স্বীকার করলেই চলবে না, ব্যবস্থা নিন-আইনশৃঙ্খলার অবনতি

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন শেষ পর্যন্ত স্বীকার করলেন যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ‘কিছুটা’ অবনতি হয়েছে। কিন্তু ঢাকা মহানগরের ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক শুক্রবার ভরদুপুরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে যেভাবে জনসমক্ষে খুন হলেন, তাতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ‘কিছুটা’ নয়, গুরুতরভাবে ঘটেছে।


এই হত্যাকাণ্ডের মাত্র এক সপ্তাহ আগে এই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সন্ত্রাসীদের গুলিতে আহত হয়েছেন। সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচনে একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে দুজনই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অর্থাৎ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যকার বিরোধের জের ধরে হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে। এই সন্দেহ সত্য কি না তা তদন্তের বিষয়, কিন্তু আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিরোধে খুনোখুনির ঘটনা যে গত দুই বছরে কম ঘটেনি, তা সবাই কমবেশি দেখছে।
এ ছাড়া খুনখারাবির মাত্রা যে উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে, তা গত দুই সপ্তাহের সংবাদমাধ্যমের দিকে তাকালেই দেখা যায়। গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত শুধু ঢাকা মহানগর ও তার আশপাশ এলাকায় অনেক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে; তার কয়েকটি: পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে খুন হয়েছেন স্বর্ণ ব্যবসায়ী আবুল কালাম। ভাড়াটে খুনিদের গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছেন জাতীয় অন্ধ সংস্থার মহাসচিব খলিলুর রহমান। মিরপুরের শ্যাওড়াপাড়ার এক ফ্ল্যাটে হাত-পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় পাওয়া গেছে রমনা থানা মসজিদের ইমাম হাফেজ মোহাম্মদ ইসহাকের লাশ। বংশালে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হয়েছেন সাকিব আনাম মাসুম নামের এক যুবক। গেন্ডারিয়ায় ১২ বছরের এক শিশুকে হাত-পা বেঁধে ড্রামের পানিতে চুবিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্ত, চেষ্টা করেছে তার বাবাকে জবাই করে হত্যা করার। কামরাঙ্গীর চরে রড-সিমেন্টের এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করে তাঁর লাশ ঝুলিয়ে রেখেছে হত্যাকারীরা। ইন্দিরা রোডের এক বাসায় খুন হয়েছেন মা ও ছেলে। গাজীপুরে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়েছেন ব্যবসায়ী শরীফ হোসেন। সিরাজদিখানে ছয় বছরের শিশুর চোখ তুলে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
প্রায় লাগামহীন অপরাধপ্রবণতা, বিশেষ করে হত্যাকাণ্ডের মতো চূড়ান্ত অপরাধ ঘটানোর ঝোঁক কী কী কারণে বাড়ছে, তা কি ভেবে দেখা হচ্ছে? মানুষ হত্যা করা যেন কোনো ব্যাপারই নয়—কিছু মানুষের মনে এমন ধারণা কীভাবে সৃষ্টি হতে পারে? যখন হত্যাকারীদের বিচার হয় না, হত্যা করে দিব্যি পার পাওয়া যায়, তখন সামান্য কারণেও মানুষের খুন করতে বাধে না। সাম্প্রতিক কয়েকটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ধরন দেখে মনে হচ্ছে, ভাড়াটে খুনি খুব সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। আইন প্রয়োগে চরম শিথিলতার পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনো সমাজে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
নিজ দলের নেতা খুন হয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে—স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশ্চয়ই এ রকম মনে করেন না। অবনতিটা ‘কিছুটা’ নয়, গুরুতর। এভাবে আর চলতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.