জমি অধিগ্রহণে কঠিন সমস্যায় সরকার by অরুণ কর্মকার

উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে কঠিন সমস্যায় পড়েছে সরকার। মানুষ জমি দিতে চাইছে না।ক্ষেত্রবিশেষে মামলা-মোকদ্দমা করে অধিগ্রহণ-প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিচ্ছে তারা।ভূমি মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, একদিকে জমির চাহিদা বেড়েছে, অন্যদিকে অধিগ্রহণের জন্য জমির সরকারি দাম প্রচলিত বাজারদরের চেয়ে কম থাকে।


এসব কারণে মানুষ জমি অধিগ্রহণে বাধা দেয়। জমি অধিগ্রহণ বাধাগ্রস্ত এবং প্রায় ক্ষেত্রে বিলম্বিত হওয়ায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বিঘ্নিত ও বিলম্বিত হচ্ছে। এমনকি এ কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ থেমেও আছে।
ঢাকায় সমস্যা বেশি: জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সারা দেশে সমস্যা হলেও ঢাকায় তা প্রকট হয়ে উঠেছে। ঢাকা ওয়াসার নতুন পানির পাম্প বসানো, বিদ্যুৎ বিতরণব্যবস্থার উন্নয়নে উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রভৃতির জন্য অল্প জমি অধিগ্রহণ করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। ওয়াসা ও ডেসকো সূত্র জানায়, জমি না পাওয়ায় পানির পাম্প বসানো ও উপকেন্দ্র স্থাপনের মতো একাধিক উন্নয়নকাজ বন্ধ হয়ে আছে।
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জমির অভাবের কারণে ভবিষ্যতে তাদের আর প্লটভিত্তিক আবাসিক এলাকা বা উপশহর গড়ে তোলার সম্ভাবনা নেই। এর পরিবর্তে তারা বহুতল ভবন তৈরি করে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়ার দিকে এগোচ্ছে।
সমস্যা ঢাকার বাইরেও: দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এলাকায় যেসব পরিবারের বাড়িঘর ও চাষাবাদের জমি দেবে গেছে, তাদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার ৩০ একর জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করেছিল। অধিগ্রহণের জন্য সেখানে প্রতি বিঘা (৫০ শতাংশ) জমির দাম ধরা হয়েছিল চার লাখ টাকা। কিন্তু ওই দামে সরকার জমি পায়নি। ফলে কয়লাখনি এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন বন্ধ রয়েছে।
অবশ্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের সূত্র দাবি করেছে, দাম বেশি দিলে সেখানে জমি পাওয়া যেত। কয়লাখনির কারণে যাদের বাড়িঘর দেবে গেছে, তাদের প্রতি বিঘা জমির জন্য ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এটা জেনে যাদের বাড়িঘর দেবে যায়নি, তারাও প্রশাসনের কাছে ওই দামে তাদের জমি অধিগ্রহণের অনুরোধ করেছে। সরকার প্রতি বিঘার দাম চার লাখ টাকা ধরায় তারা অধিগ্রহণের জন্য জমি দিচ্ছে না।
হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বিবিয়ানায় দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র করার জন্য অল্প জমি দরকার। এর বেশির ভাগ জায়গাই আগে থেকে সরকারি মালিকানায় রয়েছে। দরকারি বাকি জমি মালিকেরা অধিগ্রহণের জন্য দিতে চাইছে না।
নোয়াখালীর সুন্দলপুর ক্ষেত্রের গ্যাস জাতীয় গ্রিডে দেওয়ার জন্য সুন্দলপুর-ফেনী প্রায় ৩০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপনের কাজ জমি অধিগ্রহণে সমস্যার কারণে স্থগিত রাখা হয়েছে। ফলে ওই ক্ষেত্রের গ্যাস পূর্ণ ক্ষমতায় তোলা যাচ্ছে না। জমি অধিগ্রহণে জটিলতার কারণে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বিঘ্নিত হওয়ার ঘটনা দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ভূমি প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ একটি বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে। এর প্রধান কারণ দাম। প্রচলিত বাজারদর বা তার চেয়ে বেশি দিলে মানুষ জমি দিতে আগ্রহী হয়। কিন্তু বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য সরকারি দাম নির্ধারিত থাকায় বেশি দেওয়া সম্ভব হয় না। এ সমস্যা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির সভায়ও বিষয়টি নিয়ে প্রায়ই আলোচনা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংসদীয় কমিটি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে জমির দাম বাড়ানোর একটি প্রস্তাব তৈরি করে মন্ত্রণালয়কে উপস্থাপনের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.