ভাষা প্রসঙ্গ-জনগণের বোধগম্য ভাষাতেই আদালত চলুক by আবু সাঈদ খান

আইনগুলো ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি কি যথেষ্ট? এখানে আইনি বাধ্যবাধকতার কোনো বিকল্প নেই। কেননা দেশের একশ্রেণীর শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ইংরেজি জাহিরের প্রবণতা রয়েছে, যা দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে জাত।


তা না হলে যে ভাষার রায় অধিকাংশ বাদী-আসামির কাছে দুর্বোধ্য, সে ভাষায় রায় দেওয়া কেন অব্যাহত থাকবে? আদালতে বাংলাভাষা প্রচলন নিশ্চিত করতে হলে আইনি পদক্ষেপ জরুরি। বাংলাভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭ সংশোধন করে দেওয়ানি কার্যবিধি ১৩৭ ধারা অনুযায়ী আদালতের ভাষা এবং ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৫৮ ধারা সংশোধন করে ফৌজদারি আদালতের ভাষাও নির্ধারণ করতে হবে

সর্বস্তরে বাংলা চালু শুধু আবেগের বিষয় নয়, দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির সঙ্গেও সম্পৃক্ত। গণতান্ত্রিক রীতিপদ্ধতি ও সুশাসন নিশ্চিত করতে হলে অফিস-আদালত ও জনতার ভাষার মধ্যে সাযুজ্য থাকতে হয়। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ষাট বছর ও স্বাধীনতার একচলি্লশ বছর অতিক্রান্ত হলেও জনগণের ভাষা শাসনকার্যের সকল পর্যায়ে গৃহীত হতে পারেনি। কাগজে-কলমে রাষ্ট্রভাষা বাংলা হলেও অফিস-আদালতসহ অনেক ক্ষেত্রেই তা উপেক্ষিত। ইংরেজির আধিপত্য এখনও অটুট। সরকারি অফিসের অনেক অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমও চলছে ইংরেজিতেই। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিনা প্রয়োজনেই ইংরেজি ব্যবহার করছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরে বেড়ে চলেছে ইংরেজি সাইনবোর্ড। কেউ যুক্তি দেখাতে পারেন, দেশে এখন বিদেশিরা আসছে, তাদের জন্য তো ইংরেজি দরকার। সেটি হলে বাংলার পাশে ইংরেজি থাকতে পারে, কিন্তু কেবল ইংরেজি থাকার অর্থ কী? কোনো বিদেশি আমন্ত্রিত নন এমন আমন্ত্রণলিপিও ইংরেজিতে ছাপা হচ্ছে। উচ্চ আদালতে শুনানি, সওয়াল-জবাবের ক্ষেত্রে ইংরেজি-বাংলা মিশেল থাকলেও রায় নিরেট ইংরেজিতেই দেওয়া হচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মোঃ জাকির হোসেন। ২০১০ সালের ১১ এপ্রিল হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর দুই বছরে তিনি ৫০০ মামলার রায় দিয়েছেন এবং সবগুলো বাংলাতে। তিনি ইংরেজিতে কোনো রায় লেখেননি। এর আগে বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকসহ অনেকেই ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় রায় লিখেছেন। বাংলায় রায় লেখার ক্ষেত্রে বিচারপতি শেখ মোঃ জাকির হোসেনের এ উদ্যোগ এক অনন্য উদাহরণ যা কেবল আদালতে নয়, সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনে অবদান রাখবে।
বিচারপতি শেখ মোঃ জাকির হোসেন ও অন্যদের বাংলায় রায় লেখার দৃষ্টান্ত থেকে প্রমাণিত হয় যে, বাংলাভাষায় রায় লেখা সম্ভব। ভাষাগত কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। বাংলাভাষা বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ ভাষা। বিদ্যাসাগর-বঙ্কিম-মাইকেল-রবীন্দ্রনাথ-নজরুল-প্রমথ চৌধুরীর হাতে এ ভাষা সমৃদ্ধ হয়েছে। বাংলাভাষা ও সাহিত্য এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচিত। ভাষার জন্য রক্ত ঝরিয়েছে বাংলার দামাল ছেলেরা। তারপরও এটি আদালতের ভাষা হয়ে উঠছে না কেন?
