পাহাড়ে শান্তি ও স্থিতি ফিরিয়ে আনুন-রামগড়ে উদ্বেগজনক ঘটনা

খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় আদিবাসী ও বাঙালিদের মধ্যকার সংঘর্ষে চার ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। রোববার আবুল কাশেম নামের এক ব্যক্তি আট-নয়জন শ্রমিক নিয়ে শণখোলাপাড়ার একটি বিরোধপূর্ণ টিলায় মাটি কাটতে যান। সেখানে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আদিবাসীরা তাঁদের ওপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে।


এতে বেশ কয়েকজন শ্রমিক গুরুতর আহত হন। পরে তাঁদের মধ্যে তিনজন রোববার এবং একজন সোমবার হাসপাতালে মারা যান। এই ঘটনার পর বাঙালিরা জোট বেঁধে আদিবাসীদের ওপর হামলা চালায় এবং তাদের ঘরবাড়ি লুট করে ও আগুন জ্বালিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসন উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে। ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও দোষী ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এই হত্যা, লুট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা যারাই ঘটাক না কেন, আমরা তাদের নিন্দা জানাই এবং শাস্তি দাবি করছি। কিছুদিন ধরেই পার্বত্য চট্টগ্রামে নানা অঘটন ঘটে চলেছে। কয়েক দিন আগে রাঙামাটিতে বাঙালিদের হামলায় দুজন আদিবাসীর মৃত্যুর পর রামগড়ের ঘটনা কিসের ইঙ্গিত দেয়? এভাবেই কি পাহাড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ চলতে থাকবে? অকাতরে নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষ জীবন দেবে? হঠাৎ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন অশান্ত হয়ে উঠল? এর পেছনে কোনো মহলের উসকানি আছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। দুই দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘাত অবসানের লক্ষ্যেই ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চুক্তি সই হয়েছিল। কিন্তু ১৩ বছর পরও সেখানে শান্তি না আসায় জনমনে উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে সব গোলযোগের মূলে রয়েছে ভূমির মালিকানা বিরোধ। গত রোববারের সংঘর্ষও হয়েছে ভূমি নিয়ে। সেখানে বিরোধপূর্ণ টিলায় আবাদ করতে গিয়েই শ্রমিকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এর প্রতিক্রিয়ায় কয়েকটি গ্রামে হামলা চালিয়ে অনেক আদিবাসীর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর দায় কে নেবে? অতীতে দেখা গেছে, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, লুটপাট হয়েছে। এবার প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। এতে প্রমাণিত হয়, প্রশাসনের সহায়তা না পেলে দুষ্কৃতকারীরা সুবিধা করতে পারে না।
উপদ্রুত এলাকায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি সামাজিক উদ্যোগও নিতে হবে, যাতে সেখানে বসবাসরত আদিবাসী ও বাঙালিদের মধ্যে সৌহার্দ্যের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। প্রশাসন দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে যে শান্তি বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। এ ধরনের বৈঠক সব সময়ই আয়োজন করা প্রয়োজন। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে হবে সততা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে। সর্বোপরি পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতি আনতে হলে ভূমির মালিকানা নিয়ে যে বিরোধ অছে, তা নিষ্পত্তি করতে হবে অনতিবিলম্বে, অন্যথায় সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা থেকেই যাবে।

No comments

Powered by Blogger.