পাঁচ ভিআইপির ঢাকা সফর-বাংলাদেশের গুরুত্ব আরো বাড়বে

আজ থেকে শুরু করে আগামী ৬ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ সফর করবেন পাঁচ দেশ ও জোটের গুরুত্বপূর্ণ পাঁচ ব্যক্তি। তাঁরা হচ্ছেন, বেলারুশের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই এফ আলেনিক, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোট ডি-৮-এর মহাসচিব ড. উইডি এ প্রেটিকটো, জাপানের উপপ্রধানমন্ত্রী কাতসুয়া ওকাদা, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ও ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।


পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন অনেক উজ্জ্বল। পাঁচ ভিআইপির বাংলাদেশ সফরকে ইতিবাচক বলেই মনে করা হচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের এই সফরে ঢাকায় বাংলাদেশ সরকার ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিষয়াদিসহ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব ইস্যু পর্যালোচনা করবেন। সম্ভাব্য বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) এবং সামরিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদারের বিষয়েও আলোচনা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। প্রণব মুখোপাধ্যায় ঢাকা আসছেন রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষের সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সৌজন্য সাক্ষাৎসূচি চূড়ান্ত হয়েছে। এ সফরে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে। অল্পদিনের ব্যবধানে পাঁচ ভিআইপির সফরকে কূটনৈতিক মহলে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। কারণ আগের নেতিবাচক ভাবমূর্তি কাটিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এখন আগের চেয়ে অনেক উজ্জ্বল ও ইতিবাচক। এলডিসিতে এখন বাংলাদেশ পালন করছে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা। একটি উদার মুসলিম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পালন করেছে প্রশংসনীয় ভূমিকা। এ কার্যক্রমে বাংলাদেশ এখন সর্বোচ্চসংখ্যক সেনাসদস্যের অংশগ্রহণকারী দেশ। বিশ্বে ৬৫টি মিশনে মোট প্রায় এক লাখ শান্তিরক্ষীর মধ্যে বাংলাদেশের সৈন্যসংখ্যা ১০ হাজারের বেশি। ৪৫টি মিশনে অংশগ্রহণকারী প্রতি ১০ জনে বাংলাদেশের একজন সৈনিক সক্রিয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পর সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ কমিটি (অর্থনীতি বিষয়ক) ও বিশ্ব শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের জন্য গঠিত পিস বিল্ডিং কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সিকি শতক পরিমাণ বেশি কমিটি ও সংস্থার সক্রিয় দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ। এ মুহূর্তে বাংলাদেশ ৬৫টি কমিটির কো-চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সদস্যপদে সক্রিয় রয়েছে। জাতিসংঘের বিভিন্ন কার্যক্রমে বাংলাদেশের নারী উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতি, আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে সরকারের বিপুল সাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর 'রোল মডেল' হিসেবে কাজ করছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন কিছুদিন আগে বাংলাদেশ সফর করেছেন। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের কর্মকাণ্ড যথাযথভাবে উপস্থাপনের কারণেই বাংলাদেশ গত দুই বছর পরপর দুটি অ্যাওয়ার্ড- এমডিজি অ্যাওয়ার্ড ও সাউথ-সাউথ পুরস্কার লাভ করে।
ভৌগোলিক কারণেও বাংলাদেশের গুরুত্ব রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে এরই মধ্যে পরিবর্তনের বাতাস লেগেছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, বর্তমান শতাব্দীতে বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে এশিয়া। এই নেতৃত্বে এগিয়ে থাকবে দক্ষিণ এশিয়া। বাংলাদেশ থাকবে দক্ষিণ এশিয়ার নেতৃত্বে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে, তা ধরে রাখতে হবে। এই উজ্জ্বল ভাবমূর্তি আগামী দিনে বিশ্বনেতৃত্বে বাংলাদেশের অবস্থান আরো দৃঢ় করবে।

No comments

Powered by Blogger.