জুবায়ের হত্যাকাণ্ড-১৩ ছাত্রলীগকর্মী অভিযুক্ত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ হত্যা মামলায় ১৩ শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছে ঢাকার আশুলিয়া থানার পুলিশ। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের সবাই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭তম ব্যাচের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের কর্মী।


গত ৮ জানুয়ারি পূর্বশত্রুতার জের ধরে ছাত্রলীগের কর্মীদের মারধরে জোবায়ের গুরুতর আহত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরের দিন ভোরে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মারা যান। এ ব্যাপারে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (নিরাপত্তা) মো. হামিদুর রহমান বাদী হয়ে গত ৯ জানুয়ারি আশুলিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় আশিকুল ইসলাম, রাশেদুল ইসলাম, খান মোহামঞ্চদ রইসসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়। জুবায়েরের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায়।
আশুলিয়া থানার পুলিশ জানায়, মামলা দায়েরের পর প্রায় তিন মাস তদন্ত করে তদন্ত কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহীন শাহ্ পারভেজ গত মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতে অভিযোগপত্র (নম্বর-১৮২) জমা দেন।
অভিযোগপত্রে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের খন্দকার আশিকুল ইসলাম, খান মোহাম্মদ রইস ও মো. জাহিদ হাসান, দর্শন বিভাগের রাশেদুল ইসলাম ও ইসতিয়াক মেহবুব, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মাহাবুব আকরাম এবং প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের মো. নাজমুস সাকিব, ইতিহাস বিভাগের মাজহারুল ইসলাম, দর্শন বিভাগের মো. কামরুজ্জামান, লোকপ্রশাসন বিভাগের নাজমুল হুসেইন, পরিসংখ্যান বিভাগের শফিউল আলম ও অভিনন্দন কুন্ডুু এবং ইতিহাস বিভাগের মাহমুদুল হাসানের (মাসুদ) বিরুদ্ধে জুবায়ের হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আশিক, মাহবুব, জাহিদ ও সাকিব গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালতের নির্দেশে জেলহাজতে রয়েছেন। বাকিরা পলাতক রয়েছেন। এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় অভিযুক্ত আশিকুল, রইস, জাহিদ, রাশেদুল, মেহবুব, আকরাম ও সাকিবকে আজীবনের জন্য এবং মাজহারুল, কামরুজ্জামান, নাজমুল, শফিউল, অভিনন্দন ও মাহমুদুলকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শাহীন শাহ্ পারভেজ জানান, জুবায়ের, আশিক ও রাশেদুল বঙ্গবন্ধু হলে থাকতেন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জুবায়ের আশিককে সারা দিন একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর করেন আর রাশেদুলকে পিটিয়ে পা ভেঙে দেন। এরপর আশিক ও রাশেদুল ওই হল থেকে চলে যেতে বাধ্য হন। তিনি জানান, ওই ঘটনার কারণেই জুবায়েরের প্রতি তাঁদের প্রচণ্ড ক্ষোভ ছিল। সেই ক্ষোভ থেকেই ৮ জানুয়ারি জুবায়েরকে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাইপ দিয়ে দফায় দফায় পেটানো হয়। তদন্ত কর্মকর্তা জানান, তদন্তকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারীসহ ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এসব সাক্ষী ও গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী নিশ্চিত হওয়ার পরই ১৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।প্রতিক্রিয়া: কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, এ অভিযোগপত্রের ব্যাপারে নিহত জুবায়েরের বাবা তোফায়েল আহমেদ গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শুনেছি অভিযোগপত্র দিয়েছে। কিন্তু কাগজপত্র হাতে পাইনি। তাই এখনই কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।’ জুবায়েরের ভাই সিলেটের লিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক আবদুল্লাহ আল মামুন তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল এবং সেখানে যাদের নাম এসেছিল, পুলিশের অভিযোগপত্রে তাই-ই অনুসরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, হত্যার সঙ্গে জড়িত কারও কারও নাম অভিযোগপত্রে আসেনি।

No comments

Powered by Blogger.