বিআরটিসির বাস-যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে হবে

সাধারণ মানুষের ন্যায্য ভাড়ায় যাতায়াতের সুযোগ বলতে বিআরটিসির বাস। সেই বাসটিকেই কামড়ে ধরেছে কিছু দুর্বৃত্ত। এতই শক্তিশালী এই চক্র যে তারা দিনের পর দিন শুধু ধ্বংসই করে যায়। কেউ তাদের দমাতে পারে না কিংবা কেউ তাদের দমানোর চেষ্টাও করে কি না সন্দেহ আছে। এদের বড় একটি অংশ বেসরকারি বাস মালিকদের জোট।


তাদের দাপটে রাজপথে বিআরটিসির বাস কোণঠাসা। তাদের সহযোগীরা আবার একবারে বিআরটিসি কিংবা সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই ঘাপটি মেরে বসে আছে। এরা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মতো নিজেদের প্রতিষ্ঠানকে অচল করতে নিত্য নিয়োজিত। আর সহযোগিতার হাত বাড়ায় বাইরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। চরম অব্যবস্থাপনা আর দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত বিআরটিসি নড়েচড়ে ওঠে মাঝেমধ্যে। কিন্তু বোঝা যায় না এই নড়েচড়ে ওঠার পেছনে উদ্দেশ্য কী? অন্তত সরকার পরিবর্তন হলেই গাড়ি কেনার হিড়িক পড়ে যায়। গাড়ির বহর দেখে অনেকেই মনে করে, এই বুঝি প্রতিষ্ঠানটি সাধারণ মানুষের উপকারার্থে আবারও রাজপথে গাড়ি নামাচ্ছে। কিন্তু সব সরকার আমলেই একই দৃশ্য চোখে পড়ে। দেখা যায়, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি আর অবহেলার কারণে গাড়িগুলো একের পর এক গ্যারেজে বন্দি হচ্ছে। আর লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে। গাড়ি গ্যারেজে ঢুকিয়েই ক্ষান্ত হয় না সেসব কর্মচারী-কর্মকর্তা। সেগুলো মেরামত করে চালু করার নামে আবারও চলে লুটপাট। যে যেভাবে পারে প্রতিষ্ঠানটি থেকে লুট করে নিচ্ছে। এ কাজটি উস্কে দিচ্ছেন বেসরকারি বাস মালিকরা। কারণ তাঁরা সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে অন্যায্য ভাড়া আদায় করার প্রয়োজনে সরকারি বাসগুলোকে রাস্তায় চলতে দিতে চান না। সরকারও পরোক্ষ কখনো বা প্রত্যক্ষভাবেই তাঁদেরই সহযোগিতা করে এ কাজে। তারও প্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন কিছুদিন আগে বিআরটিসি বাসকে সীমিত স্টপেজে যাত্রী তোলার সুযোগ দিয়ে বেসরকারি বাসগুলোর জন্য উন্মুক্ত সুবিধা করে দেওয়া হয়েছে। আর এই সুবিধাও তারা গ্রহণ করেছে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করার মাধ্যমে।
এমন দুরবস্থার মধ্যে গত ২৭ মে বিআরটিসির বহরে আরো ৮০টি বাস যুক্ত হয়েছে। তার আগে গত বছর বিআরটিসির বহরে যোগ হয়েছে চীন থেকে আনা ১০০ সিএনজিচালিত বাস। তারপর এসেছে গত এপ্রিল পর্যন্ত ১৭৫টি বাস। ২৫৫টি বাস আনার কাজ এগিয়ে চলছে। ৪৫০টি বাস যোগ হওয়ার কথা অদূর ভবিষ্যতে। সব মিলিয়ে বিআরটিসিতে এখন গাড়ি রয়েছে ৯৭২টি, যার মধ্যে ১৭৭টিই অচল। এতেই বোঝা যায় বিআরটিসির অবস্থাটা কী। তার পরও একের পর এক যোগ হওয়া দেখে কি যাত্রীদের তৃপ্তি পাওয়ার সুযোগ আছে? কারণ যতক্ষণ বিআরটিসিকে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় না করানো হবে ততক্ষণ এটি বোঝা হিসেবেই থাকবে। রোড ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু করতে হবে। বেসরকারি বাস মালিকদের লোকজন যাতে বিআরটিসি বাসের চলার পথে বাধা সৃষ্টি না করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ধীরে ধীরে ছোট গাড়িগুলো কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। বিআরটিসির ভলভো গাড়িগুলো কেন রাস্তায় দেখা যায় না, তদন্তের মাধ্যমে তা বের করে আনতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.