নববর্ষ ও বাংলা বর্ষপঞ্জি by আকরাম খান

এক ধরনের অন্য রকম অনুভূতি এবং ভালো লাগায় এবারের বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি উপভোগ করতে পারব। সাধারণত দেশে প্রায় প্রতি বছরই জাতীয়ভাবে না হলেও খ্রিস্টাব্দের ১৪ ও ১৫ এপ্রিল দু'দিন পহেলা বৈশাখের আনুষ্ঠানিকতা দেখে মনটা খারাপ থাকে।


হাটবাজার, শহর-বন্দর, গ্রামীণ পরিবার এমনকি খোদ রাজধানী ঢাকাতেও একটি সম্প্রদায় সনাতনী ভারতীয় পঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা পালন করে থাকে। সনাতন ধর্মাবলম্বী বাংলাদেশি বাঙালিরাও কেবল নববর্ষই নয়, বাংলা তারিখ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভারতীয় বাংলা পঞ্জিকা অনুসরণ করেন। হালখাতা, বিয়ে, অন্নপ্রাশন, ব্যবসায়িক হিসাব-নিকাশ, চিঠিপত্র ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই তাদের কাছে সনাতনী পঞ্জিকা গ্রহণযোগ্য। পাশাপাশি দুটি বাড়ি, পাড়া বা মহল্লায় যখন ঘটা করে আলাদা আলাদা দিনে নববর্ষের উৎসব-আনন্দ সম্পন্ন হয়, তখন বিষয়টি সম্পর্কে গুরুত্ব না দেওয়ার অবকাশ থাকে না। এভাবে কিছু মানুষের পঞ্জিকা ব্যবহার এবং বাংলাদেশে সরকারিভাবে বাংলা বর্ষপঞ্জি, জাতীয়ভাবে উৎসব-আনন্দ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কেবল বিভ্রান্তিকরই নয়, বিপজ্জনকও বটে।
প্রগতি ও সভ্যতার মানদণ্ডে আমাদের যেসব ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন তার মধ্যে শহীদুল্লাহ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিজ্ঞানভিত্তিক বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রচলন অন্যতম। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিল না বা জোর করেও চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। বরং জাতির আকাঙ্ক্ষাকে রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে। জানা মতে, শহীদুল্লাহ কমিশন প্রচলিত প্রথায় প্রণীত দিনপঞ্জির সঙ্গে বিজ্ঞানভিত্তিক সমন্বয়ের মাধ্যমে সকলের জন্য সহজবোধ্য ও আন্তর্জাতিক মানের সুপারিশমালা তৈরি করে।
উলিল্গখিত কমিশনে জ্যোতির্বিজ্ঞানী, পঞ্জিকা রচয়িতা, গণিতজ্ঞসহ অনেকেরই শ্রম-মেধা ও যুক্তির ঐকমত্য ছিল বলে জানা যায়। যুক্তি ও নির্ভরযোগ্যতা ছাড়া শুধু যে ভাবাবেগের কারণেই জাতি বর্তমান বাংলা বর্ষপঞ্জি গ্রহণ করেছে এ কথা ঠিক নয়।
হালখাতা বিষয়টি এখন আর নববর্ষের একমাত্র আনুষ্ঠানিকতা নয়। অতীতের ব্যর্থতা ও গল্গানি ধুয়েমুছে নতুন বছরের শুভ কামনায় পহেলা বৈশাখ আজ বাঙালির এক নম্বর জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে। অপ্রিয় সত্য যা তাহলো, বাংলা বর্ষপঞ্জি ও পঞ্জিকার দ্বৈত ব্যবহার সে ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি এবং পারস্পরিক ভিন্নতা প্রদর্শন করে চলেছে। সুতরাং মধ্যযুগীয় ব্রাহ্মণ্যবাদের অন্ধকারে আবদ্ধ না থেকে আগামীর আলোয় আমাদের শুদ্ধ হওয়াই উত্তম। বাঙালির আলাদা কোনো সম্প্রদায় থাকতে পারে না। উলিল্গখিত বিরোধের কারণে বারবার সেটি যেন প্রদর্শিত না হয় এ দায়িত্ব সব বাঙালিরই বহন করা উচিত। সে পর্যন্ত রবীন্দ্র-নজরুলের মতো খাঁটি বাঙালিদের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীসহ পহেলা বৈশাখের মতো গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোকে অভিন্ন রাখতে সংশিল্গষ্ট সকলের আন্তরিকতার প্রয়োজন। এ ছাড়া বাংলা মাসের দিন-সংখ্যা একই নিয়মে স্থায়ীকরণ হলে আন্তর্জাতিক দিবসগুলোতে বাংলা তারিখ ব্যবহার করা এবং বাংলা মাস ও অব্দকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা সম্ভব।
য় অধ্যক্ষ, অনির্বাণ বিদ্যানিকেতন
মধুখালী, ফরিদপুর

No comments

Powered by Blogger.