কর্তৃপক্ষ জবাব চাই-নববর্ষ উদ্যাপনে কৃত্রিম মুখোশ কেন?

কদিন পরই পয়লা বৈশাখ। আসছে আরেকটি নতুন বছর। নতুন আলু থেকে শুরু করে নতুন বছর, সব নতুনকেই মানুষ অত্যন্ত উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয়। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে মানুষের সে কী প্রস্তুতি! হাতি-ঘোড়া, বাঘ-ভালুক, গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন প্রাণীর পুতুল তৈরি করে মানুষ।


কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো মুখোশ। রাস্তায় রাস্তায় বড় বড় মুখোশ নিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়। বৈশাখী মেলাগুলোতেও দেদার বিক্রি হয় নানা ধরনের মুখোশ। কিন্তু কেন? এই ঘুণেধরা সমাজের মানুষগুলো এমনিতেই মুখোশ পরা। মুখোশের আড়ালে এমনিতেই চেনা যায় না তাদের আসল চেহারা। সেই মুখোশের ওপর যদি তারা আবার একটি মুখোশ পরে, তাহলে তো তাদের চেহারা আরও অচেনা হবে আমাদের কাছে। বৈশাখের শোভাযাত্রা যে মানুষকে মুখোশ পরতে আরও উদ্বুদ্ধ করছে না তা-ই বা কে বলবে। নতুন বছরে কোথায় আরও সব মুখোশ খুলে শান্তির পথে পা বাড়াবে, তা নয়, মুখোশ নিয়ে লাফালাফি! দেশের বুদ্ধিজীবীরাও এ বিষয়ে কেন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন, তাও বেশ রহস্যময়। তাঁরা কেন এই মুখোশ রহস্যের সমাধান করার চেষ্টা করছেন না? কোনো অদৃশ্য রিমোট কন্ট্রোল কি তাঁদের মিউট করে রেখেছে? নাকি আমাদের বুদ্ধিজীবীরাও সবাই মুখোশধারী? দীর্ঘদিন ধরে মুখোশ নিয়ে শোভাযাত্রা হয়ে আসছে অথচ কর্তৃপক্ষ এ বিষয় নিয়ে কিছুই ভাবছে না। তারা চাইলেই মোড়ক উন্মোচনের মতো মুখোশ উন্মোচন টাইপের একটি অনুষ্ঠান করতে পারত। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মুখোশ সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হতো। বেরিয়ে পড়ত সবার আসল চেহারা। কিন্তু এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া তো দূরের ব্যাপার, কর্তৃপক্ষ মুখোশ নিয়ে কোনো চিন্তাই করছে না। এত কিছু থাকতে কেন মুখোশ নিয়ে শোভাযাত্রা হবে, তা রীতিমতো ভাবনার বিষয়। আইনস্টাইন সাহেব বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই এটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতেন। কিন্তু আফসোসের ব্যাপার হলেও সত্য, এই দেশে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করার মতো কোনো লোক নেই। তবে যত কিছুই হোক, জাতি এর সমাধান চায়। নতুন বছর আসছে। নতুন বছরে সব ধরনের মুখোশ উন্মোচন করা এখন জনগণের প্রাণের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশা করি, কর্তৃপক্ষ তাদের নিজেদের মুখোশ উন্মোচনের পাশাপাশি সব অন্যায় ও অবিচারের মুখোশ উন্মোচন করবে।
তবে মুখোশবিহীন মানুষের আসল চেহারা দেখে কোমলমতি শিশুরা ভয় পেতে পারে, তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, এই যদি হয় আমাদের মুখোশ মিছিলের একটা কারণ, তবে সেটায় রস+আলোর আপত্তি নেই।
প্রচ্ছদ: মেহেদী হক

No comments

Powered by Blogger.