চারদিক-আনন্দে কাটল তিনটি দিন by নাফিস মুস্তাকিন ও আজমাইন রিদম

সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের সিন্টিলা সায়েন্স ক্লাব তাদের বার্ষিক বিজ্ঞান মেলা-২০১১ সফলভাবে আয়োজন করেছে। ‘শান্তি আসুক শুদ্ধ বিজ্ঞান চর্চায়’ এই লক্ষ্যে ২, ৩ ও ৪ মার্চ সেন্ট যোসেফ স্কুল প্রাঙ্গণে এই বিজ্ঞান মেলা আয়োজিত হয়। ২ মার্চ জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মেলা উদ্বোধন করা হয়।


উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষদ্বয় ও ক্লাবের চিফ মডারেটর শুভঙ্কর দত্ত ছাড়াও প্রধান অতিথি বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আবদুর রশিদ ও মুক্তিযোদ্ধা অব. মেজর জেনারেল খোন্দকার নুরুন্নবী উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, এই বিজ্ঞান মেলা ছাত্রদের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ এনে দেবে এবং তাদের নতুন নতুন গবেষণায় অনুপ্রাণিত করবে।’ এমনই বিশ্বাস রাখেন প্রফেসর মো. আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘এই বিজ্ঞান মেলায় সকলেই পুরস্কৃত হবে। কেননা জ্ঞানই সবচেয়ে বড় পুরস্কার।’
অনুষ্ঠান শেষে অধ্যক্ষ ব্রাদার লিও জেমস পেরেরা সিএসসি, উপাধ্যক্ষ ব্রাদার বিজয় হ্যারল্ড রড্রিগাস, ব্রাদার নিপু হিউবার্ট রোজারিও এবং অতিথিরা প্রজেক্ট পরিদর্শন করেন। তাঁরা ছাত্রদের চিন্তাশীলতায় অভিভূত হন। অধ্যক্ষ মন্তব্য করেন, ‘আমরা যদি ছেলেদের এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি, তবে আমাদের দেশ অনেক উপকৃত হবে।’ প্রায় ৪৫০টি প্রজেক্ট এবার বিজ্ঞান মেলায় উপস্থাপিত হয়।
প্রজেক্ট পরিদর্শক শেখ মো. মোরশেদ এবারের প্রজেক্টগুলো সম্বন্ধে মন্তব্য করেন, ‘ছোট থেকে বড় সকলের ভিন্ন রকম চিন্তাধারা। ছাত্ররা বাংলাদেশের যানজট সমস্যা নিরসনে যেসব সমাধান দিয়েছে যেমন: তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র শাদমান ও রুদমান তাদের প্রজেক্টে আসাদ এভিনিউকে একমুখী করার প্রস্তাব দিয়েছে; এগুলো যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি, তবে আমাদেরই সুবিধা হবে।’
এবারের বিজ্ঞান মেলায় অন্যতম পরিবর্তন ছিল বিচারক হিসেবে সাবেক যোসেফাইটদের উপস্থিতি। এ সম্বন্ধে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র ইনান বলে, ‘বিচারক হিসেবে প্রাক্তন ছাত্ররা থাকায় আমরা অনেক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছি। কেননা তাদের আর আমাদের চিন্তাধারায় বেশ মিল রয়েছে।’
এবারের বিজ্ঞান মেলায় কিছু অপূর্ণতা রয়েছে বলে মনে করেন সেন্ট যোসেফের শিক্ষক ফয়সাল আজিজ। তিনি বলেন, ‘বিজ্ঞান মেলা একটি স্কুলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা ঠিক নয়। এতে অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকা উচিত। ফলে রাজধানীর স্কুলগুলোর মধ্যে বিজ্ঞানচর্চার সমন্বয় হবে।’
বিজ্ঞান মেলার পাশাপাশি আন্তস্কুল ও কলেজ কুইজ প্রতিযোগিতা, আন্তজেলা ও কলেজ উপস্থিত বক্তব্য আয়োজন করা হয়েছিল। রাজধানীর প্রায় ২০টি বিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা এসব প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ২ ও ৩ তারিখ সফলভাবে এই প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়।
সায়েন্স ফেয়ারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে আর্ট ফেয়ার ও স্ক্র্যাপবুক ফেয়ার আয়োজিত হয়। ১ মার্চ স্কুলের ছাত্রদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আর্ট ফেয়ার বা অঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থী এতে অংশগ্রহণ করে। বিজ্ঞান মেলা চলাকালে ছাত্রদের আঁকা ছবিগুলো প্রদর্শনীর ব্যবস্থা ছিল। আর্ট ফেয়ার প্রদর্শক নাসরিন হক বলেন, ‘আর্ট ফেয়ারের ছবিগুলো বেশ সুন্দর। এই শিল্পের মাধ্যমে ছেলেরা তাদের মনের স্বপ্নগুলো ফুটিয়ে তুলতে পারে।’
স্ক্র্যাপবুক ফেয়ারও ছিল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। সায়েন্স ফেয়ার শুরুর আগে ছাত্রদের কিছু বিষয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। এই বিষয়ের আলোকে তারা ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে একটি স্ক্র্যাপবুক তৈরি করে। এবার প্রায় ৭৫০ জন ছাত্র স্ক্র্যাপবুক তৈরি করে। এই স্ক্র্যাপবুকগুলো ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
মেলা উপলক্ষে একটি সুদৃশ্য ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। এই ম্যাগাজিনের মোড়ক ২ মার্চ উন্মোচন করা হয়। এই ম্যাগাজিন প্রকাশের পেছনে শিক্ষক-ছাত্র, সম্পাদকদের অক্লান্ত পরিশ্রম কাজ করেছে।
বিজ্ঞান মেলা শেষ হলেও সিন্টিলা সায়েন্স ক্লাবের কাজ শেষ হয়নি। আগামী ১২ মার্চ আন্তস্কুল অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে রাজধানীর প্রায় ৪০টি স্কুল থেকে এক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিতে যাচ্ছে।
সবশেষে ১৮ মার্চ পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে সিন্টিলা সায়েন্স ক্লাব তাদের এ বছরের কার্যক্রম শেষ করতে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.