সময়ের প্রতিবিম্ব-একটি ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন’ ও কমিশনের মূল্যায়ন by এবিএম মূসা

একটি স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে এত আলোচনা, আলোড়ন, উৎসাহ, আশঙ্কা আর উদ্বেগ আগে কখনো পরিলক্ষিত হয়নি। এর কারণ অনুসন্ধান ও অনুধাবন করতে হবে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে। ভবিষ্যতের রাজনীতির কোনো বার্তাও কি রয়েছে এই নির্বাচনী ফলাফলে, এ কথাও ভাবতে হবে।


এই ভাবনার প্রতিফলনে এমনটিও হয়তো বলা যায়, একটি ‘মধ্যবর্তী জাতীয় নির্বাচন’ হয়েছে। সদ্যসমাপ্ত স্থানীয় নির্বাচনটি তিন বছর পরের জাতীয় নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেছে কি? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন সীমিত পর্যায়ের নির্বাচনটিতে দায়িত্ব কতখানি স্বচ্ছতা বা দৃঢ়তার সঙ্গে পালন করতে পেরেছে, জনগণ ও সব রাজনৈতিক দলের আস্থা কতখানি অর্জন করতে পেরেছে।
প্রথমেই বিশ্লেষণ শুরু করছি, অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন’ বলতে কী বোঝায়, সেই ব্যাখ্যার মাধ্যমে। স্থানীয় নির্বাচনকে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের ফলাফলের আগাম আভাস মনে করা যায় কি না। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা হ্রাস-বৃদ্ধি যাচাইয়ের একটি অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা আছে। সেই নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ওপর প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ অথবা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কোনো আশঙ্কা থাকে না। কারণ তা জাতীয় সাধারণ নির্বাচন নয়, এই নির্বাচনগুলোর মাধ্যমে প্রধানত অঙ্গরাজ্যের বিধানসভা, কংগ্রেস ও সিনেটের সদস্য নির্বাচন করা হয়। সেই নির্বাচনের ফলাফল যাচাই করে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট তাঁর চার বছরের শাসনের মেয়দ শেষ হওয়ার আগেই নিজের ও নিজের দল সম্পর্কে একটি ধারণা পান। অনুমান করতে পারেন পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনে নিজের অথবা তাঁর দলের অন্য কোনো প্রার্থীর ভাগ্যে কী ঘটতে পারে। এর একটি ইতিবাচক দিক হচ্ছে, দুই বছর যদি কোনো ভুল পদক্ষেপের কারণে জনপ্রিয়তা হারিয়ে থাকেন, তবে তা পুনরুদ্ধারে আরও দুই বছর সময় পাবেন। হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পাওয়ার জন্য পার হয়ে যাওয়া সময়ের ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করার সুযোগ পাবেন।
যুক্তরাজ্যে কোনো দলীয় শাসনকালের মধ্যবর্তী সময়, সাধারণত জাতীয় নির্বাচনে তিন বছর পরবর্তী মেয়াদকালে স্থানীয় বার কাউন্সিল, তথা পৌর ও জেলা পরিষদ এলাকাভিত্তিক নির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনের ফলাফলও জাতীয় সরকারের পতন ঘটায় না, কিন্তু জনগণ তথা ভোটার তাদের কার্যাবলির মূল্যায়ন করে। বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে অন্য ধরনের মধ্যবর্তী জাতীয় সাধারণ নির্বাচন হয়। তবে তা হয় যখন জনগণ শাসক সরকারের মেয়াদ পূরণের আগেই ক্ষমতা ত্যাগে বাধ্য হলে অথবা গণ-অভ্যুত্থান ও আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ যখন সরকারের পতন ঘটায়। আবার এমনটিও হয়, নির্ধারিত সময়ের শাসনকাল তথা মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই সরকার স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে জনপ্রিয়তা যাচাই করে।
বাংলাদেশে অতীতে যা কখনো পরিলক্ষিত হয়নি কিন্তু এবার হয়েছে, তা হলো, ক্ষমতাসীন সরকারি দল, প্রধান বিরোধী দল ও রাজনৈতিক গতিধারা পর্যবেক্ষকেরা উপরিউক্ত আলোচিত পরিস্থিতির আলোকে পৌর নির্বাচনের ফলাফল যাচাই করছেন। উল্লেখ্য, নির্বাচনটি অনুষ্ঠানের কিছুদিন আগে বিরোধী দল ‘মধ্যবর্তী নির্বাচনের’ দাবি জানিয়েছিল। তাদের এই দাবি পূরণের কোনো নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি অথবা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই। সুইজারল্যান্ডের মতো দেশে একটি বিকল্প ব্যবস্থা আছে। সেই দেশের সংবিধানে ‘রি-কল’ ব্যবস্থা রয়েছে। নির্বাচক তথা ভোটাররা গণদরখাস্ত করে শাসন পরিষদ অথবা কোনো নির্দিষ্ট প্রতিনিধিদের দাবি অনুসরণে নতুন করে রায় নেওয়ার দাবি জানাতে পারেন। সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের দেশে এমন সাংবিধানিক ব্যবস্থা বাস্তবসম্মত নয়। তা বলে কি এসব দেশে একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তাদের ক্ষমতাচ্যুত করার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অথবা নিয়মতান্ত্রিক কোনো প্রক্রিয়ার কথা চিন্তা করা যায় না? তাদের শাসনকাজে বিফলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতিজনিত দুঃশাসনের অবসানের জন্য কি পূর্ণ পাঁচ বছর সহ্য করতে হবে? সরকারপ্রধানের আবেদনে সাড়া দিয়ে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে? আমাদের দেশের সংবিধানের বিধান অনুসরণে এই প্রশ্নের উত্তর ‘হ্যাঁ’।
তার পরও প্রশ্ন করতে হয়, কোনো শাসন যখন জনগণের একেবারে অসহ্য হয়ে ওঠে, তখন যদি গণ-অভ্যুত্থান হয়, তবে সে হলো ভিন্ন কথা। নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক কোনো ক্ষমতাসীন সরকারের অপশাসন অথবা ব্যর্থতার বিরুদ্ধে মিছিল-সমাবেশ ছাড়া ক্ষোভ অথবা সামান্যতম অনাস্থা প্রকাশের অন্য কোনো মাধ্যম আছে কি? অনেকের মতে আছে, আমাদের দেশে সেই প্রকাশ পদ্ধতি হচ্ছে স্থানীয় পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত জনগণ সেই ক্ষোভ অথবা অসন্তোষ ও আস্থাহীনতা প্রকাশের পদ্ধতি প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত ছিল। বহিঃপ্রকাশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ছোটখাটো আকারের সেসব নির্বাচন ‘ঝুলিয়ে’ রাখা হয়েছে। অবশ্য শাসনকালের আদি পর্যায়ে উপজেলা নির্বাচন হয়েছে। তবে তখন সরকারের কার্যক্রম বিচারের সময় হয়নি। তাদের হানিমুন পিরিয়ড চলছিল, সরকারি জীবনারম্ভের মধুচন্দ্রিমা যাপন করছিল তারা। তারপর আর স্থানীয় বা আঞ্চলিক পর্যায়ের সব নির্বাচন নানা টালবাহানা করে অথবা বিনা অজুহাতে অনুষ্ঠানে সরকারের পরোক্ষ অনিচ্ছার প্রকাশ ঘটেছে। বিশেষ করে, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের টালবাহানা, তাদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে অনীহা প্রকাশ তাদের জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটার পারদের ওঠানামা নিয়ে আশঙ্কার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। যা হোক শেষ পর্যন্ত অন্তত একটি স্থানীয় সংস্থা পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। অতঃপর ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ ও ঢাকার সিটি করপোরেশন, সর্বোপরি ১৯টি নির্বাচনী মামলার ফয়সালা হয়ে অন্তত কয়েকটিতে উপনির্বাচন নিকট অথবা দূর ভবিষ্যতে এই সরকারের মেয়াদকালেই হতে হবে।
এসব কারণে প্রতিবেদনটি শুরু করেছিলাম পৌর নির্বাচনের আলোকে ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন’ নিয়ে। আমার বর্ণিত স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও জাতীয় সংসদের সম্ভাব্য কয়েকটি উপনির্বাচন কি পরোক্ষ ও সীমিত আকারের ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন’ হয়েছে, এমনটি বিবেচিত হবে? এই নির্বাচনে কি বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তার ব্যারোমিটারের পারদের ওঠানামা পরিলক্ষিত হয়েছে? বর্তমান সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদান্তের ফাইনাল পরীক্ষার আগের একটি টেস্ট পরীক্ষা বলা যায়? দেশের আপামর জনসাধারণের অধিকাংশই পৌর নির্বাচনী ফলাফল বিচার-বিবেচনা করে এমনটিই ভাবছে। আমার প্রবাসী বন্ধু আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী আমাকে টেলিফোনে প্রশ্নটি করেছিলেন। জানতে চেয়েছিলেন, পৌর নির্বাচনী ফলাফল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে কী বার্তা পাঠিয়েছে। উত্তরে বলেছিলাম, রাজনৈতিক দলগুলো অরাজনৈতিক নির্বাচনকে রাজনৈতিক ছাপ দিয়ে বার্তা পাঠানোর ধারণা সৃষ্টি করেছে। তাই এবারের পৌর নির্বাচন দুই দলের মর্যাদার লড়াই নয়, ভবিষ্যতের জাতীয় সংসদের চূড়ান্ত নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রথম রাউন্ড মনে করা হচ্ছে, সবাই কে জিতেছে বা হেরেছে নয়, তিন বছর পর কে জিতবে-হারবে সেই হিসাব-নিকাশ করছে। জনপ্রিয়তার হ্রাসবৃদ্ধি ওজন করছে, ওজনের পাল্লা কোন দিকে ঝুঁকেছে, তা জানিয়ে দিয়েছেও।
