সুশাসন-প্রশাসনিক জটিলতা ও জনদুর্ভোগ by বদিউল আলম মজুমদার

এভাবে গত পৌনে পাঁচ বছরে তৃতীয়বারের মতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া সত্ত্বেও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্তই থেকে যায়। উপায়ান্তস্নর না দেখে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে গ্রহীতার পক্ষ থেকে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে একটি উকিল নোটিশ প্রদান করা হয়।


এ নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যা সম্পূর্ণরূপে তাদের এখতিয়ারবহির্ভূত

মূলত বিদেশি শাসকদের স্বার্থ সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে ঔপনিবেশিক আমলে একটি প্রশাসন যন্ত্র সৃষ্টি করা হয়েছিল, যা আমলাতন্ত্র নামে খ্যাত। সেকালে সরকারি কর্মকর্তাদের আইনগতভাবে 'জনসেবক' বলা হলেও বিদেশি প্রভুদের সেবাই ছিল তাদের মূল দায়িত্ব। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এ কর্মকর্তাদের অধিকাংশই অতীতের মানসিকতা পরিত্যাগ করতে এবং সত্যিকারের জনসেবক হয়ে উঠতে পারেননি। আমলাতন্ত্রকে বর্তমানে জনপ্রশাসন বলে আখ্যায়িত করা হলেও দুর্ভাগ্যবশত অবস্থার পরিবর্তন ঘটেনি। বরং দুর্নীতি, দলতন্ত্র, ফায়দাতন্ত্র, ব্যাপক মেধাশূন্যতা ইত্যাদির প্রভাবে জনপ্রশাসন আজ যেন জনদুর্ভোগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাম-পরিচয় উল্লেখ না করে এর একটি বাস্তব উদাহরণ দেওয়া যাক।
১৯৬৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান সরকার জনৈক সরকারি কর্মকর্তাকে ঢাকায় ৩১১ বর্গফুটের একখণ্ড জমি দীর্ঘমেয়াদিভাবে ইজারা প্রদান করে। বর্তমানে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এ জমি সংক্রান্ত বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত। ১৯৭৮ সালে মালিক এতে আড়াইতলার একটি স্থাপনা তৈরি করেন।
মালিক (দানকারী) ১৯৯১ সালে মুসলিম আইন অনুযায়ী মৌখিক হেবার মাধ্যমে মোহরানার বিনিময়ে সম্পত্তিটি তার স্ত্রীকে (গ্রহীতা) দান করেন_ আইনানুযায়ী হেবা লিখিত হওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা তখন ছিল না এবং গ্রহীতাকে এর দখল বুঝিয়ে দেন। আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও বিষয়টিকে পোক্ত করার জন্য পরে ১৪ মে ১৯৯২ তারিখে নোটারি পাবলিকের সহায়তায় তিনজন সাক্ষীর উপস্থিতিতে দানকারী হলফনামার মাধ্যমে মৌখিক হেবাটিকে একটি লিখিত দলিলে পরিণত করেন। একই দিনে ঢাকা কালেক্টরেটের প্রথম শ্রেণীর একজন ম্যাজিস্ট্রেট মূল হেবানামাটির ওপর প্রতিস্বাক্ষর (পড়ঁহঃবৎ ংরমহ) করেন, যা দলিলটির সঠিকতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে।
প্রসঙ্গত, হেবানামা আইনগতভাবে বৈধ হওয়ার জন্য 'দানকারীর প্রস্তাব, গ্রহীতার সম্মতি ও সম্পত্তির দখল হস্তান্তর প্রয়োজন। লিখিত বা রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন নেই' (আবুল কালাম আজাদ, মুসলিম উত্তরাধিকার আইন, হক্কানী পাবলিশার্স, ২০১১, পৃ. ১২৬)। একাধিক আদালতের রায়ও একই শর্তের ওপর জোর দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে এবি সিকদার বনাম মনোয়ারা বেগম [৪০ ডিএলআর (১৯৮৮)] মামলার রায়ের কথা উলেল্গখ করা যায়। উলি্লখিত হেবানামাটি সম্পাদনের ক্ষেত্রে এ শর্তগুলো পুরাপুরি মেনে চলা হয়।
তবে হেবানামাটি সম্পাদনের আগে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি, কারণ মূল ইজারা চুক্তির শর্তে বলা আছে যে, শুধু স্থাপনা নির্মাণের আগে মালিক সরকারের অনুমতি ছাড়া জমিটি হস্তান্তর করতে পারবে না। আর হস্তান্তরের ক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষের কাছে রেজিস্ট্রি করতে হবে মাত্র, যদিও অন্য একটি শর্তে বলা আছে যে, ইজারাদারের পূর্বানুমতি ছাড়া জমির মালিকানা হস্তান্তর বৈধ, বাধ্যতামূলক ও কার্যকর হবে না। উপরন্তু আরেকটি শর্তানুযায়ী, মালিকানা হস্তান্তরের একমাসের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে ইজারাদারকে নোটিশ প্রদান করতে হবে। এ শর্তগুলো পরস্পরবিরোধী ও বিভ্রান্তিকর এবং গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কোনোরূপ অনুমতির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কেই প্রশ্ন সৃষ্টি করে।
