হাতিবান্ধায় অজ্ঞাত রোগ

ক্লাসে যে ছেলেটি প্রথম হয়, তাকে নিয়ে মা-বাবার স্বপ্ন থাকে। মা-বাবা দেখেন, এমনকি ছেলেটি নিজেও স্বপ্ন দেখে একটি সুন্দর আগামীর। কিন্তু সেই স্বপ্ন যখন হঠাৎ মাটিচাপা পড়ে, তখন কি আর সান্ত্বনার ভাষা খুঁজে পাওয়া যায়? এমনকি যে দুধের শিশুকে নিয়ে মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের হাসি-আনন্দে দিন কাটানোর কথা, সেই শিশুকে


যখন শায়িত করা হয় চিরনিদ্রায়, তখন সেই মা-বাবা কিংবা পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো ভাষা কি খুঁজে পাওয়া সম্ভব? শিশুসন্তানদের এমন অকালমৃত্যু মা-বাবার জন্য যে শূন্যতার সৃষ্টি করল, পৃথিবীর কোনো মহার্ঘ বস্তুর বিনিময়ে সে শূন্যতা পূরণ করা সম্ভব? শনিবার থেকে বুধবার_আক্রান্ত হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যেই মা-বাবার বুক খালি করে চলে গেছে অনন্যা ও অরণ্য। লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলায় যে অজ্ঞাত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে, সেই রোগে আক্রান্ত হয়ে চলে গেছে অনন্যা ও অরণ্য। এ নিয়ে সেখানে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, রোগটি এনকেফালাইটিস বা মস্তিষ্কের প্রদাহ। অতীতে একসময় শোনা গিয়েছিল, মশা হচ্ছে এ রোগের ক্যারিয়ার বা বাহক। সেটার সত্যতা যাচাই করে যথোচিত প্রতিষেধক ব্যবস্থা গৃহীত হওয়া জরুরি। তবে এ রোগের প্রকৃত কারণ সন্দেহাতীতভাবে নির্ণীত হওয়া দরকার। ঢাকা থেকে আইইডিসিআর, আইসিডিডিআরবির বিশেষজ্ঞ দল সেখানে গিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু করেছে। স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছুটি দেওয়া হয়েছে। এলাকায় গুজব ছড়াচ্ছে, ছড়াচ্ছে আতঙ্ক।
চিকিৎসক দল এটিকে নিপাহ ভাইরাসজনিত এনকেফালাইটিস বলে শনাক্ত করেছে। এনকেফালাইটিস মূলত মস্তিষ্কের প্রদাহ। নিপাহ ভাইরাসসহ নানা কারণে এ রোগটি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। তবে রোগটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলেও চিকিৎসকরা মন্তব্য করেছেন। যেখানে প্রায় প্রতিদিনই এ রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, সেখানে আতঙ্কিত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। বিশেষ করে আক্রান্ত পরিবারগুলোতে আতঙ্ক বেশি ছড়াবে_সেটাই স্বাভাবিক। এ রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে বা হাসপাতালে যেতে হবে। চিকিৎসকরা এনকেফালাইটিসের উপসর্গ কী হতে পারে তার কথাও বলেছেন। নতুন করে কেউ যেন এ রোগে আক্রান্ত না হয়, সে জন্য কী করতে হবে, তার পরামর্শও দিয়েছেন। কিন্তু তার পরও হাতিবান্ধায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও।
আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই রোগ ছড়ায় অসচেতনতা থেকে। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা সাধারণ জ্বর বা সর্দি-কাশি-জাতীয় রোগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে যাই না। নিজেরাই অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হই। নিজেদের মতো করে ওষুধ সেবন করি। এই সেলফ মেডিকেশনের অভ্যাস যে অনেক ক্ষেত্রে আমাদের জন্য বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনতে পারে, সেটা আমরা কখনো ভাবি না। এ রোগে আক্রান্ত কাউকে দ্রুত চিকিৎসার আওতায় তথা হাসপাতালে নেওয়া হলে মৃত্যুর আশঙ্কা প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু দেরি হলে রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে যায়। আবার আমাদের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার চিত্রটিও খুব একটা সুখকর নয়।
হাতিবান্ধা ও সংলগ্ন এলাকাগুলোয় যেহেতু দরিদ্র ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে অসচেতন মানুষের বসবাস বেশি, তাই রোগটি মোকাবিলায় সেখানে বিশেষ চিকিৎসক দল পাঠানো হোক। পাশাপাশি বিনা মূল্যে পর্যাপ্ত ওষুধের ব্যবস্থা করা হোক।

No comments

Powered by Blogger.