রমনার বটমূলে বোমা হামলা-১১ বছরেও বিচার হয়নি, ৩ বছর থেমে আছে এক মামলার বিচার by প্রশান্ত কর্মকার

রমনার বটমূলে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার পর ১১ বছর পার হয়েছে। কিন্তু এখনো ওই ঘটনার বিচার হয়নি। ওই ঘটনায় দুটি মামলার মধ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলাটি হাইকোর্টের একটি সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় তিন বছর ধরে থেমে আছে।


আর হত্যা মামলাটিতে গত দুই বছরে দুজনের সাক্ষ্য গ্রহণ ছাড়া আর কোনো অগ্রগতি নেই।
এ ছাড়া এই মামলার পলাতক পাঁচ আসামিকেও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
আদালত সূত্র জানায়, দ্রুত বিচার আদালতে নির্ধারিত ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে হত্যা মামলাটির বিচারকাজ নিষ্পত্তি করতে না পারায় ২০১০ সালের ২৬ মে সেটি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। এরপর গত দুই বছরে দুজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। এই আদালতে আট মাস ধরে বিচারকের পদ শূন্য। ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।
এই আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি এস এম জাহিদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার আরও দুজন সাক্ষী আদালতে হাজির হলেও একজন আসামিকে কারা কর্তৃপক্ষ হাজির করতে পারেনি বলে সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি। তাই আদালত ১৬ এপ্রিল সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন। তিনি জানান, এর আগে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে থাকাকালে হত্যা মামলার ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছিল।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল (পয়লা বৈশাখ) রমনার বটমূলে ছায়ানট আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ওই বোমা হামলায় ১০ জন নিহত এবং ১১ জন গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। প্রায় সাড়ে সাত বছর পর ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর সিআইডি মামলা দুটির অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয়।
যে কারণে থেমে আছে বিস্ফোরক মামলা: বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলাটি থেমে থাকার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবু আবদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, এই ঘটনায় করা মামলা দুটির বিষয়বস্তু, প্রমাণ ও সাক্ষী এক। তাই মামলা দুটির বিচারকাজ একই সঙ্গে করার জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক মো. মাসদার হোসেন হাইকোর্টের মতামত চেয়ে ২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি পাঠান। হাইকোর্ট এখনো এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানাননি। ফলে মামলাটির বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, মতামত চাওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক বদলি হয়েছেন। বদল হয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারও।
জানতে চাইলে বর্তমান রেজিস্ট্রার শামসুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৯ সালে ট্রাইব্যুনাল থেকে মতামত চেয়ে করা আবেদনের বিষয়ে তাঁর জানা নেই। তিনি ২০১০ সালের ৭ জুন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব নেন। এরপর সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনাল থেকেও তাঁকে এ ব্যাপারে কখনো বলা হয়নি।
মামলার আসামিরা: অভিযুক্ত ১৪ আসামির সবাই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে হুজির নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, হাফেজ আবু তাহের, মুফতি আবদুর রউফ, মাওলানা শেখ ফরিদ, হাফেজ ইয়াহিয়া, মাওলানা আবদুল হান্নান ওরফে সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ও শাহাদাত হোসেন ওরফে জুয়েল কারাগারে আছেন। আর মাওলানা তাজউদ্দিন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, জাহাঙ্গীর বদর ও হাফেজ আবু বকর পলাতক। আরেক আসামি মাওলানা আকবর হোসাইন জামিনে মুক্ত আছেন।

No comments

Powered by Blogger.