বাংলাভাষার প্রতি আবেগের দিকটা সংযত রেখেই প্রশ্ন করতে চাই, বাংলাভাষায় রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা কোথায়? হতে পারে; এক. আইন ও আইনের অধিকাংশ বইপত্র ইংরেজি ভাষায় লেখা। দুই. প্রয়োজনীয় পরিভাষা ও বাংলাভাষায় আইন গ্রন্থের অভাব। তিন. এমন যুক্তিও শোনা যায় যে, বাংলায় রায় দিলে তা বিদেশিদের বোধগম্য হবে না এবং বাইরের জার্নালে রেফারেন্স হিসেবে গৃহীত হবে না। প্রশ্ন হলো, আইন-আদালত ও রায়ের মূল লক্ষ্য কি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের কাছে বোধগম্য হওয়া, নাকি বাইরের জার্নাল ও বিদেশিদের দৃষ্টি আকর্ষণ? আমাদের বিচারপতিরা ইংরেজিতে দক্ষ হবেন, বিদেশি জার্নালে সারগর্ভ প্রবন্ধও লিখবেন। প্রয়োজনে তাদের রায় ইংরেজিতে অনুবাদ করে ছাপাবেন। তাতে আপত্তি নেই, বরং সেটি গর্বের বিষয় হতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষের জন্য যা প্রযোজ্য সেই আদালতের শুনানি, সওয়াল-জবাব, রায় ইত্যাদি কেন ইংরেজিতে চলবে? বস্তুত বাংলাভাষা প্রয়োগের বিপক্ষে যে যুক্তিগুলো আছে তার প্রায় সবই ঠুনকো অজুহাত। আইনগুলোকে বাংলায় রূপান্তর করা কঠিন কিছু নয়। ব্রিটিশ আমল থেকে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত আইনের সংখ্যা ৭৫০টি। এগুলোর একাংশ আইন বাংলায় ভাষান্তরিত হয়েছে। অবশিষ্টগুলোকে দ্রুত বাংলাভাষায় রূপান্তর করা দুঃসাধ্য কাজ নয়।
যতক্ষণ তা না হচ্ছে, বাংলায় রায়ের ক্ষেত্রে ইংরেজি আইনগুলো অনুবাদ করে কিংবা ইংরেজিতে উদ্ধৃত করলেও ক্ষতি নেই। ইতিমধ্যে আইনের বেশ কিছু বই বাংলায় রচিত হয়েছে এবং হচ্ছে। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সম্পাদনায় বাংলা আইন শব্দ কোষও রচিত হয়েছে। তবে বাংলায় রায় না দেওয়ার অজুহাতের জবাব দিয়ে গেছেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলা একাডেমীর অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ভাষণে বলেছিলেন, 'আমি ঘোষণা করছি আমাদের হাতে যেদিন ক্ষমতা আসবে, সেদিন থেকেই দেশের সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালু হবে। বাংলাভাষার পণ্ডিতরা পরিভাষা তৈরি করবেন। তারপর বাংলাভাষা চালু হবে, তা হবে না। পরিভাষাবিদরা যত খুুশি গবেষণা করুন। আমরা ক্ষমতা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাভাষা চালু করে দেব। সে বাংলা যদি ভুল হয়, তবে ভুলই চালু হবে। পরে তা সংশোধন করা হবে।' আসলে চালু করাটাই বড় কথা। বাংলাভাষায় কার্যক্রম পরিচালনা ও ভাষার উৎকর্ষতার জন্য গবেষণা দুই-ই পাশাপাশি চলবে। কাজের লাগাম টেনে পরিশুদ্ধতার কোনো মানে হয় না। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, চীন, জাপান, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে তাদের নিজস্ব ভাষায় আদালত চলছে। প্রতিবেশী দেশ নেপালে যদি আদালতের ভাষা নেপালি হতে পারে, তবে বাংলাদেশে বাংলা হতে পারবে না কেন?
