আমার বৈশাখ by মিতা হক

আমিও এখন পহেলা বৈশাখের প্রথম প্রত্যুষে বটমূলের মোহনীয় সুরমূর্ছনার অংশী। নিজে গাই, অন্যদের সঙ্গে থাকি। মন ভরে যায়, প্রাণ ফিরে পাই। সারাটা দিন কাটে অন্তরে, কণ্ঠে সুরের মায়াজাল নিয়ে আব্বা আর আম্মার বাড়ির সঙ্গীত পরিবেশের জন্য মুখে বোল ফোটার আগেই সুরের কান তৈরি হয়ে গিয়েছিল আমার।


সুরের টানও টের পাই তখন থেকে। ছেলেবেলা থেকেই রমনা বটমূলে ছায়ানটের পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান দেখে আসছি। প্রথম যাই বড়দাকাকার আকর্ষণে। বাবা তার বড় ভাইকে বড়দা বলতেন বলে আমাদের কাছে ওয়াহিদুল হক ছিলেন বড়দাকাকা। ওই মাঠে ভোরের প্রকৃতি আর সুরের আবেশ আটকে ফেলে আমাকে। কৈশোরে মনে হতো, ওই রকম সাদা শাড়ি পরে সি্নগ্ধ ভোরে আমি কবে গাইব? ওই বটমূলে, মিনু আপার সঙ্গে?
বাঙালির ভাগ্য বটে, ছয় ঋতুর বৈচিত্র্যময় শোভায় একেকটি সকালকে উদ্ভাসিত হতে দেখেছে বিশ্বের আর কোন জাতি? ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে এই আস্বাদন প্রতিটি বাঙালির। কেবল ঋতু পরিবর্তনে জনজীবনে প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক ও কর্মময়তার যে পরিবর্তন ঘটে, সেই উৎসবগুলোই সর্ববাঙালির জাতীয় উৎসব। আজকাল নবান্ন, পৌষ মেলা, শারদোৎসব, বসন্তোৎসব দেশব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে। সবার ওপরে বাংলা বর্ষবরণ অর্থাৎ পহেলা বৈশাখের নতুন সূর্য আকাশে উঁকি দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রমনা বটমূলে নববর্ষকে আবাহন। আমি বৈশাখ মানে বুঝি লাখ লাখ মানুষ গান শুনছে, বাজনা শুনছে, আবৃত্তি শুনছে_ মঞ্চ থেকে একটার পর একটা ভেসে বেড়ানো সুমধুর সুর। সেই সুরের অনুরণনেই মানুষ নিজেকে জড়িয়ে ফেলে সৌন্দর্য আর শুভকর্মের প্রতিজ্ঞায়।
আমার স্বপ্ন ধরা দিয়েছে। আমিও এখন পহেলা বৈশাখের প্রথম প্রত্যুষে বটমূলের মোহনীয় সুরমূর্ছনার অংশী। নিজে গাই, অন্যদের সঙ্গে থাকি। মন ভরে যায়, প্রাণ ফিরে পাই। সারাটা দিন কাটে অন্তরে, কণ্ঠে সুরের মায়াজাল নিয়ে। কাছে থাকে মানুষ, দেশ, মানবিকতা। চাই, বছরজুড়ে এই রেশ নিয়ে চলতে। বাঙালিকে সঙ্গী করে আমার বৈশাখ, পহেলা বৈশাখ হোক আমাদের আনন্দ-উদ্দীপনা নিয়ে চলার আজীবনের বহতা নদী।

স মিতা হক :সঙ্গীতশিল্পী

No comments

Powered by Blogger.