এ ছাড়াও অভিজ্ঞদের মতে, এ পূর্বানুমতির শর্তটি যদি প্রয়োজনীয়ও হয়, নিতান্তই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কারণ যেহেতু রেজিস্ট্রেশন (সংশোধিত) আইন, ২০০৪ পাসের আগে (যা ২০০৫ সালে কার্যকর হয়) হেবানামা লিখিত হওয়ার এবং তা রেজিস্ট্রি করার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না, মৃত্যুশয্যায়ও সম্পত্তির মালিক মৌখিক হেবার মাধ্যমে মুসলিম আইন অনুযায়ী বৈধভাবে তা দান করতে পারতেন। যে দানকারী অতীতে মৃত্যুশয্যায় সম্পত্তি দান করেছেন, তার পক্ষে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি নেওয়া সম্ভব ছিল না এবং চুক্তি অনুযায়ী পূর্বানুমতি না নেওয়ার অজুহাতে ২০০৫ সালের আগে তার সম্পাদিত হেবানামা আইনগতভাবে অবৈধ হতো না। কেননা চুক্তির শর্ত আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে সংশ্লিষ্ট শর্ত অকার্যকর হতে বাধ্য। এ ছাড়াও উলি্লখিত হেবানামাটি সম্পাদনের আগে অনুমতি চাইলে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই অনুমতি প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করত না।
দানকারী ১৯৯৯ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। এরপর সম্পত্তির গ্রহীতা ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে নামজারির অনুমতি চেয়ে দরখাস্ত করেন। তখন থেকেই বিষয়টি নিয়ে একটি অশুভ খেলা শুরু হয়। দানকারী ও গ্রহীতার পাঁচ মেয়ে ও দুই পুত্র, যাদের মধ্য থেকে এক পুত্র হেবানামাটির ব্যাপারে আপত্তি তোলেন ও গ্রহীতার পক্ষে নামজারির বিরোধিতা করেন এবং এ অশুভ খেলার সব কলকাঠি নাড়েন। অপরদিকে অন্য চার ছেলেমেয়ে হলফনামার মাধ্যমে হেবানামার বৈধতার স্বীকৃতি দেন এবং তাদের বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী মায়ের পক্ষে নামজারি সমর্থন করে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে তা দাখিল করেন।
হেবানামাটি নিয়ে যে অশুভ খেলা শুরু হয় তাতে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষও ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। যেমন, গ্রহীতার প্রতিনিধি যেদিন প্রথম গৃহায়ন অফিসে পদার্পণ করেন, সেদিনই তাকে বলা হয়, হলফনামাটি বৈধ নয়। কারণ এটি রেজিস্ট্রি করা হয়নি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষ পর্যন্ত গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে বুঝানো হয়েছে, ১৯৯৫ সালের আগে হেবানামার ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রি করার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না।
এরপর ৩১ জুলাই ২০০৭ তারিখে সম্পত্তিটি 'দান সূত্রে মালিক হিসেবে নামজারির অনুমতির আবেদনে'র পরিপ্রেক্ষিতে সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অফিসে হাজির হওয়ার জন্য একজন উপ-পরিচালক গ্রহীতাকে নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশ মোতাবেক গ্রহীতা যথাসময়ে সব কাগজপত্র কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করেন।
এরপর ২৫ আগস্ট ২০০৮ তারিখে গ্রহীতা গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসনিক কর্মকর্তার কাছ থেকে মূল কাগজপত্রের সত্যায়িত কপি জমা দেওয়ার জন্য আরেকটি নোটিশ পান, যার উত্তরও যথাসময়ে দেওয়া হয়।
