচ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ ভালো থাকায় রমজানে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, দু-একটি ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে এবার পণ্যের দাম অনেক স্থিতিশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, চিনি, কানাডার মোটা মসুর ডালসহ কয়েকটি পণ্যের দাম কমেছে। দেশের বাজারে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য।
সরকারি প্রস্তুতি: বেসরকারি আমদানির পাশাপাশি সরকারি সংস্থা টিসিবি এবং চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনও আমদানি বাড়িয়েছে। চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের হাতে এক লাখ ৭০ হাজার টন চিনির মজুদ আছে বলে শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া ঘোষণা দিয়েছেন। রোজায় চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে এই মজুদ গড়ে তোলা হয়েছে বলে শিল্পমন্ত্রী গত বুধবার ঢাকায় এক আলোচনা সভায় জানান।
টিসিবি জানায়, চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন ছাড়াও ভারতের মুম্বাই বন্দরে টিসিবির ২৫ হাজার টন চিনি জাহাজে বোঝাই হচ্ছে। এ মাসের শেষে বা আগামী মাসের শুরুতে এসব চিনি চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছাবে।
টিসিবির একজন কর্মকর্তা জানান, কানাডা ও তুরস্ক থেকে চার হাজার টন এবং মিসর থেকে চার হাজার টন মসুর ডাল আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া এক হাজার টন ছোলার একটি চালান ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছেছে। প্রাথমিকভাবে ৫০০ টন খেজুরের চালান বন্দরে আসার পথে রয়েছে। এস আলম গ্রুপ থেকে টিসিবির প্রায় সাড়ে ৩৭ লাখ লিটার ভোজ্যতেল সংগ্রহ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখন একই গ্রুপ পেট বোতলে ২৫ লাখ লিটার তেল সরবরাহ করছে টিসিবিকে। এসব চালান টিসিবির নিজস্ব ও ভাড়া করা গুদামে রাখা হচ্ছে।
টিসিবি চট্টগ্রামের প্রধান কর্মকর্তা মো. আকতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ছোলার চালান খালাসের প্রক্রিয়া চলছে। চিনি, মসুর ডাল ও খেজুর চট্টগ্রাম বন্দরে আসার পথে রয়েছে।
সরবরাহ বাড়ছে: চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হওয়া পণ্যের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রোজায় বেশি ব্যবহূত চিনির সরকারি-বেসরকারি আমদানি ও মজুদ এবার সবচেয়ে বেশি। গত তিন মাসে বন্দর দিয়ে চিনি আমদানি হয়েছে চার লাখ টনের বেশি। গত বছর একই সময়ে আমদানি হয় তিন লাখ ৩৪ হাজার টন।
এ বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে ভোজ্যতেল আমদানি কম হওয়ায় সরবরাহে শঙ্কা তৈরি হয়। এ সময় সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয় সোয়া দুই লাখ টন। অবশ্য গত দুই মাসে এই শঙ্কা কেটে গেছে। এই দুই মাসে সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয় দুই লাখ ৪৬ হাজার টন। কাস্টম হাউস নিয়ন্ত্রিত ছয়টি ট্যাংক টার্মিনালে গত বুধবার পর্যন্ত বেসরকারি আমদানির প্রায় ৫৮ হাজার ৯০০ টন সয়াবিন ও পাম তেল মজুদ আছে।
তবে সরবরাহে শঙ্কা কাটলেও দামে শঙ্কা কাটছে না ভোজ্যতেলের। খুচরা বাজারে এখনই খোলা সয়াবিনের দাম ১৩২ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে দুই টাকা বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো।
জানতে চাইলে এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, মার্চে ভোজ্যতেল আমদানি কমলেও এখন বেড়েছে। চিনির সরবরাহ ও মজুদ এখন বাড়তি। সরবরাহ ভালো থাকায় রোজায় চিনি-তেলের দাম বাড়ার শঙ্কা নেই।
ভোজ্যতেল ছাড়াও গত তিন মাসে (মার্চ-মে) ছোলা আমদানি হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে আমদানি হয় প্রায় ৩৮ হাজার টন। এ হিসেবে ছোলার সরবরাহ আগের সময়ের তুলনায় বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ায় বাজারে ছোলার দাম বাড়তি। গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারে ভালো মানের ছোলা বিক্রি হয় ৭৫ থেকে ৭৮ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বেড়েছে এই পণ্যটির দাম।
রোজায় মটরের চাহিদা থাকে বেশি। গত তিন মাসে বন্দর দিয়ে মটর আমদানি হয় প্রায় এক লাখ পাঁচ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে আমদানি হয় এক লাখ দুই হাজার টন। অন্যদিকে, গত তিন মাসে মসুর ডাল এসেছে ২০ হাজার টন। গত বছর একই সময়ে আসে ১৫ হাজার টন।
এ বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রায় ২৪ হাজার টন খেজুর আমদানি হয়েছে। রোজা ছাড়া অন্য সময়ে খেজুরের চাহিদা খুব একটা থাকে না। এ কারণে এসব খেজুর রোজায় ব্যবহূত হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
জানতে চাইলে ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এবার ছোলা ছাড়া রোজার প্রায় সব কটি পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার দর স্থিতিশীল। এ কারণে এসব পণ্যের দাম অস্থিতিশীল হওয়ার সুযোগ নেই।

No comments

Powered by Blogger.