স্বেচ্ছাশ্রমে ৪০০ সাঁকো-দশের তরে আপনারে....

ইচ্ছাশক্তি আর সেবার মানসিকতা থাকলে অনেক অসাধ্য সাধন করা যায়। এভাবে অনেকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মানবহিতের অনন্য কীর্তিও রচিত হতে পারে। কারও কারও কাছে একটি সাঁকোর গুরুত্ব তেমন বেশি নাও হতে পারে। কিন্তু একটি সাঁকোই গ্রামে শিক্ষার আলো বিস্তার, চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য করা,


যোগাযোগ আয়াসসাধ্য ও বিস্তৃত করার মাধ্যমে গ্রামীণ জনপদের উন্নয়নকে বহুমুখী করতে পারে। এই সত্যটি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার দিগদাইড় গ্রামের জাহিদুল ইসলাম কিশোর বয়সেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। খাল পারাপারে মানুষের ভোগান্তি দেখে তার মধ্যে সাঁকো তৈরির মাধ্যমে এর সমাধান আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়। নিজের ইচ্ছাশক্তি ও জনসেবার মানসিকতা দিয়ে এই কিশোর গ্রামের অন্যান্য কিশোর-যুবককে উদ্বুদ্ধ করেন। সাধারণ মানুষও এই উদ্যোগে বাঁশ ও আনুষঙ্গিক উপকরণ জুগিয়ে সাহায্যের হাত প্রসারিত করে। এভাবে জাহিদুলের নিজের এলাকা দিগদাইড় ও কেশোয়ারপাড়া গ্রামের মধ্যে খালের ওপর স্বেচ্ছাশ্রমে মাত্র ১৫ দিনে তৈরি হয়ে যায় বাঁশের সেতু। সেই থেকে গ্রামের পর গ্রামে জাহিদুলই হয়ে উঠলেন স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো নির্মাণ থেকে রাস্তা বা অন্যান্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের দৃষ্টান্ত। এভাবে মাত্র ১৫ বছরেই জাহিদুল নির্মাণ করেছেন ৪০০টি সেতু ও মাইলের পর মাইল রাস্তা। কোথায় পেলেন জাহিদুল এই অফুরন্ত প্রাণশক্তি? দশের তরে আপনারে বিলিয়ে দেওয়ার এই মানসিকতা আজকের যুগে বিরল। জাহিদুলের মতো হাতেগোনা কিছু মানুষ এখনও সমাজে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলেই আমরা মানুষ হিসেবে বড়াই করার উপমা খুঁজে পাই।
জাহিদুল এখন ৩০ বছরের পরিণত যুবক। স্ত্রী, সন্তান থাকার পরও নিজের সামান্য উপার্জন দিয়ে তিনি তাদের ভরণপোষণ করে পরের বা সমাজের হিতে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পেরেছেন, সেটাও কম কথা নয়। পরিবারে তিনি যেমন একজন দায়িত্ববান স্বামী ও পিতা, তেমনি সমাজেও তিনি একজন জনহিতৈষী ব্যক্তি হিসেবে সমান দায়িত্ববান। এভাবেই জাহিদুল এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি থেকে জনপ্রতিনিধি পর্যন্ত সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন। এখানে তিনি আপন মহিমায় দেদীপ্যমান। মানবহিতৈষী জাহিদুলকে সশ্রদ্ধ সালাম।

No comments

Powered by Blogger.