অবরুদ্ধ ঢাকা-সীমাহীন দুর্ভোগে নগরবাসীর নাভিশ্বাস

রাজধানীবাসীর জন্য এ এক অন্য অভিজ্ঞতা। একেবারেই নতুন বলা চলে। মহানগরীর রাস্তাগুলো দিন দিন ধীরগতির হচ্ছে, বাড়ছে যানজট- এটা এখন গাসওয়া হয়ে গেছে। কেউ এখন কোথাও যেতে চাইলে হাতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় নিয়েই বের হয়। এমনকি অফিসযাত্রীরাও নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে যানজটের জন্য অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ রাখেন।


কিন্তু বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা অবর্ণনীয়। যানজটের অন্য এক রূপ দেখেছে নগরবাসী। একই জায়গায় কয়েক ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার অভিজ্ঞতা এর আগে হয়নি। গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি। মাথার ওপর গনগনে সূর্য ঢেলে দিচ্ছে উত্তাপ। বাতাসের আর্দ্রতায় ঘাম ছুটছে। হেঁটে যাওয়ার মতো অবস্থাও নেই। কোন দিক দিয়ে কোথায় যাওয়া যাবে, তার নির্দেশনা নেই। একদিকে মহাখালী অন্যদিকে শাহবাগে সড়ক অবরোধের পর বৃহস্পতিবার অর্ধবেলা স্থবির ছিল রাজধানী ঢাকা।
রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের ছাত্ররা। সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা, লুট ও ভাঙচুরের প্রতিবাদে ঢাকায় সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। ততক্ষণে শাহবাগকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মৎস্য ভবন ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা থেকে শুরু করে ফার্মগেট এলাকায় যানজট বিস্তৃত হয়েছে। অন্যদিকে মহাখালীতে সড়ক অবরোধ করে কড়াইল বস্তিবাসী। আগের দিন বস্তি উচ্ছেদের প্রতিবাদ জানাতেই সড়ক অবরোধ করা হয়। বস্তিবাসীর অভিযোগ, কোনো সময় না দিয়েই তাদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। ঘর থেকে মালামাল সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ তারা পায়নি। এই অবরোধের কারণে ফার্মগেট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। দুই দিনে দুটি অবরোধের কারণেই যানজটে থমকে থাকে রাজধানী।
যে কথা আগেই বলা হয়েছে, যানজটের অভিজ্ঞতা রাজধানীবাসীর জন্য নতুন কিছু নয়। আজকাল রাজধানীর ছোট গলিতেও যানজট হয়। এসব অনেকটাই গাসওয়া হয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার যে অভিজ্ঞতাটি হলো, তা একেবারেই নতুন। গণপরিবহনের বাইরে সামর্থ্যবানরা, যাঁরা নিজেদের গাড়িতে যাতায়াত করেন, তাঁরা বিকল্প অনেক পথে চলতে অভ্যস্ত। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার বিকল্প পথে যাওয়ারও সুযোগ ছিল না। কোথাও যাওয়ার একমাত্র উপায় ছিল হেঁটে যাওয়া। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে সেটাও অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
বিক্ষুব্ধ হওয়ার অধিকার সবারই আছে। বিক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। কিন্তু বিক্ষোভ প্রদর্শনের আগে ভাবতে হবে। বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গিয়ে সেটা যেন অন্যের ক্ষোভের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। বিক্ষোভ প্রদর্শন করা নাগরিক অধিকার। কিন্তু সেই অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে সেটা যেন অন্যের অধিকার হরণ করে না ফেলে, সেদিকে সবারই দৃষ্টি দিতে হবে। গত বৃহস্পতিবার ছিল এইচএসসি পরীক্ষা। শিক্ষাজীবনে এই পরীক্ষাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য এই পরীক্ষার ফল বিবেচনা করা হবে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র ও বস্তিবাসীর এই বিক্ষোভের কারণে চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের। অনেকের পক্ষেই নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষার হলে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এই যে ক্ষতি, এর দায় কে নেবে?
বৃহস্পতিবার নগরবাসীকে বিপাকে পড়তে হয়েছিল, কিন্তু এমন দুর্বিপাক তো নতুন নয়। কাজেই বিক্ষোভ প্রদর্শনের আগে ভাবুন। নিজেদের অধিকার আদায়ের কৌশল প্রয়োগের আগে অন্যের অধিকার নিয়ে ভাবুন।

No comments

Powered by Blogger.