রেল আধুনিকায়ন সময়ের দাবি by আতিকুর রহমান

নিরাপদ. সাশ্রয়ী এবং আরামদায়ক ভ্রমণের ক্ষেত্রে রেলের ভূমিকা অপরিসীম। কার্যকর এই যাতায়াত মাধ্যমটিকে অকার্যকর করার লক্ষ্যে দাতাগোষ্ঠী বহুদিন ধরে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। পরিবহন পরিকল্পনায় ও অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সবসময়ই অবহেলা করা হয়েছে। ফলে একটি সময় মানুষ রেলবিমুখ হয়ে পড়েছিল।


কিন্তু বর্তমান সরকারের বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের ফলে আবারও মানুষ রেলমুখী হয়ে উঠেছে। দেশে পরিবহনের ক্ষেত্রে রেল আবারও গণপরিবহনে রূপ নিতে যাচ্ছে। এ খবর দেশবাসীর যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক। কয়েক দশক ধরে কৃষিনির্ভর এ দেশে কৃষির জমি, বিল-বাঁওড় ধ্বংস করে অপরিকল্পিতভাবে সড়ক নির্মাণ করা হয় আর শেষ করে দেওয়া হয় রেলের সম্ভাবনা। অথচ দেশের ৫০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে রেল। ১৯৪৭ সালে এ দেশে পাকা রাস্তা ছিল ৪৬১ কিলোমিটার, তা বেড়ে এখন হয়েছে ৪৯ হাজার ৫০০ কিলোমিটার। অন্যদিকে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক ১৯৪৭ সালে ছিল দুই হাজার ৮০০ কিলোমিটার, যা বেড়ে বর্তমানে দুই হাজার ৮৪৮ কিলোমিটার হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, রেল কতটা অবহেলার শিকার।
বর্তমান সরকার রেলের সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পেঁৗছে দেওয়ার লক্ষ্যে নানারকম উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। স্বাধীনতার ৪১ বছর পর ২০১১ সালের ডিসেম্বরে স্বতন্ত্র রেল মন্ত্রণালয় করা হয়েছে। রেলকে যখন আলাদাভাবে গুরুত্ব দেওয়া হলো ঠিক এই সময় রেল দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ধরনের অপতৎপরতা বেড়ে গেছে। একই দিনে ৪টি জায়গায় রেল দুর্ঘটনা (অগি্নসংযোগ, মুখোমুখি সংঘর্ষ, লাইনচ্যুত হওয়া), যা বিগত দিনে নানা অব্যবস্থার সময়ও তেমন একটা পরিলক্ষিত হয়নি। রেল মন্ত্রণালয় গঠিত হওয়ার পর গত দুই মাসে প্রায় ১২টির মতো রেল দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে ৮টি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ৪টির মতো রেল দুর্ঘটনা ঘটে। যদিও কর্তব্যরত কর্মচারীদের অবহেলায় দুর্ঘটনা ঘটে, তবুও শুধু এই একটি ইস্যুই রেল দুর্ঘটনার একমাত্র কারণ হতে পারে না। এটি সুস্পষ্ট যে, এর পেছনে রয়েছে একটি চিহ্নিত মহল, যারা সবসময়ই তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
দীর্ঘদিনের অবহেলায় রেলওয়ে নাজুক অবস্থায় পেঁৗছেছে। তাই এখন সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়োজন। রেলের অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে রেলের বিরুদ্ধে যেসব ষড়যন্ত্র হচ্ছে তা প্রতিহত করা সম্ভব হবে এবং রেলকে গণমানুষের বাহন হিসেবে পরিণত করা যাবে। রেলওয়ের উন্নয়ন দেশের সব মানুষের জন্যই মঙ্গলজনক। রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটলে দেশের অনেক ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। পরিবেশ দূষণ কমবে, জ্বালানি ব্যয় কমবে, যাতায়াত ব্যয় ও মালপত্র পরিবহন ব্যয় কমবে, যাতায়াত সময় ও যানজট কমবে, নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত হবে। তাই সব শ্রেণী-পেশার মানুষেরই রেল উন্নয়নে সোচ্চার হতে হবে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ তার অবস্থান থেকেই রেলের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। এ সময় রেলের সমালোচনার চেয়ে একে দাঁড় করতে এগিয়ে আসা জরুরি। কেননা আমাদের চিন্তা, ইতিবাচক প্রচারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি সব অপচেষ্টাকে প্রতিহত করে জনগণের প্রতিষ্ঠান রেলের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ পরিবহন রক্ষায় সবার সমন্বিত প্রয়াস জরুরি।
য় গড়পাড়া, মানিকগঞ্জ
onatiq88@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.