নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করুন-মশার নগর ঢাকা

মশা দমন ও নিয়ন্ত্রণে ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) যে ধরনের উদ্যোগ নিয়ে থাকে, তা বছর খানেক ধরে বন্ধ। গত এক বছরে মশার ওষুধ ছিটানো বা জলাশয় পরিষ্কার করার কোনো কাজ হয়নি। এর ফল যা হতে পারে তা-ই হয়েছে। ঢাকা শহর এখন পরিণত হয়েছে মশার নগরে।


এই নগরের অসহায় নাগরিকেরা সন্ধ্যার পর নিজেদের সঁপে দিচ্ছে মশার হাতে।
এক বছর ধরে কেন মশা নিয়ন্ত্রণের সব ধরনের কাজ বন্ধ আছে, তার কারণটি অদ্ভুত। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সিটি করপোরেশনের মশা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা করেছে। সে কারণে ডিসিসির সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নাকি কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। ডিসিসির ঊর্ধ্বতন কীট নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার এই ব্যাখ্যা কি গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
মশা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। ডিসিসির এই কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করা। আর এই বিভাগের অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দায়িত্ব কাজের মাধ্যমে এটা প্রমাণ করা যে, তাঁরা কেউই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। কাজ বন্ধ করে বসে থাকার অর্থ হচ্ছে দুর্নীতির পক্ষে অবস্থান নেওয়া। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যে বিভাগের দায়িত্ব হচ্ছে মশা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ ছিটানোসহ জলাশয়-নর্দমা পরিষ্কার করা, তারা যদি এক বছর ধরে কাজ না করে তবে তাদের তো চাকরি থাকার কথা নয়। বেতন দেওয়া হয় কাজ করার জন্য, কাজ না করে বেতন নেওয়া বড় ধরনের দুর্নীতি।
প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মশা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে যে ওষুধ ছিটাতে হয় তার মজুদ ডিসিসির ভান্ডারে রয়েছে। চলতি অর্থবছরে মশা নিয়ন্ত্রণ খাতে ডিসিসি বরাদ্দ করেছে প্রায় ১৬ কোটি টাকার মতো। ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হওয়ার পর যদি পুরো বিভাগ কাজ বন্ধ করে বসে থাকে, তবে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে এই বিভাগের লোকজনের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, তার একটি ব্যাখ্যা আমরা ডিসিসি প্রশাসনের কাছ থেকে প্রত্যাশা করছি। কারও ইচ্ছা-অনিচ্ছায় মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে আর কর প্রদানকারী নগরবাসীর জীবন মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে যাবে—এটা মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। অতএব মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করার বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.