ইলিয়াস ইস্যুতে শরিকরা আ. লীগ থেকে দূরে by পাভেল হায়দার চৌধুরী

বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ ইস্যুতে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মহাজোটের শরিকদের পাশে পাচ্ছে না। চলতি মাসের ২২ থেকে ২৪ এপ্রিল দেশব্যাপী তিন দিনের হরতালে আওয়ামী লীগের পাশে ছিল না মহাজোটের শরিকরা।


আওয়ামী লীগ তার সহযোগী সংগঠনগুলো নিয়েই বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলার চেষ্টা করছে। ভবিষ্যতেও রাজপথে জোটের শরিকদের নিয়ে একসঙ্গে থাকার ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না।
আওয়ামী লীগ বলছে, জোটের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি নেই। আর বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় এখনো আটঘাট বেঁধে রাজপথে নামা হয়নি। আওয়ামী লীগ মাত্র দুটি প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এ জন্যই জোটের শরিকরাও মাঠে সঙ্গী হিসেবে নেই।
মহাজোটের নেতারা মনে করেন, ইলিয়াস আলীকে খুঁজে বের করা জোটের অন্যতম দায়িত্ব। এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন ১৪ দল ও মহাজোটের নেতারা। তাই অন্তত এ ইস্যুতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতে চায় না তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জোটের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, রাজনৈতিক নেতাদের 'গুম' বা 'নিখোঁজ' সংস্কৃতির সঙ্গে তাঁদের দ্বিমত রয়েছে। এ নিয়ে শঙ্কিত তাঁরাও।
১৪ দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে যে ইস্যুতে বিএনপি কর্মসূচি দিচ্ছে তাতে তাঁদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে। তাঁরাও ইলিয়াস আলীকে জীবিত ফেরত পাওয়ার পক্ষে। বিভিন্ন ইস্যু এবং আওয়ামী লীগের 'একলা চলো' নীতির কারণেও শরিকরা কিছুটা দূরে সরে গেছে। আর মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি দুই বছর ধরেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব রেখে পথ চলছে।
সর্বশেষ যুদ্ধাপরাধের বিচার 'বানচালে'র প্রতিবাদে ১৪ দলের কর্মসূচিতে জাতীয় পার্টির সমর্থন থাকলেও তাদের দলের কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এরশাদের জাতীয় পার্টি অনেক আগে থেকেই গাঁটছড়া বাঁধছে না আওয়ামী লীগের সঙ্গে। তারা মহাজোট ছাড়া একা নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে অনেক আগেই। আর চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৪ দলের নেতারা আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে একটি বৈঠক করে সাড়া ফেলে দেয় রাজনৈতিক অঙ্গনে।
১৪ দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঐক্য হয়েছিল ২৩ দফার ভিত্তিতে। জাতীয় পার্টির সঙ্গেও নির্বাচনী ঐক্য হয়েছিল কয়েকটি সুনির্দিষ্ট শর্তে। সরকারের সাড়ে তিন বছর পরেও তাদের অনেক চাওয়া-পাওয়া পূরণ হয়নি। তাই শরিকরা ক্ষুব্ধ।
শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, 'দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতেও আওয়ামী লীগ আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি।' জোটভিত্তিক কর্মসূচির মধ্যে সর্বশেষ গত মাসের ৯ মার্চ জেলায় জেলায় এবং বিরোধী দলের মহাসমাবেশের আগের দিন ১১ মার্চ রাজধানীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল রাজধানীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের চেষ্টার প্রতিবাদে ক্ষমতাসীন জোটের নেতারা মানববন্ধনে ছিলেন।
জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রাজপথে থাকা না থাকা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়নি। আমরা আলোচনা করতে চেয়েছি। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি।' আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই অনেক ক্ষেত্রে একলা চলো নীতি অনুসরণ করে আসছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের যেকোনো ইস্যুতে আমরা মাঠে থাকব।' তবে ইলিয়াস আলীকে উদ্ধারে সরকারকে আরো তৎপর হতে পরামর্শ দেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, হরতালসহ বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলায় আটঘাট বেঁধে আওয়ামী লীগ রাজপথে নামেনি। সে জন্য শরিকদের উপস্থিতি নেই। তা ছাড়া কোনো ভুল বোঝাবুঝি নেই।
জাসদের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, বিএনপির ইলিয়াস আলী গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তাঁকে খুঁজে বের করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। ক্রসফায়ার, এনকাউন্টারের ধারাবাহিকতায় এ গুম দাবি করে তিনি বলেন, বিএনপিরও ঠিক হবে না এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে জ্বালাও-পোড়াও করা। তেমনি সরকারেরও ঠিক হবে না তাদের হাতে ইস্যু তুলে দেওয়া।

No comments

Powered by Blogger.