রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য জরুরি-নির্বাচন কমিশনের কর্মপরিকল্পনা

সংবিধান সংশোধনের নানা দিক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে যখন বিতর্ক হচ্ছে, তখন নির্বাচন কমিশনসংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা খুব একটা শোনা যায়নি। নির্বাচন কমিশন তাদের পঞ্চবার্ষিক কৌশলগত পরিকল্পনা ও দ্বিবার্ষিক কর্মপরিকল্পনার অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিষয়টি আবার সামনে নিয়ে এসেছে।


অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যেমন বিভিন্ন মতামত ও পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে, তেমনি সেখানে উপস্থিত বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকেও নানা পরামর্শ পাওয়া গেছে। গণতন্ত্রের স্বার্থেই নিশ্চিত করতে হবে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আর একটি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনই তা করতে পারে।
নির্বাচন কমিশনকে আমরা সাধুবাদ জানাই পঞ্চবার্ষিক কৌশল পরিকল্পনা ও দ্বিবার্ষিক কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা উপস্থাপনের জন্য। প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশন এ ধরনের একটি ভবিষ্যৎমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলোতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। নির্বাচন কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা, নিজস্ব ভবন—এগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা এটা বলছে যে, নির্বাচনকে ত্রুটিহীন করার ক্ষেত্রে একটি সঠিক ভোটার তালিকা ও ভোটার পরিচয়পত্র খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। এই প্রক্রিয়াকে আরও যুগোপযোগী করার বিকল্প নেই। ভোটার তালিকা ও ভোটার পরিচয়পত্রকে এমনভাবে ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসা উচিত, যাতে তা নিয়মিত হালনাগাদ করা যায় ও পরিচয়পত্র সঠিক কি না, তা পরীক্ষা করার সুযোগ থাকে। গণনায় কারচুপির আশঙ্কা দূর করতে ভোটিং পদ্ধতি ইলেকট্রনিক করাও সময়ের দাবি। নির্বাচন কমিশন যাতে এই কাজগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে, সে বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।
অন্যদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের শর্ত ও যোগ্যতা-অযোগ্যতার বিষয়টি যেমন স্পষ্ট থাকা জরুরি, তেমনি কতজন নির্বাচন কমিশনার হবেন, সেটাও নির্দিষ্ট থাকা প্রয়োজন। বর্তমানে সর্বোচ্চ কতজন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া যাবে, তার সীমারেখা নেই। সংবিধান অনুযায়ী কমিশনার নিয়োগের আইন প্রণয়নও জরুরি। বিশেষজ্ঞরা সংবিধানে এ-সংক্রান্ত সবকিছু স্পষ্টভাবে উল্লেখ করার সুপারিশ করেছেন। বর্তমানে সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া চলছে। বিশেষ সংসদীয় কমিটি এ ব্যাপারে কাজ করে যাচ্ছে। তারা বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে। আইন করে হোক বা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে হোক, এই বিষয়গুলো যে সুস্পষ্ট করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে একটি শক্তিশালী ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আগের তুলনায় কমিশন সেই পথে অনেকটা এগিয়েছে। কিন্তু এটা একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া। সে বিবেচনা থেকেই কৌশলগত পরিকল্পনা ও কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ এগিয়ে নিতে সরকার ও দেশের রাজনৈতিক মহলকে আন্তরিক হতে হবে। কারণ, চূড়ান্ত বিচারে দেশের রাজনৈতিক শক্তি আন্তরিকতার পরিচয় দিতে না পারলে শুধু নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এককভাবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

No comments

Powered by Blogger.