পরে অনেক তাগাদা দেওয়ার পর গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ হেবানামার সঠিকতা নিরীক্ষা করার কোনো উদ্যোগ না নিয়েই বিষয়টি তাদের একাধিক প্যানেল আইনজীবীর কাছে মতামতের জন্য পাঠান। আইনজীবীরাও মূল হলফনামাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া হস্তরেখা বিশেষজ্ঞ দ্বারা দানকারীর স্বাক্ষরের সঠিকতা যাচাই না করে এবং সাক্ষীদের সঙ্গে কথা না বলেই কতগুলো গুরুত্বহীন অপ্রাসঙ্গিক ও যান্ত্রিক যুক্তি (ঃবপযহরপধষরঃু) দেখিয়ে (যেমন, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি না নেওয়া, গ্রহীতা কেন এতদিন নামজারির জন্য আবেদন করেননি, ইউটিলিটি বিল গ্রহীতার নামে হস্তান্তর না করা, ছেলেমেয়েরা কেন হেবানামার সাক্ষী নন ইত্যাদি) হেবানামাটিকে 'ভুয়া' বলে আখ্যায়িত করেন। একজন প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট মূল হলফনামাটি সম্পাদনের দিনেই প্রতি স্বাক্ষর করেছেন_ এ বিষয়টিও তারা বিবেচনায় নিতে ব্যর্থ হন। মনে হয় যেন প্যানেল আইনজীবীরা তাদের মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো এক অদৃশ্য কারণে 'চোখ থাকিতে অন্ধের' মতো আচরণ করেছেন।
আইনজীবীরা হলফনামায় আরেকটি 'ত্রুটিও' খুঁজে বের করেন। সেটি হলো, হলফনামাটিতে ইজারা দলিল নম্বর উল্লেখ ছিল না। তবে হেবানামায় সম্পত্তিটির ঠিকানা ও বর্ণনা যথাযথভাবে দেওয়া ছিল, ফলে তাদের এমন ছিদ্রান্বেষণ ছিল সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। প্রসঙ্গত, বিশেষজ্ঞদের মতে, তৃতীয় পক্ষের পরিবর্তে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে হেবানামার মাধ্যমে সম্পদ হস্তান্তরের বেলায় নিয়মনীতি অনেক নমনীয়ভাবে প্রয়োগ করা হয়, কারণ এমন ক্ষেত্রে জালিয়তির সম্ভাবনা খুব কম থাকে।
এরই মধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যায়। প্রথমত, মহানগর জরিপে সম্পত্তিটি গ্রহীতার নামে রেকর্ড হয়। অভিজ্ঞদের মতে, এর মাধ্যমে সম্পত্তিতে গ্রহীতার মালিকানা সন্দেহাতীতভাবে সরকারি স্বীকৃতি পায়। আর এতে পরিবর্তন আনতে হলে আদালতের নির্দেশ প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, হেবানামাটি সম্পর্কে আপত্তি প্রদানকারী পুত্রটির একজন তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে আইজিপির কাছে দায়ের করা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে একটি পুলিশি তদন্ত হয়। তদন্ত রিপোর্টে একজন সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার সম্পত্তিটি হেবানামার মাধ্যমে দানকারী গ্রহীতার কাছে হস্তান্তর করেছেন এবং গ্রহীতা তা ভোগদখল করে আসছেন বলে দাবি করা হয়। অর্থাৎ পুলিশ তদন্তেও হেবানামার বৈধতা স্বীকৃতি পায়।
আইনজীবীদের মতামত পাওয়ার পরও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে টালবাহানা করতে থাকে। আবারও অনেক তাগাদা দেওয়ার পর শেষ পর্যন্ত গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১১ তারিখে আরেকজন উপ-পরিচালকের কাছ থেকে 'ওয়ারিশ সূত্রে নামজারির' জন্য কাগজপত্র চেয়ে গ্রহীতা আরেকটি নোটিশ পান। এ নোটিশের সঙ্গে কিছু অস্বাভাবিকতা জড়িত ছিল। প্রথমত, লেখার তারিখ থেকে এটি গ্রহীতার কাছে প্রায় দুই মাস পরে পেঁৗছে। দ্বিতীয়ত, গ্রহীতা হেবানামার ভিত্তিতে নামজারির আবেদন করলেও, এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়েই, কোনো এক অজানা কারণে ওয়ারিশসূত্রে নামজারির জন্য গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র চেয়ে পাঠায়।
নোটিশ প্রাপ্তির পর গ্রহীতা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে ২১ মে ২০১১ তারিখে জমা দেন। যেসব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয় তার মধ্যে অন্যতম ছিল স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের প্রদত্ত একটি প্রত্যয়নপত্র। ১৬ জুন ২০১১ তারিখে লিখিত এ প্রত্যয়নপত্রে ওয়ার্ড কমিশনার সুস্পষ্টভাবে বলেন, হেবাসূত্রে গ্রহীতাই সম্পত্তিটির একমাত্র বৈধ মালিক। তিনি আরও উলেল্গখ করেন, এ বৈধতার স্বীকৃতিস্বরূপই মহানগর জরিপে সম্পত্তিটি গ্রহীতার নামে রেকর্ড হয়েছে। তার মতামতের সমর্থনে তিনি প্রত্যয়নপত্রে পুলিশ রিপোর্টের কথাও উল্লেখ করেন।
এভাবে গত পৌনে পাঁচ বছরে তৃতীয়বারের মতো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়া সত্ত্বেও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্তই থেকে যায়। উপায়ান্তস্নর না দেখে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে গ্রহীতার পক্ষ থেকে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষকে একটি উকিল নোটিশ প্রদান করা হয়। এ নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যা সম্পূর্ণরূপে তাদের এখতিয়ারবহির্ভূত।
