পবিত্র কোরআনের আলো-মনের ভেতর প্যাঁচ রেখে পথের দিশা পাওয়া যায় না

৭। হুয়াল্লাযী আনযালা আ'লাইকাল কিতাবা মিনহু আইয়াতুম্ মুহ্কামাতুন হুন্না উম্মুল কিতাবি ওয়া উখারু মুতাশাবিহাতুন; ফাআম্মাল্লাযীনা ফী ক্বুলূবিহিম যাইগুন ফাইয়াত্তাবিঊ'না মা-তাশাবাহা মিনহুব্ তিগা-আল ফিত্নাতি ওয়াব্তিগা-আ তা'উয়ীলিহী; ওয়ামা- ইয়া'লামু তা'উয়ীলাহূ ইল্লাল্লাহ; ওয়ার্রা-ছিখূনা ফিল ই'লমি ইয়াক্বূলূনা আমান্না- বিহী কুল্লুম্ মিন ই'নদি রাবি্বনা-; ওয়া মা- ইয়ায্যাক্কারু ইল্লা- উলুল আলবাব।


৮। রাব্বানা- লা-তুযিগ্ ক্বুলূবানা- বা'দা ইয্ হাদাইতানা- ওয়াহাবলানা- মিল্লাদুনকা রাহ্মাহ; ইন্নাকা আনতাল ওয়াহ্হাব।
৯। রাব্বানা- ইন্নাকা জা-মিউন্না-ছি লিইয়াওমিল্লা-রাইবা ফীহ; ইন্নাল্লাহা লা-ইউখলিফুল মীআ'দ। [সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৭-৯]
অনুবাদ
৭. তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি আপনার ওপর কিতাব নাজিল করেছেন। (এই কিতাবে দুই ধরনের আয়াত রয়েছে) এর কিছু হচ্ছে সুস্পষ্ট আয়াত, যেগুলো কিতাবের মৌলিক অংশ, অপর আয়াতগুলো হচ্ছে রূপক বা প্রতীকী। যাদের অন্তরে প্যাঁচ রয়েছে, তারা প্রতীকীগুলোকে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য লুফে নেয়, তারা অপব্যাখ্যা সৃষ্টির জন্য এসব আয়াত থেকে কিছু অংশের অনুসরণ করে। অথচ এসব বিষয়ের ব্যাখ্যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। যাদের মধ্যে জ্ঞানের গভীরতা আছে তারা বলে, আমরা এর ওপর ইমান এনেছি। এগুলো সবই তো আমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এসেছে। প্রজ্ঞাসম্পন্ন লোকরাই কেবল শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।
৮. (তারা আরো বলে) হে আমাদের প্রভু, তুমি আমাদের মনকে বাঁকা পথে নিয়ো না। যেহেতু তুমি আমাদের পথের দিশা দিয়েছ। তোমার দিক থেকে আমাদের প্রতি দয়া বর্ষণ করো। কেননা সব দয়ার মালিক তো তুমিই।
৯. হে প্রভু, তুমি অবশ্যই সমগ্র মানব জাতিকে তোমার সামনে একদিন সমবেত করবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ ওয়াদা ভঙ্গ করেন না।
(সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৭-৯)।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোতে আল্লাহ প্রদত্ত নির্দেশ ও সৎ উপদেশগুলো সরল মনে হৃদয়ঙ্গম করার বিষয়টি বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ কর্তৃক নাজিলকৃত কোরআনে দুই ধরনের আয়াত রয়েছে। একধরনের আয়াত হচ্ছে সুস্পষ্ট আয়াত, যাতে রয়েছে সুস্পষ্ট বর্ণনা_যা সবাই বুঝতে পারে। আর এ ধরনের আয়াতই কোরআনের মৌলিক অংশ। দ্বিতীয়ত, আরেক ধরনের আয়াত রয়েছে, যা রূপক বা প্রতীকী। রূপক আয়াতগুলো দৃশ্যত দুর্বোধ্য, যার অর্থ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না অথবা আল্লাহ যেটুকু জানান সেটুকুই জানতে পারে। এই আয়াতের শানেনুজুল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, খ্রিস্টান ধর্মবেত্তারা দুর্বোধ্য শব্দ ব্যবহার করে একত্ববাদের বিরুদ্ধে বিতর্ক করত। এসব বিতর্ক কোনো সততার ভিত্তিতে করা হতো না, বরং কুতর্ক করা হতো, আসলে তাদের মনের ভেতরেই ছিল প্যাঁচ। তারা কোরআনের প্রতীকী শব্দগুলোকেও ওই প্যাঁচের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করত। এই পটভূমিতেই আয়াতটি নাজিল হয়।
ৎআল্লাহ তায়ালা এখানে 'উলুল আলবাব' বা প্রজ্ঞাবান লোকদের লক্ষ্য করে এখানে বলেছেন যে প্রজ্ঞাবান লোকরাই প্রকৃত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। মনের ভেতরে প্যাঁচ রেখে দুর্বোধ্য শব্দের অপব্যাখ্যা করে বা কুতর্ক করে সত্যিকার পথনিদের্শনা পাওয়া যায় না। প্রকৃত পথনির্দেশ পেতে হলে সত্য ও ন্যায়ের প্রতি সরল বিশ্বাস এবং ইমানের দৃঢ়তা প্রয়োজন।
অন্তরের বিশুদ্ধতার ও প্রজ্ঞার পথনির্দেশ প্রদানের পর ৮ ও ৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহর কাছে কী ধরনের প্রার্থনা করা উচিত, তা অনুপম কৌশলে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে প্রার্থনার নির্দেশ দেওয়া হয়নি, বলা হয়েছে আল্লাহর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ও প্রজ্ঞাবান লোকরা যেভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানায়। তারা বলে, হে আমাদের প্রভু, তুমি আমাদের মনকে বাঁকা পথ বা প্যাঁচের পথে নিয়ো না, যেহেতু তুমি আমাদের এই কোরআনের মাধ্যমে সত্য পথের দিশা দিয়েছ। তুমি আমাদের প্রতি দয়া বর্ষণ করো, যেহেতু তুমিই দয়ার মালিক।
এই প্রার্থনার মধ্যে রয়েছে একত্ববাদীর মহান স্বাধীনতার মর্মকথা অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কারো কাছে যেন বান্দা দয়া প্রার্থনা না করে। ৯ নম্বর আয়াতে রোজ হাশরের দিনের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। একদিন জগতের সব মানুষ আল্লাহর দরবারে হাজির হবে জীবনের পাপ-পুণ্যের হিসাব-নিকাশ দিতে। সেদিন সত্যিকার এক আধ্যা@ি@@@ক দিন, সেদিন প্রত্যেক মানুষকে আল্লাহর সামনে ও তার বিবেকের সামনে দাঁড়াতে হবে।

গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.