আমি সেই হিসাব-নিকাশ এখনি করছি না। বস্তুত নানা অজুহাতে অথবা সংগত কারণে আসন্ন কয়েকটি উপনির্বাচন যদি পেছাতে না থাকে, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন যদি যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়, তবে তখনই সেসবের ফলাফল যাচাই করে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের জনপ্রিয়তা যাচাই করা যাবে। তিন বছর পরের অবস্থা সম্পর্কে মোটামুটি সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করা যাবে। এখন বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, স্থানীয় নির্বাচনের ফলাফল, বিক্ষিপ্ত জয়-পরাজয় সরকার বা বিরোধী দলের অবস্থানের ওপর কি রাজনৈতিক প্রভাব ফেলবে? হয়তো সাময়িক প্রভাব পড়বে জাতীয় পর্যায়ে জনগণের ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনায় কিন্তু এসব নির্বাচনের সামগ্রিক ফলাফল যা-ই হোক, আপাতত সরকারের পতন ঘটাবে না। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকার-সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয় অথবা ভোলার উপনির্বাচনে বিজয় দেশের সামগ্রিক রাজনীতিকে প্রভাবান্বিত করেনি। কিন্তু বিরোধী দলের কর্মী ও সমর্থকদের মনোবল বাড়িয়েছে। গত সাধারণ নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর বিপর্যস্ত দলটিকে উজ্জীবিত করবে। তবে আসল জিজ্ঞাসা হচ্ছে, পৌর নির্বাচনে প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফল যে সন্তোষজনক হয়নি, তা কি ক্ষমতাসীন দল স্বীকার করে নিয়েছে? যদি উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয় তবে কেন হয়নি তা আত্মবিশ্লেষণের মাধ্যমে অনুধাবন করবে কি না, তা আগামী তিন বছরে সরকারের আর দলীয় কর্মী-সমর্থকদের আচার-আচরণের মাধ্যমেই জানা যাবে।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, পৌর নির্বাচনে দুই রাজনৈতিক দলের জনপ্রিয়তা হ্রাসবৃদ্ধির হিসাবের বাইরে নির্বাচন কমিশনের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ভূমিকা নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের নির্বাচন নির্বিঘ্নভাবে সমাপ্ত হওয়ার পর আমি কমিশনার সাখাওয়াত হোসেনকে মোবারকবাদ জানিয়েছিলাম। গতকালের সংবাদপত্র পড়ে, রাতের টক শো শুনে ভাবছি, ধন্যবাদটি দুই দিন অপেক্ষা করে দিলেই যথার্থ হতো। শেষ দিনের দুই বিভাগের নির্বাচনের পর প্রথম আলো তাদের প্রথম পৃষ্ঠার শীর্ষ সংবাদে লিখেছে, ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার, সরকার আর নির্বাচন কমিশনের জন্য তা আর হলো না।’ গতকাল সকালের দৈনিকে, আগের রাতে টক শোতে বিশ্লেষকদের মতামত শুনে মনে হয়েছে হিংস্রতা, সন্ত্রাস, ক্ষমতাসীনদের প্রশাসনিক প্রভাব রোধে নির্বাচন কমিশন দৃঢ় অবস্থান নিতে পারেনি। আবার কেউ তাদের অসহায়ত্ব, কেউ বা অনীহাও লক্ষ করেছেন। নির্বাচন কমিশন যদি দলীয় পরিচয়ে দলীয় প্রার্থিতা নিষিদ্ধ করত, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের বিধানটি প্রয়োগ করত, তা হলেই শেষ দিনে মার খেতেন না।
পৌর নির্বাচন নিয়ে আগামী কয়েক দিনে আরও অনেক আলোচনা চলবে, লেখালেখি হবে। তিন বছর পর সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল কী হবে, সেই আভাস একটি স্থানীয় নির্বাচনে পুরোপুরি পাওয়া গেছে কি না, তা নিয়ে গবেষণা হবে। তবে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা অথবা দুর্বলতা এমনকি একধরনের অসহায়ত্বের প্রকাশই ঘটেছে পৌর নির্বাচন পরিচালনা ব্যবস্থায় বা অব্যবস্থার পর্যালোচনায়। যখন তাৎক্ষণিক পর্যালোচনাটি করছি, তখন আমাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করেছে নির্বাচন কমিশনের আত্মশ্লাঘা। যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘সার্বিকভাবে ভালো হয়েছে’ তখন তাঁর আত্মসন্তুষ্টি নিয়ে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন। তার পরও ভাবছি, একজন নির্বাচন কমিশনার যদি পত্রিকায় প্রকাশিত ‘নির্বাচনে তাহের স্টাইল, বন্দুকধারীদের হামলা, ব্যালট ছিনতাই, কেন্দ্র দখল, সংঘর্ষ’ নিয়ে মন্তব্য করেন, ‘নির্বাচনের দিন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী’, তা হলে তো কোনো নির্বাচনে কমিশনের যথার্থ ভূমিকা আলোচ্যই হতে পারে না। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের দায়িত্ব পালন যথাযথ হয়েছে কি না, সে প্রশ্ন করা যেতে পারে।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

No comments

Powered by Blogger.