শিক্ষা-জেএসসির বৃত্তি এবং হতাশা by সিঁথী শর্মা বিন্দু

ভৈরব রেলস্টেশনে এসে উপস্থিত হলো চট্টগ্রামগামী ট্রেন। কিন্তু স্টেশন মাস্টার যেতে দিচ্ছেন না। কারণ একই সময়ে আসার কথা আরেকটি ট্রেনের। ট্রেনটি এলো। তবে ১ ঘণ্টা পরে। কিন্তু প্রথম ট্রেনের যাত্রীদের ভাগ্যে জুটল না আগে যাওয়া। দেরিতে আসার সত্ত্বেও স্টেশন মাস্টার আগে যেতে দিলেন পরে আসা ট্রেনটিকেই।


শুনেছি এটা নাকি বাংলাদেশ রেলওয়ের নিয়ম। এমন একটি ঘটনা ঘটে এবারই প্রথম জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা বা জেএসসি পরীক্ষার বৃত্তির ফলে। রেকর্ড পরিমাণ পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণের পরও আশাতীত ফল করতে পারেনি পরীক্ষার্থীরা। প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৮ হাজার ১০০ জন। অর্থাৎ শতকরা প্রায় ০.৫৮ ভাগ। তবুও মেধার মূল্যায়ন হলো না সঠিকভাবে। প্রায় ৬ মাস পর দেওয়া হলো বৃত্তির ফল। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পাওয়ার আশা কোনো অপরাধের বিষয় নয়। সব মানের শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার প্রতি উৎসাহ বাড়ানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। ট্যালেন্টপুলে বৃত্তির সর্বনিম্ন পয়েন্ট ৩.৫০ এবং সাধারণ গ্রেডে বৃত্তির সর্বনিম্ন পয়েন্ট ২.৫০। আরও একটি নিয়ম হলো, একই পয়েন্ট প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের নম্বর প্রাধান্য পাবে এবং তাও যদি এক হয়ে যায় তা হলে যে বয়োজ্যেষ্ঠ তাকে বৃত্তি দেওয়া হবে। আবার তাও হবে কোটাভিত্তিক। কোটাভিত্তিক এ নিয়মের ফলে শিক্ষার্থীদের মেধার মূল্যায়ন হয়নি সঠিকভাবে। ফলে বৃত্তি পায়নি অনেক জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী। যদি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৩২ হাজার ৮০০ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করতে পারে, তা হলে নিশ্চয়ই সেই ৮ হাজার ১০০ জন জিপিএ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী আশা করতেই পারে, তারা সবাই বৃত্তি পাবে। যদিও তাদের কাউকে কাউকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। এটাই তো অনেক! এ থেকে মনে হয়, যারা জিপিএ-৫ পেয়েও বৃত্তি পায়নি তাদের উচিত ছিল এমন থানায় গিয়ে পরীক্ষা দেওয়া যে থানায় মেধাবীদের সংখ্যা কম। গ্রামের শিক্ষার্থীদের উৎসাহ বাড়ানোর জন্য শহরাঞ্চলের ভালো ফলের কোনো মূল্যই থাকবে না, এটা তো ন্যায়সঙ্গত নয়। যেখানে গ্রামে একজন ৩.৫০ পেয়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাচ্ছে, সেখানে আবার শহরের আরেকজন ৫.০০ পেয়ে সাধারণ গ্রেডেও বৃত্তি পাচ্ছে না। এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে?
এবারের বৃত্তির নিয়মের সবচেয়ে মজার অংশ হচ্ছে বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রাধান্য। তবে একদিক দিয়ে ঠিকই আছে। আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তো কোনো নতুন কিছু করে সবাইকে ভড়কে দিতে হবে। একই ফল দু'জন করলে প্রাধান্য পাবে বয়সে যে ছোট। এটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এটা হলো না জেএসসি পরীক্ষার বৃত্তির ক্ষেত্রে। এখানে তো বাংলাদেশ রেলওয়ের মতো দেরিতে আসা ট্রেনকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আমার মতো অনেক জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী আছে, যারা বয়সজনিত জটিলতা ও কোটাভিত্তিক ফল প্রকাশের ফলে বৃত্তি পায়নি। তাদের সবার হয়ে আমি শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই এবং তাকে অনুরোধ করতে চাই, তিনি যেন আমাদের মতো আর কোনো ভালো ফল করা শিক্ষার্থীকে আগামী দিনে আশাহত না করেন এবং তাকে আরও জানাতে চাই, কোটা বা বয়সকে প্রাধান্য না দিয়ে সব ফলকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। কোটাভিত্তিক বৃত্তি প্রদানের দ্বারা গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উৎসাহ বাড়ানোর পাশাপাশি শহরের শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য সম্মানটুকু অন্তত তাদের দেওয়া উচিত।

সিঁথী শর্মা বিন্দু : নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী
 

No comments

Powered by Blogger.