সুর পাল্টালেন সুরঞ্জিত

একদিন আগেই পদত্যাগ মুহূর্তের ব্যাপার বলে উল্লেখ করেছিলেন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তবে এরই মধ্যে তিনি সুর বদলে ফেলেছেন। বলেছেন, তাঁর পদত্যাগের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। গতকাল শুক্রবার বিবিসি বাংলা সার্ভিসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রেলমন্ত্রী পদত্যাগের দাবিকে সরাসরি নাকচ করে দেন।


তিনি বলেন, যেহেতু অভিযোগ উঠেছে তাঁর একজন সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এবং রেলওয়ের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে, তাই তাঁর নিজের পদত্যাগের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এখন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। বিষয়টা হলো- সবাই মিলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে। এখন যদি বিষয়টা এমন হয়েছে যে, দুর্নীতি চুলোয় যাক, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়াইটাই আসল।
সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পদত্যাগ করবেন কি না- এ প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, 'আপনি বললেন যে এপিএস এবং একজন রেল কর্মকর্তা গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন। এর সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা কোথায়? আর আমার পদত্যাগের প্রশ্ন আসে কেন? এ এক ধরনের মোটিভেটেড... (উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ব্যাপার)।'
নিজে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব কি না- এ প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, সংসদীয় কমিটি প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করার সামর্থ্য রাখে। তিনি বলেন, 'তা ছাড়া অভিযোগ তো আমার বিরুদ্ধে নয়। আমার এপিএস ও রেল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।'
রেলমন্ত্রী জানান, ঘটনার বিষয়ে এমনকি বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলেও তিনি পূর্ণ সহযোগিতা করবেন। তদন্তের জন্য সংসদীয় একটি সাব-কমিটি গঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, 'দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করতে চাইছে, এমনকি আদালতও যদি সুয়োমোটো তদন্তের সিদ্ধান্ত নেন, তাহলেও আমি এবং আমার মন্ত্রণালয় পূর্ণ সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।'
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, 'ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত হয়েছে। গত কয়েক মাসে আমি রেলকে মানুষের কাছে নিতে অনেক উন্নতি করেছি।... অসৎ আমলা যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে দুর্নীতিবাজ কনট্রাক্টর। সবাই মিলে এ ষড়যন্ত্র করছে। এর সঙ্গে সাম্প্রদায়িক শক্তি, যুদ্ধাপরাধের পক্ষের শক্তিও রয়েছে।'
ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে মন্ত্রী তাঁর এপিএসের গাড়িচালকের বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) সদর দপ্তরে গাড়ি ঢুকিয়ে দেওয়ার বিষয়টি তোলেন। তিনি বলেন, 'বিজিবির সদর দপ্তর একটি সুরক্ষিত এলাকা। রাত ১০টায় কী করে গাড়ি সেখানে ঢুকতে পারল? কী করে সারারাত তারা বিজিবির হেফাজতে থাকল? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর মিলতে হবে।'
গত সোমবার গভীর রাতে ৭০ লাখ টাকাসহ রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এপিএস ওমর ফারুক তালুকদার, রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইউসুফ আলী মৃধা ও নিরাপত্তা বাহিনীর ঢাকা বিভাগীয় কমান্ড্যান্ট এনামুল হক মাইক্রোবাসে জিগাতলার দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় ওমর ফারুকের গাড়িচালক আলী আজম আকস্মিকভাবে গাড়িটি বিজিবির সদর দপ্তর পিলখানায় ঢুকিয়ে দিয়ে গাড়িতে অবৈধ টাকা আছে বলে শোরগোল শুরু করেন। এরপর বিজিবির সদস্যরা টাকাসহ সবাইকে আটক করেন। পরদিন সকালে গাড়িচালক আলী আজমকে রেখে পিলখানা থেকে অন্যদের ছেড়ে দেয় বিজিবি।

No comments

Powered by Blogger.