সমাপনী: অদম্য চট্টগ্রাম-সমুদ্র ছাড়া ভবিষ্যৎ অর্থনীতি চলবে না: ড. ইউনূস

সমুদ্র ছাড়া ভবিষ্যৎ অর্থনীতি চলবে না বলে মন্তব্য করেছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ২০৩০ সালের বৈশ্বিক বাস্তবতা মোকাবিলা করার জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত হতে হবে। এই প্রস্তুতির জন্য গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ অপরিহার্য।


গতকাল মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার আয়োজিত অদম্য চট্টগ্রাম উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সৌন্দর্য, সাহসের যত গল্প’ স্লোগান নিয়ে গত ৩০ মার্চ শুরু হয় ১২ দিনব্যাপী এই উৎসব।
ড. ইউনূস বলেন, ‘চট্টগ্রামের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলেরও সম্ভাবনা আছে। চট্টগ্রামের সম্ভাবনার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এককভাবে বাংলাদেশের সম্ভাবনার সঙ্গে পৃথিবীর সম্ভাবনাও জড়িত।’ তিনি বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে চীন হবে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আর দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে ভারত। আমরা আছি এ দুই বিরাট জায়ান্টের মাঝখানে। এই দুই অর্থনৈতিক জায়ান্টের চাহিদা পূরণে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ২০৩০ সালে কোথায় যাব, তা ঠিক করতে না পারলে আমরা তলিয়ে যাব, পথহারা হব।’ তিনি বলেন, ‘সমুদ্র ছাড়া ভবিষ্যৎ অর্থনীতি চলবে না। জ্বালানি ব্যয় বাড়বে, তাই সমুদ্রপথই হবে কম খরচে পণ্য পরিবহনের সবচেয়ে উপযোগী উপায়। আমাদের এই সুবিধা আছে।’
মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, সম্প্রতি অং সান সু চি বিজয়ী হয়েছেন। এই বিজয় চলতে থাকবে। তখন সমস্ত পৃথিবীর বিনিয়োগ মিয়ানমারের দিকে যাবে। ইতিমধ্যে সার্কে আফগানিস্তান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মিয়ানমারকেও সাউথ এশিয়ান ইউনিয়ন বা সার্কে আনতে হবে।
তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশের চিত্র পাল্টে দেবে বলে মন্তব্য করেন ড. ইউনূস। তরুণ সম্প্রদায় ২০৩০ সালে বাংলাদেশকে কেমন দেখতে চায়, তা জানতে ডেইলি স্টারকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান ড. ইউনূস।
সম্মাননা পেলেন যাঁরা: অনুষ্ঠানে রাজনীতি, ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা, অর্থনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখায় মোট ১৯ জন ব্যক্তি ও দুটি প্রতিষ্ঠানকে ‘অদম্য চট্টগ্রাম সম্মাননা’ জানানো হয়। তাঁদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ডেইলি স্টার-এর সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম। পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় অবদান রাখায় প্রয়াত ৫৬ জন গুণীর প্রতি উৎসবকে উৎসর্গ করা হয়। দুটি বড় পর্দায় স্লাইড শোতে ৫৬ গুণীজনের ছবি ও কীর্তি তুলে ধরা হয়। তাঁদের বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন প্রথম আলোর আবাসিক সম্পাদক আবুল মোমেন। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়।
সম্মাননাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন: ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাসংগ্রামী বিপ্লবী বিনোদবিহারী চৌধুরী, শিক্ষাবিদ ফেরদাউস খান, জাতীয় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ নূরুল ইসলাম, শহীদজায়া মণি ইমাম, সমাজকর্মী সৈয়দ মোহাম্মদ শফি, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সংগঠক বেলাল মোহাম্মদ, ইতিহাসবিদ সুনীতিভূষণ কানুনগো, চক্ষুচিকিৎসক রবিউল হোসেন, শহীদজায়া মুশতারী শফী, লেখিকা ফাহমিদা আমিন, ভৌতবিজ্ঞানী জামাল নজরুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন, শিল্পী সবিহ-উল আলম, শিশুসাহিত্যিক সুকুমার বড়ুয়া, পদার্থবিদ মুহাম্মদ ইব্রাহীম, সংগীতজ্ঞ ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলাম, ভাষাসংগ্রামী প্রতিভা মুৎসুদ্দী ও ক্রীড়া সংগঠক শাহেদ আজগর চৌধুরী। শিল্পোদ্যোক্তা ও সমাজসেবায় ভূমিকা রাখার জন্য এম এম ইস্পাহানি লিমিটেড এবং এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানিকে সম্মাননা দেওয়া হয়। গানের দল রক্তকরবীর সদস্যদের গাওয়া জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন স্কুল অব অরিয়েন্টাল ড্যান্সের শিল্পীরা। নাটক পরিবেশন করে নাটুয়া। উৎসব আয়োজনে বিশেষ সহযোগিতার জন্য সম্মাননা দেওয়া হয় শামসুল হোসাইন, মনোয়ারা হাকিম আলী, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও বিজিএমইএকে। ডেইলি স্টার-এর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম।

No comments

Powered by Blogger.