কার্টনে ভরা লাশটি ঢাকার স্কুলছাত্রীর by মোস্তফা মন্জু

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ট্রেন থেকে উদ্ধার হওয়া কার্টনে ভরা লাশের পরিচয় মিলেছে। তার নাম জান্নাতুল ফেরদৌস (১০)। সে ঢাকার উত্তরা মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশারফ হোসেনের ছোট মেয়ে। নিহত জান্নাতুল ফেরদৌস রাজধানীর দক্ষিণখানের আশকোনা এলাকার আল সাবাহ্ একাডেমির চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী।

এ ঘটনায় দুই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া দুই ব্যক্তিকে গতকাল রোববার জামালপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাহাঙ্গীর আলমের আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। আজ সোমবার এই আবেদনের ওপর শুনানি হবে। একই আদালত জামালপুর পৌর কবরস্থানে দাফন করা ওই শিশুর লাশ তুলে তা পরিবারের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন।
শিক্ষক মোশারফ হোসেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী ও জান্নাতুল ফেরদৌসসহ দুই সন্তানকে নিয়ে আশকোনা এলাকার ৫৫৬ নম্বর বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার উথলী গ্রামে।
জামালপুর রেলওয়ে থানা সূত্রের বিবরণ অনুযায়ী, জান্নাতুল ফেরদৌসের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় দক্ষিণখান থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। বুধবার গভীর রাতে দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশনে আন্তনগর ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি কামরায় কার্টনের ভেতরে মেয়েটির লাশ পাওয়া যায়। এরপর জামালপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার শাকের আহমেদের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঢাকায় যায়। দলটি দক্ষিণখান থানার পুলিশের সহযোগিতায় শনিবার ভোরে আশকোনায় নিহত জান্নাতুল ফেরদৌসদের বাড়ির মালিক কাজী মহিউদ্দিন মোহনসহ (২৮) দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে। অপর যুবক হলেন ওই বাড়ির চারতলার ভাড়াটে আরিফ বিল্লাহ (২৫)। আরিফ নিজেকে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থী বলে দাবি করেন। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ পৌরসভার মাসকান্দা এলাকায়। আরিফের সঙ্গে মহিউদ্দিনের বেশ সখ্য ছিল।
নিহত জান্নাতুল ফেরদৌসের বড় ভাই (বড় মায়ের ছেলে) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আরিফ বিল্লাহ বুধবার বিকেল চারটার দিকে চকলেট কিনতে পাঠানোর কথা বলে জান্নাতুল ফেরদৌসকে ডেকে নেন। এর পর থেকে তাঁর বোনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। পরদিন পত্রিকা ও টেলিভিশনে শিশুর লাশ উদ্ধারের খবর ও লাশের শরীরের জামা দেখে তাঁরা নিশ্চিত হন, লাশটি জান্নাতুল ফেরদৌসের। কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে, তা ধারণা করতে পারছেন না কামরুজ্জামান।
ওসি শাকের আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হওয়া দুজন জান্নাতুল ফেরদৌসকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা অস্বীকার করেন। ওসি আরও জানান, আরিফের বাসার শোবার ঘর থেকে একটি কলম (সাইন পেন), কাগজের বড় একটি কার্টন, মুঠোফোন নম্বর লেখা কাগজ, চকলেট, স্কচটেপ, মদ ও বিয়ারের খালি ক্যান ও কিছু গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। আলামত দেখে মনে হয়, তাঁরা শিশুটির লাশভর্তি কার্টন প্রথমে বেনামে কুরিয়ার সার্ভিসে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ধরা পড়ার আশঙ্কায় পরে তা ট্রেনে তুলে দেয়। লাশের সুরতহাল দেখে ধারণা করা হয়, মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
ওসি আরও জানান, মেয়েটির লাশ উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার পুলিশ বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে জামালপুর থানায় মামলা করে। এই মামলায় ওই দুই যুবককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.