বর্তমান ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বদলাতে হবে-লোকসানি বিমান

পর পর দুটি আর্থিক বছরে লাভের পর আবার দুই বছর ধরে লোকসান। এই অবস্থা বাংলাদেশ বিমানের। যে প্রতিষ্ঠান লাভ করতে পারে সেটি যখন লোকসানে যায়, তখন বুঝতে হবে যে প্রতিষ্ঠানটি সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না, ব্যবস্থাপনায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের অদক্ষতার বিষয়টি তাতে স্পষ্ট হয়।


সঠিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হলে বিমান যে লাভজনক প্রতিষ্ঠান হতে পারে, তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। বাণিজ্যিকভাবে পরিচালনা করার জন্য বিমানকে তখন কোম্পানিতে পরিণত করা হয়। এর পরের দুই অর্থবছর (২০০৭-০৮ ও ২০০৮-০৯) লাভের পরিমাণ ছিল প্রথম বছর প্রায় ২০ কোটি টাকা ও পরের বছর ৬৫ কোটি টাকারও বেশি। আর ২০০৯-১০ এই এক অর্থবছরেই লোকসানের পরিমাণ ৮০ কোটি টাকার বেশি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা ছাড়ার সময় যেখানে বিমানের তহবিলে ছিল প্রায় ৫০০ কোটি টাকা, সেই তহবিলও শেষ হয়েছে এরই মধ্যে।
এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক সমস্যায় পড়েছে বিমান। উড়োজাহাজ ভাড়া করা নিয়ে সংসদীয় কমিটি ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বিরোধ, বিমানমন্ত্রীর সঙ্গে বিমান পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরোধ, পাইলটদের ধর্মঘট—এই ঘটনাগুলো বিমানের বাস্তব অবস্থাকে তুলে ধরছে। পাইলট ধর্মঘট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিমান এখন যেভাবে চলছে, তাকে চলা বলা যায় না। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তো নয়ই।
বিমান একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। একে বাণিজ্যিকভাবেই পরিচালনা করা উচিত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সে উদ্যোগ নেওয়ার কারণেই বিমান লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুরোনো ব্যবস্থাপনার ধারায় ফিরে যাওয়ায় আবার লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয় বিমান। আসলে অদক্ষ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি এক জটিল আমলাতান্ত্রিক চক্রে বাঁধা পড়েছে বিমান। কোম্পানি হওয়ার পর বিমান পরিচালিত হচ্ছে একটি পরিচালনা পরিষদের মাধ্যমে। এই পরিষদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের। এতে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের সুযোগ কমেছে ঠিকই, কিন্তু একদিকে বিমানের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কর্তৃপক্ষ আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং অন্যদিকে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়—সব মিলিয়ে বিমান যে পাকে গিয়ে পড়েছে, তা থেকে উদ্ধার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিমানকে ‘বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বর্তমান সরকার করেছে তার উল্টো কাজ। এত আমলাতান্ত্রিক চক্রের মধ্যে বাঁধা থেকে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হতে পারে না। সামরিক-বেসামরিক আমলাদের দিয়েও একটি আধুনিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। বর্তমান যুগে যেকোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যেমন একজন দক্ষ প্রধান নির্বাহীর অধীনে আধুনিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়, বিমানকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলেও সে পথ বেছে নিতে হবে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি বিমানকে লাভজনক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে চায়, নাকি বছর বছর কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে চায়।

No comments

Powered by Blogger.