টিআইএন থাকলেই করের বিধান আসছে

বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা যা-ই থাকুক না কেন, কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএন) প্রত্যেককেই ন্যূনতম কর পরিশোধ করতে হবে আগামী অর্থবছর থেকে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ কথা জানিয়ে বলেছেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়াতে ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটে এই বিধান রাখা হতে পারে।


কারো টিআইএন নম্বর থাকলেই তাকে ন্যূনতম একটা অর্থ আয়কর হিসেবে সরকারকে দিতে হবে। একই সঙ্গে আয়করের হারও বাড়ানো হতে পারে নতুন বাজেটে। বাড়ানো হচ্ছে রাজস্ব বোর্ড-বহির্ভূত করও। ফলে বিভিন্ন ধরনের স্ট্যাম্প, সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবামূল্য ও বিল বাড়তে পারে।
মূলত আয়কর পরিশোধের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে টিআইএন নম্বর নেয় মানুষ। তবে সম্প্রতি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে টিআইএন নম্বর ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লটের জন্য আবেদন করা, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়াসহ বিভিন্ন ব্যবসার রেজিস্ট্রেশন নেওয়ার ক্ষেত্রেও টিআইএন নম্বর ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর ফলে এখন প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ মানুষ টিআইএন নম্বর ব্যবহার করছে। তবে তাদের মধ্যে ১০ লাখের কম মানুষ আয়কর রিটার্ন জমা দেয়। প্রকৃত আয়কর দাতার সংখ্যা আরো কম।
গতকাল শুক্রবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে আগামী অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনার পর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, 'অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়াতে অর্থনীতিবিদরা আয়করের হার আরো বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। আর টিআইএন নম্বর থাকলেই ন্যূনতম অর্থ আয়কর হিসেবে নেওয়ার কথাও বলেছেন। আমারও মনে হয়, টিআইএন নম্বর যাদের রয়েছে, তাদের অবশ্যই কিছু অর্থ আয়কর বাবদ সরকারকে দিতে হবে। দেশে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ মানুষ টিআইএন নম্বরধারী রয়েছে। তাদের মধ্যে অনেক ভুয়া টিআইএনও রয়েছে। এনবিআর সঠিক টিআইএন বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে। আগামী অর্থবছর থেকেই টিআইএন নম্বরধারীদের কাছ থেকে ন্যূনতম রাজস্ব নেওয়া হতে পারে।'
২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার কম হবে জানান অর্থমন্ত্রী। এ ছাড়া আগামী অর্থবছরেও ভর্তুকি এবারের মতোই থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা ভর্তুকি দিলেও এ বিষয়ে জাতীয় কোনো নীতিমালা নেই। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জ্বালানি তেল ও রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোকে ভর্তুকি দিয়ে আসছি। আর সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণভাবেই ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে গ্যাসের দামে, কয়লা ও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিতরণ করা খাদ্যমূল্যে। সরকার তার কাজের কত অংশে কী পরিমাণ ভর্তুকি দিচ্ছে, এর হিসাব করা সম্ভব নয়।'
প্রাক-বাজেট আলোচনায় উপস্থিত অর্থনীতিবিদরা দ্রুত কয়লানীতি চূড়ান্তকরণ, নগরজীবনের আবাসন ও যানবাহন সমস্যা সমাধান করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বলে জানান অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি অমনক দূর এগিয়েছে। গত তিন বছরে দেশের অর্থনৈতিক ভিত অনেক মজবুত হয়েছে। তবে একে স্থায়ী রূপ দিতে হবে। অর্থনীতিবিদরাও পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, প্রবৃদ্ধি নিয়ে চিন্তার প্রয়োজন নেই। সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা থাকলে স্বাভাবিকভাবেই সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।
প্রাক-বাজেট সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, অর্থনীতিবিদরা বাজেটের আকার কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
সভায় অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোহাম্মদ তারেক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরি, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. মো. শাহাবুদ্দীন, রুশিদান ইসলাম রহমান, বিনায়ক সেন, ড. প্রতিমা পাল, ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের ড. সাজ্জাদ জহির, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সৈয়দ ইউসুফ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এসইসির উদ্যোগকে সমর্থন করেন না অর্থমন্ত্রী
পুঁজিবাজার পরিস্থিতি উন্নয়নে সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা স্বাধীন সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এঙ্চেঞ্জ কমিশন আইন সমর্থন করে না বলে উল্লেখ করেছেন স্বয়ং অর্থমন্ত্রী। গতকাল অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
নতুন ব্যাংকের অনুমোদন-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে ৪৮-৪৯টি ব্যাংক রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নানা ধরনের নির্দেশনা দিলেও তা সব সময় ব্যাংকগুলো মানছে না। স্বল্প মেয়াদে আমানত সংগ্রহ করে ব্যাংকগুলো দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ দিচ্ছে। এটি বড় ভুল। মূলত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্যই পুঁজিবাজার। আর সে জন্যই সরকার এসইসির আইন সমর্থন না করলেও পুঁজিবাজার চাঙ্গা করার জন্য অনেক কিছু করেছে।

No comments

Powered by Blogger.