বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে-জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি

সম্পদের ওপর নারীর সম-অধিকারের বিধান রেখে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-১১-এর যে খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। একই সঙ্গে এই নীতি বাস্তবায়নে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করছি।
দেশে নারীসংক্রান্ত যেসব আইন ও নীতি আছে, তা অপ্রতুল ছিল বলেই সরকার নতুন নীতি প্রণয়ন করেছে। এখন এই নীতির আলোকে সংশ্লিষ্ট আইনেও পরিবর্তন আনতে হবে। অন্যথায় যে উদ্দেশ্যে নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে তা সফল হবে না।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া নারীনীতিটি নতুন নয়। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রণীত নারী উন্নয়ন নীতি নারীসমাজের কাছে সমাদৃত হলেও চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এসে তা বাতিল করে দেয়। ধারণা করা যায়, জোট সরকারের মৌলবাদী শরিকদের আপত্তির মুখেই এ কাজটি করা হয়েছিল।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর ফের ১৯৯৭ সালের নারী উন্নয়ন নীতিটি পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয়। বিলম্বে হলেও মন্ত্রিসভার এ সিদ্ধান্ত দেশের নারীসমাজকে আশাবাদী করবে। কেননা, আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের সব নাগরিক সমানাধিকার ভোগ করবে। আইনের দৃষ্টিতে কারও প্রতি বৈষম্য করা যাবে না। এই প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিসভা নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এতে বলা হয়েছে, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জরুরি বিষয়াদি; যেমন—স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, উপার্জনের সুযোগ, উত্তরাধিকার সম্পদ, ঋণপ্রযুক্তি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্জিত সম্পদসহ ভূমির ওপর অধিকার ইত্যাদি ক্ষেত্রে নারীর পূর্ণ ও সমান সুযোগ। তবে আমরা মনে করি, নারীর সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভালো নীতি গ্রহণই যথেষ্ট নয়। নারীর প্রতি যেসব বৈষম্যমূলক আইন আছে, সেই নীতির আলোকে তা-ও পরিবর্তন করতে হবে।
সরকার নারী-পুরুষের বৈষম্য রোধে যখন নারী উন্নয়ন নীতি অনুমোদন করছে, তখন একটি স্বার্থান্বেষী মহল ফতোয়া সম্পর্কে উচ্চ আদালতের রায়কে কেন্দ্র করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছে। নারী উন্নয়ন নীতির বিরুদ্ধে হরতালও ডেকেছে তারা। তাদের এই অশুভ তৎপরতার ব্যাপারেও সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।
আমাদের দেশে নারী অনেক ক্ষেত্রেই উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। দুই যুগ ধরে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেত্রীর আসনে নারী অধিষ্ঠিত। শিক্ষা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার অংশগ্রহণ বেড়েছে। তৃণমূল থেকে সংসদ পর্যন্ত নারীর প্রতিনিধিত্ব বেড়েছে। এসব নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক দিক। এর পাশাপাশি ঘরে-বাইরে নারী যে পদে পদে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না।
নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করতে হবে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে। প্রস্তাবিত নারীনীতি বাস্তবায়নে সরকার অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে—এটাই প্রত্যাশিত। আরেকটি জরুরি কথা হলো, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক মতৈক্য প্রয়োজন, যাতে ক্ষমতার হাতবদলের সঙ্গে সঙ্গে নীতির বদল না ঘটে।

No comments

Powered by Blogger.