দাবি না মানলে এক দফার আন্দোলন: খালেদা

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, ১০ জুনের মধ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিল পাস করতে হবে। নইলে ১১ জুন ঢাকায় সমাবেশ হবে। বেঁধে দেওয়া সময়সীমার মধ্যে দাবি মানা না হলে সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। প্রয়োজনে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনেও বিএনপিকে যেতে হতে পারে।


বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভার উদ্বোধনী বক্তব্যে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে গতকাল রোববার এ সভা হয়। এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা সভাপতি এবং সব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা অংশ নেন। সভায় অন্তত ৮০ জন নেতা বক্তব্য দেন।
নির্বাহী কমিটির সদস্যরা দলকে আরও শক্তিশালী করা, আন্দোলন কর্মসূচি গ্রহণ, মহাসচিব নিয়োগ, ঢাকা মহানগর কমিটিকে শক্তিশালী করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। নাম উচ্চারণ না করেই দলের কিছু জ্যেষ্ঠ নেতা সম্পর্কে তাঁরা সমালোচনা করেন। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারেও মতামত তুলে ধরেন অনেকে।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, সরকার সম্পূর্ণ জনবিচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। তাই নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের বিধান বাতিল করেছে। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে জনরায়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে বিএনপি পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করবে। তিনি বিএনপিকে অবিনাশী, দুর্বার ও দুর্জয় বলে উল্লেখ করেন।
খালেদা জিয়া তাঁর বক্তব্যে ক্ষমতাসীন সরকারের তিন বছরের ব্যর্থতার নানা দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এদের দুঃশাসন ও সীমাহীন ব্যর্থতায় সারা দেশে সৃষ্টি হয়েছে হাহাকার। চলছে সন্ত্রাস, দখল, দলীয়করণ, অনাচার আর লুটপাটের মহোৎসব।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কথা তুলে ধরে বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী তিন বছরে অপরাধ হয়েছে পাঁচ লাখেরও বেশি। গুপ্তহত্যা মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অবিরাম গতিতে চলছে। সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোকে বিরোধী দল দমনে ব্যস্ত রাখছে। এতে বাহিনীগুলোর সদস্যদের নৈতিক মান ও দক্ষতা নষ্ট হচ্ছে। তাদের কেউ কেউ গুরুতর সামাজিক অপরাধের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ছে। সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা ও সাংবাদিক সাগর-রুনি রহস্যজনকভাবে খুন হলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ ঘটনার কোনো কূলকিনারা হলো না।
বিদ্যুৎ উৎপাদন শুভংকরের ফাঁকি: খালেদা জিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, তিনি নতুন সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছেন। সেই বিদ্যুৎ কোথায় যাচ্ছে, দেশের মানুষ আজ তা জানতে চায়। আসলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের এই হিসাবের মধ্যে রয়েছে বিরাট শুভংকরের ফাঁকি। তাঁর অভিযোগ, পদ্মা সেতুর কাজ পাইয়ে দিতে বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আগাম ঘুষ নিয়েছেন সরকারের প্রভাবশালী নেতারা।
নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান: সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষার দায়িত্ব আবার বিএনপির ওপর এসে পড়েছে। ছোট-বড় বেশ কিছু রাজনৈতিক দল বিএনপির সহযাত্রী হয়েছে। শাসক দল ক্রমেই মিত্রহীন হয়ে পড়ছে। বিএনপির মতো দলকে দেশের পরিস্থিতির পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝতে হবে এবং এর আলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রতিপক্ষের কৌশল-অপকৌশল এবং শক্তি ও দুর্বলতা সম্পর্কেও সঠিক মূল্যায়ন থাকতে হবে। মিত্রদের চিনতে হবে এবং এর আওতা বাড়াতে হবে। তবে সবকিছু করার আগে প্রয়োজন সংগঠনকে শক্তিশালী করা। নিজেদের ভেতরের ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করা। দলকে আধুনিক, প্রযুক্তিনির্ভর ও আরও গণমুখী করা।
নির্বাহী কমিটির সদস্যরা যা বললেন: খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পর নির্বাহী কমিটির সদস্যদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। প্রথমে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় নেতা ও লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবিব।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে হবে। প্রয়োজনে চট্টগ্রামের নির্বাচনের কৌশল নিতে হবে। সরকারকে ফাঁকা মাঠ দেওয়া ঠিক হবে না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, ঝড়ঝাপ্টা এলে পশুপাখি সব মারা যায়, বেঁচে থাকে শুধু উইপোকা। এই উইপোকারা এখন বিএনপিতে প্রাধান্য বিস্তার করছে। এদের ব্যাপারে সতর্ক হতে আহ্বান জানান তিনি।
সাংসদ সৈয়দা আসিফা আশরাফি বলেন, বিএনপিতে এখন অনেক হাইব্রিড নেতা চলে এসেছেন। তিনি এই হাইব্রিড নেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিএনপি কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। কিন্তু কর্মীরা বিএনপি করে মন থেকে। তাই এই হাইব্রিড নেতাদের বিএনপির আদর্শ, কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেওয়া উচিত।
সাংসদ রেহানা আক্তার ঢাকা মহানগর বিএনপির কর্মকাণ্ড নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সারা দেশে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা অনেক ভালো। রোডমার্চসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে তা প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আন্দোলনে ঢাকা মহানগরকে সক্রিয় করতে না পারলে কোনো লাভ হবে না। কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মতিউর রহমান বর্তমান ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘তাঁকে ভারমুক্ত করুন।’

No comments

Powered by Blogger.