নারী, শুধু তোমার জন্য

আন্তর্জাতিক নারী দিবস মার্চ মাসেই পালিত হয়। গত মাসের এ দিবসটি ছিল ১০১তম নারী দিবস। আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম বলছে, লন্ডন থেকে লাহোর—সর্বত্রই নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য এখনো চলমান রয়েছে। কিন্তু এর পরও আজকের দিনে বিশ্বজুড়েই নারীদের জন্য চমকপ্রদ কিছু স্থান রয়েছে, যেন স্থানগুলো ‘নারী, শুধু তোমার জন্য’।


চলুন একটু ঘুরে আসি।

 লেখাপড়ার জন্য সেরা স্থান—দক্ষিণ আফ্রিকার লেসোথো: নারীদের সাক্ষরতার হার লেসোথোতে পুরুষদের চেয়ে বোশি। ৯৫ শতাংশ নারীই লিখতে ও পড়তে পারেন। যেখানে পুরুষের অবস্থান ৮৩ শতাংশ। সবচেয়ে বাজে দেশ ইথিওপিয়া। দেশটিতে মাত্র ১৮ শতাংশ নারী লিখতে ও পড়তে পারেন। তবে পুরুষদের অবস্থা তুলনামূলক ভালো। ৪২ শতাংশ।
 নারীর জন্য সেরা স্থান—আইসল্যান্ড: আইসল্যান্ড নারী-পুরুষ সাম্যের বিষয়ে সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান। রাজনীতিতে অংশগ্রহণ, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্য-সূচকের ক্ষেত্রে এ সমতা রয়েছে। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্থান ইয়েমেন। সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান আফগানিস্তান।
 রাজনীতিকের জন্য সেরা স্থান—রুয়ান্ডা: রুয়ান্ডা বিশ্বের একমাত্র জাতি, যেখানে পার্লামেন্টে নারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। পার্লামেন্টের ৮০টি আসনের মধ্যে নারীদের নিয়ন্ত্রণে আছে ৪৫টি। নারীদের রাজনীতি করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে নিকৃষ্ট দেশগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, ইয়েমেন, কাতার, ওমান ও বিলাইজ। এসব দেশের পার্লামেন্টে কোনো নারী সদস্য নেই।
 মায়েদের জন্য সেরা স্থান—নরওয়ে: মায়েদের জন্য বিশ্বের সেরা স্থান নরওয়ে। প্রসবকালীন মৃত্যুর ঝুঁকি নরওয়েতে সর্বনিম্ন। এ ঝুঁকি সাত হাজার ৬০০ জনে মাত্র একজনের। শিশু জন্মের সময় প্রায় সবাই দক্ষ ধাত্রীর সেবা পান। সবচেয়ে বাজে অবস্থা আফগানিস্তানে। সেখানে বোম বা বুলেটের চেয়ে একজন নারী শিশুজন্মের সময় কমপক্ষে ২০০ বারের বেশি সময় মৃত্যুঝুঁকিতে থাকেন।
 শিল্পকলায় নারীদের জন্য সেরা স্থান—সুইডেন: সুইডেনের আর্ট কাউন্সিল শিল্পকলায় নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে। সুইডেনের ফিল্ম ইনস্টিটিউট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, চলচ্চিত্রের জন্য আর্থিক সহায়তা নারী-পুরুষ উভয়কেই সমভাবে দেওয়া হবে। এর বাইরে চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য কোটা (বিশেষ অগ্রাধিকার) থাকবে।
 দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার জন্য সেরা স্থান—জাপান: জাপানের নারীরা দীর্ঘ জীবন (গড়ে ৮৭ বছর) আশা করতে পারেন। পুরুষদের চেয়েও তা গড়ে সাত বছর বেশি। তবে নারীদের স্বল্প আয়ু লেসেথোতে (গড়ে ৪৮ বছর)। দেশটিতে পুরুষের আয়ুও খুব বেশি নয়। নারীদের চেয়ে মাত্র গড়ে দুই বছর বেশি।
 জন্ম দেওয়ার জন্য সেরা স্থান—গ্রিস: জন্ম দেওয়ার জন্য বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশ গ্রিস। শিশুজন্মের সময় মায়ের মৃত্যুঝুঁকির আশঙ্কা ৩১ হাজার ৮০০ জনে মাত্র একজনের। আর শিশুজন্মের ক্ষেত্রে মায়ের মৃত্যুঝুঁকির সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা দক্ষিণ সুদানে।
 অবসরের জন্য নারীদের সেরা স্থান—ডেনমার্ক: ডেনমার্কের নারীরা অবসরের জন্য যথেষ্ট সময় পান। যে শ্রমের আর্থিক মূল্য নেই, এমন কাজে পুরুষদের চেয়ে প্রতিদিন মাত্র ৫৭ মিনিট বেশি সময় ব্যয় করেন ডেনমার্কের নারীরা। অন্যদিকে মেক্সিকো ঠিক এর উল্টো। ওই দেশের নারীরা অর্থমূল্য হয় না, এমন কাজে প্রতিদিন গড়ে পুরুষের চেয়ে চার ঘণ্টা ২১ মিনিট বাড়তি সময় ব্যয় করেন।
 টাকা উপার্জনের জন্য সেরা স্থান—লুক্সেমবার্গ: টাকা উপার্জনের জন্য লুক্সেমবার্গ (নরওয়ের সঙ্গে যৌথভাবে) নারীদের জন্য আদর্শ স্থান। ওই দেশে নারী ও পুরুষের আয়ের হার প্রায় সমান। সবচেয়ে বাজে অবস্থা সৌদি আরবের নারীদের।
 রাষ্ট্রের প্রধানের জন্য সেরা স্থান—শ্রীলঙ্কা: শ্রীলঙ্কার নারীরা দেশটি শাসন করেছেন ২৩ বছর। অথচ স্পেন ও সুইডেনের মতো দেশেও নারীরা কখনো সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেননি।
 বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য সেরা স্থান—কাতার: কাতারে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একজন পুরুষের বিপরীতে ছয়জন নারী ভর্তি হন।
 অ্যাথলেটদের (ক্রীড়াবিদ) জন্য সেরা স্থান—যুক্তরাষ্ট্র: ২০১১ সালে বিশ্বের সর্বাধিক আয় করা ১০ জন নারী অ্যাথলেটের মধ্যে পাঁচজনই যুক্তরাষ্ট্রের। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বাজে দেশ সৌদি আরব। দেশটি কখনোই কোনো নারী অ্যাথলেটকে অলিম্পিকে পাঠায়নি। এ ছাড়া স্কুলের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় নারীদের অংশগ্রহণেরও সুযোগ নেই।
ইমাম হোসেন, টাইমস অব ইন্ডিয়া থেকে

No comments

Powered by Blogger.