পল্লী বিদ্যুতের যন্ত্রণা! by আসিফুল হাসনাত ছিদ্দিকী

পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকরা গ্রামে বিদ্যুতের দেখা পান মাঝে মধ্যে। ভেলকিবাজির বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নভাবে পাওয়া গেলেও বিদ্যুৎ বিল দিতে হয় নিরবচ্ছিন্নভাবে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় শতভাগ বিল আদায় করলেও বিদ্যুৎ দিচ্ছে না তার সামান্য অংশ। ফলে সেই বিদ্যুৎ কোনো কাজে আসছে না গ্রামবাসীর।


আধঘণ্টা স্থায়ী বিদ্যুতে সেচ পাম্প চলে না, চালের কল চলে না, বরফ মিল চলে না, ফ্যান ঘুরে না, টিভি, ফ্রিজ চালানো অনেক আগেই বন্ধ। এমনকি মোবাইল নেটওয়ার্ক পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। কক্সবাজারের চকরিয়ার কাকারা গ্রামের নিত্যদিনের ভোগান্তির চিত্র এটি। শুধু কাকারা নয়, জেলার অধীন পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের একই চিত্র। পল্লী বিদ্যুতের ভেলকিবাজির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ গ্রামবাসী এর নাম দিয়েছে 'ফলা বিদ্যুৎ' অর্থাৎ পাগলা বিদ্যুৎ।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকদের নূ্যনতম বিল হচ্ছে মাসে ৯৮ টাকা। বিদ্যুৎ ব্যবহার করুন আর না করুন এই বিল আপনাকে পরিশোধ করতে হবে। প্রতিদিন চার ঘণ্টা বিদ্যুৎ ব্যবহারে নূ্যনতম বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎকে। সে সঙ্গে লোডশেডিংয়ের কারণে প্রতি মাসে আড়াইশ' টাকার মোমবাতি জ্বালাতে হচ্ছে। কেরোসিন জ্বালাতে হচ্ছে আরও দুইশ' টাকার, যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়া বাবদ আরও বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হচ্ছে। গ্রাহকদের নূ্যনতম বিদ্যুৎ বিল ছাড়াও প্রতিমাসে এই বিপুল পরিমাণ টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে। গ্রাহকরা এখন উভয়মুখী সমস্যায় পড়েছেন। শুধু লোডশেডিংয়ের কারণে এই বিপুল টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে গ্রাহকদের। এর দায়ভার অবশ্যই নিতে হবে পল্লী বিদ্যুৎকে।
গ্রামের মানুষরা খুব বেশি আয়কর দেন না, কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই গ্রাম এলাকায়, বড় রাজনীতিবিদও গ্রামে থাকেন না। এসব যুক্তিতে গ্রাম নিয়ে, গ্রামের মানুষের দুঃখকষ্ট নিয়ে ভাবার সময় যেন কারও নেই। গ্রামের মানুষের প্রভাব না থাকায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা, বিশেষ করে পল্লী বিদ্যুতের কর্তারা নাকে তেল দিয়ে ঘুমান। তবে সরকারের কোনো উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, মন্ত্রী-এমপি গ্রামের কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলে বিদ্যুতের পরিস্থিতি রাতারাতি পাল্টে যায়, আকাশ থেকে নেমে আসে বিদ্যুৎ! থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। মন্ত্রী এলাকা ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গে আকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎও তার সঙ্গে চলে যায়। ফলে মন্ত্রী-এমপিদেরও এই সময়ে বোঝার কোনো উপায় রাখেন না বিদ্যুৎ কর্তারা। যদিও এসব রাজনীতিবিদের কেউই খুব একটা গ্রামে আসেন না।
শহরে একটু লোডশেডিং বেশি হলেই হইচই শুরু হয়ে যায়, সংবাদপত্রগুলো প্রধান শিরোনাম দিয়ে অনবরত খবর প্রকাশ করতে থাকে। ফলে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই গ্রামের বিদ্যুৎ কেটে শহর আলোকিত করার কাজে ব্যস্ত থাকে। পক্ষান্তরে গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ মাসের পর মাস বন্ধ থাকলেও সিঙ্গেল কলাম প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।
আগামী এক বছর গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হোক। এতে আমরা বিদ্যুতের জন্য আর মুখাপেক্ষী থাকব না। পুরনো যুগে ফিরে যাব। কেরোসিনের লণ্ঠন বাতি দিয়ে বসবাস করব, সেচ পাম্প চলবে ডিজেল দিয়ে, চালের মিল চলবে পেট্রোলে, টিভি চলবে ব্যাটারিতে। যখনই বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতি হবে এবং শহর আলোকিত করার পর গ্রামে সরবরাহের মতো বিদ্যুৎ থাকবে, তখনই আমাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হোক। এই প্রতিবাদ সরকারের বিরুদ্ধে নয়, আমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে। কেননা আমাদের সবচেয়ে বড় দোষ আমরা গ্রামের বাসিন্দা।
hasnat.cu@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.