চূড়ান্ত চুক্তির আগে জনসমক্ষে প্রকাশ করুন-পদ্মা সেতু: স্বপ্নই থেকে যাবে?

মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসেই পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে যে তোড়জোড় করেছিল, তা এখন অনেকটাই স্তিমিত। সৈয়দ আবুল হোসেন যোগাযোগমন্ত্রী থাকাকালে সেতু নির্মাণের প্রাথমিক কাজ যেমন জমি হুকুমদখল, অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তুতি, অর্থায়নের ব্যাপারে দাতাদের সঙ্গে চুক্তি সই—সবই হয়েছিল।


বর্তমান সরকারের আমলেই পদ্মা সেতু জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে তিনি স্বপ্নও দেখিয়েছিলেন। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু স্বপ্নই থেকে যাবে।
নতুন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে দেশে ফিরে যেসব কথাবার্তা বলেছেন, তাতে আশার আলো দেখা যায় না। গত বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে চূড়ান্ত চুক্তির জন্য মালয়েশিয়া প্রস্তাব দেবে। আর্থিক এবং দেশের স্বার্থ বিবেচনা করে যুক্তিযুক্ত সময়ের মধ্যে এই প্রস্তাব ধরে চূড়ান্ত চুক্তি হবে।’ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কথা অনুযায়ী, মালয়েশিয়ার সঙ্গে যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, সেটি অবকাঠামোগত উন্নয়নের, পদ্মা সেতুর নয়। অথচ যোগাযোগমন্ত্রী মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে সরকারি মহল থেকে এই ধারণা দেওয়া হয়েছিল যে পদ্মা সেতুর বিকল্প অর্থায়ন হয়ে গেছে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিটি এখনো বহাল আছে, কোনো পক্ষ বাতিল করেনি। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ এনে অর্থায়ন স্থগিত রেখেছে। সে ক্ষেত্রে বিকল্প অর্থায়নের চেষ্টা কতটা ফলপ্রসূ হবে, সেই প্রশ্ন যেমন আছে, তেমনি তাতে দেশের কতটুকু লাভ বা ক্ষতি হবে, তা জানার অধিকারও জনগণের আছে।
পদ্মা সেতুর কাজ কেন আটকে গেল, মন্ত্রীর কী ভূমিকা ছিল কিংবা বিশ্বব্যাংকের তদন্ত সম্পর্কে সরকারের পক্ষ থেকে সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। বরং মন্ত্রীকে সরিয়ে দেওয়ার পর বিকল্প পথে অর্থায়নের চেষ্টায় জনমনে এই ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে নিশ্চয়ই কোথাও গড়বড় হয়েছে। যদি অনিয়ম বা দুর্নীতি না হয়ে থাকে এবং বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের পেছনে অন্য কোনো রহস্য থেকে থাকে, তা খোলাসা করার দায়িত্ব সরকারের।
অর্থায়ন যারাই করুক, পদ্মা সেতু হোক—তা দেশবাসীর প্রাণের দাবি। কিন্তু সেই সেতুর বিকল্প অর্থায়নের আগে অবশ্যই জানতে হবে কী শর্তে তাদের সঙ্গে চুক্তি হচ্ছে। যদি সেই চুক্তি বিশ্বব্যাংকের চুক্তির চেয়ে কঠিন হয় সেই দায় জনগণ কেন নেবে? বিলম্বের কারণে এমনিতেই প্রাক্কলিত ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। তদুপরি সুদের হার বা সার্ভিস চার্জ বাড়লে সেটি অসহনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। অতএব পদ্মা সেতুর বিষয়ে মালয়েশিয়া বা অন্য কোনো দেশ বা দাতা সংস্থার সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি করার আগে তার শর্ত জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিলেরও যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা থাকতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.