সর্বস্তরে বাংলা চালু করার মধ্য দিয়ে কিন্তু ইংরেজি ভাষা শেখার প্রয়োজনীয়তাকে অগ্রাহ্য করা হচ্ছে না। আমি মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি শেখার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষপাতী। কেবল ইংরেজি নয়, অন্যান্য ভাষা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব এবং সেই ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা জরুরি। বিশ্বের সঙ্গে কূটনৈতিক-বাণিজ্যিক-সাংস্কৃতিক যোগাযোগের প্রয়োজনীয় ইংরেজিসহ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ভাষা শেখার জন্য নতুন প্রজন্মকে উৎসাহিত করতে হবে।
দেশের সামগ্রিক স্বার্থেই বাংলাভাষা প্রচলনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্গত কারণেই ১৯৭২-এর সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার পূর্ণাঙ্গ মর্যাদা দেওয়ার পরই সে অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু তা নেওয়া হয়নি। বিলম্বে হলেও ১৯৮৭ সালে 'বাংলাভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭' গৃহীত হয়। সেখানে স্পষ্টত উল্লেখ করা হয় যে, '৩। প্রবর্তন কার্যকর করার ব্যবস্থা : ১. এই আইন প্রবর্তনের পর বাংলাদেশের সর্বত্র তথা সরকারি অফিস, আদালত, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যতীত অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে নথি ও চিঠিপত্র, আইন-আদালতের সওয়াল-জবাব এবং অন্যান্য আইনগত কার্যাবলি অবশ্যই বাংলায় লিখিতে হইবে।' শুধু তাই নয়, ৩(২)-এ বলা হয়, '৩(১) উপধারায় উলি্লখিত কর্মস্থলে যদি কোনো ব্যক্তি বাংলাভাষা ব্যতীত অন্য কোনো ভাষায় আবেদন বা আপিল করেন তাহা হইলে উহা বেআইনি ও অকার্যকর বলিয়া গণ্য হইবে।' কিন্তু এ আইন অনুযায়ী বাংলা আদালতে ভাষা করার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে হাইকোর্টের হাসমত উল্লাহ বনাম আজমিরি বিবি (এবং অন্যান্য/ডিএলআর ৩৩২) মামলার রায়। ওই রায়ে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আদালতের কার্যক্রমকে বিযুক্ত রাখা যেতে পারে। দেওয়ানি কার্যবিধি ১৩৭ ধারা অনুযায়ী, দেওয়ানি কার্যবিধি প্রচলিত হওয়ার সময় সে ভাষা প্রচলিত ছিল, তা আদালতের ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকবে। ওই আইনের ৩ উপধারায় বলা হয়েছে, আদালতের ভাষা ইংরেজি হতে পারে। তবে এর পূর্বে উপধারা ২-এ স্পষ্টত বলা আছে, সরকার আদালতের ভাষা নির্ধারণ করে দিতে পারে। কিন্তু সরকার ১৩৭-এর ২ উপধারা অনুযায়ী আদালতের জন্য কোনো ভাষা নির্ধারণ করেনি এবং বাংলাভাষা প্রচলনে আইনের দেওয়ানি কার্যবিধি ১৩৭ ধারাটি বাতিল বা সংশোধন করা হয়নি। এ যুক্তি তুলে ধরে হাইকোর্ট বিভাগ উলি্লখিত রায়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে যে, আদালতে ইংরেজি ভাষা অব্যাহত রাখতে কোনো বাধা নেই। তবে সেদিন আপিল বিভাগ থেকে রায়টির সঠিকতা যাচাই না করার কারণটি বোধগম্য নয়। সরকার পক্ষ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারত এবং দেওয়ানি কার্যবিধির ১৩৭ ধারা অনুযায়ী আদালতের ভাষা নির্ধারণ করতে পারত, যা আজ পর্যন্ত করা হয়নি।
