ছোট বন্ধু শ্রেয়ার বড় শোক by আবদুল বাসির

‘বাবা...বাবাকে নিয়ে যাচ্ছে, আমিও যাব বাবার সঙ্গে, আমাকে নিয়ে চলো...’ খুবই চেনা আমাদের ছোট্ট বন্ধু শ্রেয়ার কণ্ঠে কান্না আর আহাজারি জড়ানো এই অচেনা বাক্যের উচ্চারণে তখন মনে করুণ দাগ কেটে যায় সবারই। থমথমে পরিবেশ ছাপিয়ে চার বছরের মেয়েটিকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা কারও নেই।


শুধু অসহায়ত্বের চোখের জল গড়িয়ে পড়েছে অবিরত।
বন্ধুসভার প্রতিটি অনুষ্ঠানেই প্রাণবন্ত উপস্থিতি ছিল শ্রেয়ার। বাবা তাকে পৌঁছে দিতেন অনুষ্ঠানে। আজ বন্ধুরা উপস্থিত শ্রেয়াদের বাড়িতে তার বাবার শেষযাত্রায় শরিক হতে, অশ্রুসিক্ত সান্ত্বনা জানাতে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি। কিন্তু শ্রেয়ার চোখে চোখ রাখতে পারেননি। কী করে সান্ত্বনা দেবেন অবুঝ মেয়েটিকে?
শনিবার সকালে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যান শ্রেয়ার বাবা আহসান হাবিব মিয়া। পরিবারের অন্যরা যখন বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন, তখন নিকটাত্মীয়রা কৌশলে শ্রেয়ার কাছে এ খবর গোপন করেছেন। মিথ্যা আশ্বাসে সকাল থেকে বিকেল গড়িয়েছে। কিন্তু বিকেলে যখন শ্রেয়ার কাছে আর অজানা থাকল না যে তার বাবা আর নেই, তখন পৃথিবীর সব কান্না যেন ভর করে তাকে। কাঁদতে কাঁদতে একে-ওকে প্রশ্ন করে, ‘বাবা আমাকে আর গান শোনাবে না? আমাকে আর স্কুলে নিয়ে যাবে না?’
শ্রেয়ার চাচাত ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জীবন জানালেন, তাঁকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বিকেল পর্যন্ত সময় কাটিয়েছি। বলেছি, দুর্ঘটনায় বাবা আহত হয়েছেন, আবার ভালো হয়ে যাবে। তোমাকে আবার আদর করবে। তাকে আইসক্রিম খাওয়াতে চেয়েছি। কিন্তু ও বলে, ‘না আইসক্রিম খাব না। বাবা মানা করেছে। আমার ঠান্ডা লেগেছে। আমাকে বাবার কাছে নিয়ে চলো।’ এই বলে চিৎকার করে কাঁদছিল শ্রেয়া।
শ্রেয়াকে বড্ড বেশি ভালোবাসতেন বাবা। শ্রেয়াও যেন বাবা ছাড়া আর কিছু বুঝত না। অন্য শিশুরা যখন কান্নার সময় মাকে ডাকত, শ্রেয়া তখন ডাকত বাবাকে। ‘আয় খুকু আয়...’ বাবা প্রতি রাতে এই গান না শোনালে ঘুমাত না শ্রেয়া। বাইরে থাকলে মুঠোফোনে গান শোনাতে হতো। কিন্তু আজ বাবা নেই, শ্রেয়াকে ঘুম পাড়াতে কে গান শোনাবে।
বন্ধু শ্রেয়ার বাবার অকাল মৃত্যুতে আমরা শুধু শোকাহতই নই, সংক্ষুব্ধও বটে। পাশাপাশি তুলে ধরি নিরাপদ সড়কের চিরন্তন দাবি।
 চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভা

No comments

Powered by Blogger.