শোনা যায়, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ সম্পত্তিটির ১৪/৭২ অংশ হেবানামা সম্পর্কে আপত্তি প্রদানকারী পুত্রটি নামে এবং অবশিষ্ট ৫৮/৭২ অংশ গ্রহীতার নামে নামজারি করার নির্দেশ দেয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ অর্ডারের কপি গ্রহীতাকে দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। বরং নামজারির ফি হিসেবে ২৩ হাজার টাকা জমা দেওয়ার একটি চালান ধরিয়ে দেয়। উলেল্গখ্য, এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ পুলিশের তদন্ত, ওয়ার্ড কমিশনারের প্রত্যয়নপত্র, এমনটি মহানগর জরিপের রেকর্ড সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে উপেক্ষা করে।
তবে এ সিদ্ধান্ত থেকে এটি সুস্পষ্ট হয়, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ তাদের প্যানেল আইনজীবীদের অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন মতামত উপেক্ষা করে হেবানামাটির বৈধতার স্বীকৃতি দিয়েছে_ তা না হলে তারা পুরো সম্পত্তিটি মোট আটজন ওয়ারিশের (মা, দুই ছেলে ও পাঁচ মেয়ের) নামে নামজারি করার নির্দেশ দিত। কিন্তু গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সমস্যা হলো যে, হেবানামাটি বৈধ হলে অন্য কারোরই সম্পত্তিটির মালিকানার ওপর আর কোনো অধিকারই থাকে না। অর্থাৎ গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ যে পুত্রের নামে সম্পত্তিটির প্রায় এক-পঞ্চমাংশের মালিকানা হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছে, সে পুত্রের এ ক্ষেত্রে কোনো বৈধ অবস্থানই (ষড়পঁং ংঃধহফর) থাকার কথা নয়। আর ওয়ারিশদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগবাটোয়ারার দায়িত্ব গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নয়_ তাদের এখতিয়ার হলো হেবানামার ভিত্তিতে নামজারির আবেদনের প্রতি সম্মতি প্রদান বা তা খারিজ করে দেওয়া। তাই গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের উপরিউক্ত সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণভাবে এখতিয়ারবহির্ভূত ও অবৈধ।
প্রসঙ্গত, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বরাদ্দ দেওয়া জমি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে তাদের পূর্বানুমতি নেওয়ার বিধানের পেছনে যুক্তি হলো, এর মাধ্যমে জালিয়াতি রোধ করে দানকারী ও গ্রহীতার অধিকার বা স্বার্থ সংরক্ষণ করা যাবে। উলি্লখিত হেবানামাটি সম্পাদনের উদ্দেশ্য ছিল সম্পত্তিটির মালিকানা দানকারীর স্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করা এবং এটিই ছিল তার ন্যায়ানুগ স্বার্থ। তেমনিভাবে তার স্ত্রী বা গ্রহীতার অধিকার হলো বৈধ হেবানামার মাধ্যমে দানকৃত সম্পত্তিটির ওপর তার মালিকানার স্বীকৃতিস্বরূপ যথাসময়ে তার পক্ষে নামজারির নির্দেশ প্রদান। কিন্তু উলি্লখিত হেবানামার ক্ষেত্রে কারোরই স্বার্থ সংরক্ষিত হয়নি বরং পূর্বানুমতির অজুহাতে গ্রহীতা, একজন আশীতিপর বৃদ্ধ, দীর্ঘ হয়রানির স্বীকার এবং অন্যায়ভাবে বঞ্চিত হয়েছেন। কোনো এক অদৃশ্য কারণে জনপ্রশাসনই এ জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। আর কী কারণে তা করা হয়েছে, বিশেষত শুধু এক পুত্রের অংশ তার নামে খারিজ করার ব্যাপারে তাদের অতি উৎসাহ এবং অর্ডারের কপি গ্রহীতাকে প্রদানে অস্বীকৃতি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখার দাবি রাখে। কারণ এটি একটি বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়_ এমন অবিচারের ঘটনা সচরাচরই ঘটছে_ যার বিহিত না হলে পুরো প্রশাসনিক প্রক্রিয়াই ভবিষ্যতে ভেঙে পড়তে বাধ্য।

ড. বদিউল আলম মজুমদার : সম্পাদক সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক

No comments

Powered by Blogger.