২০১০ সালের ৮ জুন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদকে জানিয়েছেন, সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনের উদ্দেশ্যে বর্তমান সরকার ইংরেজি ভাষার আইনগুলো বাংলায় অনুবাদ করার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় দেওয়া সহজ হবে। তবে উচ্চ আদালতে ইংরেজিতে রায় প্রদানের কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলেও অধিকাংশ বিচারক ইংরেজিতে রায় দিয়ে থাকেন।
আইনগুলো ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি কি যথেষ্ট? এখানে আইনি বাধ্যবাধকতার কোনো বিকল্প নেই। কেননা দেশের একশ্রেণীর শিক্ষিত মানুষের মধ্যে ইংরেজি জাহিরের প্রবণতা রয়েছে, যা দীর্ঘ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে জাত। তা না হলে যে ভাষার রায় অধিকাংশ বাদী-আসামির কাছে দুর্বোধ্য, সে ভাষায় রায় দেওয়া কেন অব্যাহত থাকবে? আদালতে বাংলাভাষা প্রচলন নিশ্চিত করতে হলে আইনি পদক্ষেপ জরুরি। বাংলাভাষা প্রচলন আইন ১৯৮৭ সংশোধন করে দেওয়ানি কার্যবিধি ১৩৭ ধারা অনুযায়ী আদালতের ভাষা এবং ফৌজদারি কার্যবিধি ৫৫৮ ধারা সংশোধন করে ফৌজদারি আদালতের ভাষাও নির্ধারণ করতে হবে।
কেবল আদালতেই নয়, সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলনের জন্য আইন প্রয়োগের পাশাপাশি মানসিকতার ব্যাপারটাও প্রণিধানযোগ্য। সমাজে অনেক উচ্চশিক্ষিত লোক পাওয়া যাবে, যারা নিদ্বর্িধায় বলেন_ ভালো বাংলা জানেন না। কিন্তু ভালো ইংরেজি না জেনেও জানার ভান করেন। শুরুতেই বলেছি, ইংরেজি জানা দরকার, কিন্তু জাহিরের প্রবণতা সমর্থনযোগ্য নয়, যা এক ধরনের পরমুখী মানসিকতারই পরিচায়ক। এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরতে চাই। একদিন এক ভদ্রলোক দেখা করতে এলেন। ইংরেজিতে কথা বলতে লাগলেন। কবিগুরু চুপচাপ আছেন। তার এই নীরবতা দেখে লোকটি বললেন, দেখুন আমি ভালো বাংলা জানি না, তাই ইংরেজিতে বলছি। জবাবে রবীন্দ্রনাথ বললেন, ওটিও ভালোভাবে শিখেছেন বলে মনে হয় না।
বাংলা না জানা যে লজ্জাজনক সে বোধ তৈরি না হলে সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলন হবে না। ভালো বাংলা না জেনে বাংলাভাষী অন্য ভাষায় পণ্ডিত হতে পারে কি-না এ নিয়ে সংশয় আছে। তাই অন্য ভাষা শিখতে হবে, তবে মাতৃভাষাকে হেয়জ্ঞান করে নয়।
আদালত বা অন্যত্র বাংলাভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচারপতি শেখ মোঃ জাকির হোসেনের মতো অঙ্গীকার প্রয়োজন। আর নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এমন অঙ্গীকারের অনুরণন ঘটলেই কেবল সর্বস্তরে বাংলাভাষা চালু করা সম্ভব।

আবু সাঈদ খান : সাংবাদিক
ask_bangla71@yahoo.com
www.abusayeedkhan.com

No comments

Powered by Blogger.