চিকিৎসকদের কাজের জবাবদিহি নিশ্চিত করা হোক-চিকিৎসা বন্ধ রেখে সংবর্ধনা

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) নামের সংগঠনটি যে সাধারণ সদস্যদের স্বার্থ রক্ষা তথা পেশাগত মানোন্নয়নের চেয়ে সরকারের আনুকূল্য লাভে অধিক তৎপর, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। চিকিৎসকদের মূল দায়িত্ব যে রোগীদের চিকিৎসা করা, সে বিষয়টি প্রায়ই তাঁরা ভুলে যান।


গত সোমবার ভোলা সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগ এবং আলট্রাসনোগ্রাম, এক্স-রে কক্ষসহ ২০টি কক্ষের সব কার্যক্রম বন্ধ রেখে বিএমএ মহাসচিবের সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এতে কেবল সদর হাসপাতাল নয়, জেলার ছয়টি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, পরামর্শক, চিকিৎসা কর্মকর্তা, সেবক-সেবিকারাও যোগ দেন। তবে এসব যোগদানকে স্বেচ্ছায় ও স্বতঃপ্রণোদিত বলা যায় না। বিএমএ কর্তাদের বিরাগভাজন হলে দুর্গম এলাকায় বদলি আর সুনজরে থাকলে দ্রুত রাজধানীতে ফিরে যাওয়া যায়। বিএনপির আমলে বিএমএ তদবির-বাণিজ্যে যেসব কেলেঙ্কারি করেছিল, তার কিছু কিছু এখন প্রকাশ পাচ্ছে। বিএমএর বর্তমান কর্মকর্তারা এই ব্যাধি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত বলা যাবে না। যেকোনো পদোন্নতি ও ভালো স্থানে বদলির জন্য এখনো বিএমএ নেতাদের কাছে ধরনা দিতে হয় বলে অভিযোগ আছে।
বিএমএর কোনো কর্মকর্তাকে সংবর্ধনা দেওয়া যাবে না, এমন কথা কেউ বলছে না। প্রশ্ন হলো, সংবর্ধনার সময় ও স্থান নিয়ে। এ ধরনের অনুষ্ঠান সাপ্তাহিক ছুটির দিন কিংবা অফিস সময়ের পরে করলে রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত কেন সংবর্ধনা চলতে হবে? এ সময়ে ১৯১ জন রোগী চিকিৎসার জন্য এলেও তাদের অনেককে চিকিৎসাসেবা না পেয়েই চলে যেতে হয়েছে। সংবর্ধনার সময় জরুরি বিভাগের দুটি কক্ষ খোলা থাকার কথা বলা হলেও খোলা ছিল একটি। এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার (আরএমও) ব্যাখ্যাও গ্রহণযোগ্য নয়। এভাবে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা চলতে পারে না।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মফস্বল শহরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের নিয়মিত হাজিরার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন একাধিক অনুষ্ঠানে। সেদিক থেকে বলা যায়, ভোলা জেলায় দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসকেরা এক দিনের জন্য হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করেছেন। তবে তা রোগীদের চিকিৎসার জন্য নয়, সংগঠনের মহাসচিবকে সংবর্ধনা জানাতে। আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চিকিৎসকদের কাজের যে কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই, ভোলার ঘটনাটি অসংখ্য নজিরের একটি মাত্র। চিকিৎসার মতো মহান পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাছে এতটা দায়িত্বহীন আচরণ আশা করা যায় না। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক। নিশ্চিত করা হোক চিকিৎসকদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি।

No comments

Powered by Blogger.