হুমা ইউসুফ-কোনো কার্যকর উত্তর নেই

আইএসআই প্রধান লে. জে. সুজা পাশা যখন আমেরিকায় সিআইএর সঙ্গে বৈঠক শেষে পাকিস্তান ফিরছেন তখনো ওয়াজিরিস্তানে বিমান হামলায় (ড্রন অ্যাটাক) চার মিলিট্যান্ট নিহত হয়। এ হামলার সময়টি ছিল খুবই দুঃখজনক। পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিমান হামলা সীমিত করার অনুরোধের পরপরই এ হামলা চালানো হয়।


মোটেই অবাক করার বিষয় নয় যে এ সাম্প্রতিক হামলার ব্যাপারে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া ছিল অভিনয়ের মতো। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে এর সমালোচনা করেছেন। শাহবাজ শরিফ যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক সাহায্য প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের রক্ত ডলার দিয়ে কেনা যাবে না। পাকিস্তানের অনুরোধ উপেক্ষা করেছে বলে প্রচারমাধ্যম যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে। এত ঘটনার পরও মনে হয় না, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কথায় কান দেবে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আশফাক কায়ানি সব সময় বলে আসছেন, এ বিমান হামলা একটি সহিংস কাজ। পাকিস্তানিদের বিশ্বাস, তারা একসঙ্গে সোচ্চার হয়ে উঠলে যুক্তরাষ্ট্র এ বিমান হামলা বাতিল করতে পারে। কিন্তু ওয়াশিংটন মনে করে, এখানে বিমান হামলার মাধ্যমেই ভবিষ্যৎ অবস্থান মজবুত করা যেতে পারে।
এ ব্যাপারে আমেরিকার আগ্রহের বেশ কিছু কারণ আছে বলে তারা মনে করে। এ বিমান হামলা পরিকল্পনা সত্যিকার অর্থে সেসব আফগান তালেবানকে লক্ষ করে যারা পাকিস্তানের এ উপজাতি অঞ্চলকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে গড়ে তুলেছে। এ বিমান হামলা আফগানিস্তানে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীকে নৈতিক মনোবল বৃদ্ধি করে থাকে।
অধিকন্তু যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, ফাটা (ফেডারেলি অ্যাডমিনিস্টার্ড ট্রাইবাল এরিয়া) অঞ্চলের জনগণ যারা সন্ত্রাসের শিকার তারা তলে তলে এ হামলাকে সমর্থন করে থাকে। বেশ কয়েকজন ফাটাভিত্তিক সাংবাদিকের বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, এ বিমান হামলার পরিকল্পনাটি ওই এলাকার মানুষ মূল্যায়ন করে এভাবে : পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রচলিত আক্রমণ কৌশলের চেয়ে এ হামলায় ক্ষয়ক্ষতি হয় কম এবং বিভিন্ন মিলিট্যান্ট আক্রমণকে প্রতিহত করে। কথা সত্যি। এ বিমান হামলার ভয়ে মিলিট্যান্টরা তাদের প্রশিক্ষণকে সংক্ষিপ্ত করে এবং লোক রিক্রুট করে কম, উপগ্রহের মাধ্যমে ব্যবহৃত ফোন করা এড়িয়ে চলে এবং দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে না। এ বিষয় লক্ষ করে ওয়াশিংটনের কেউ কেউ বিমান হামলার (ড্রন অ্যাটাক) বিরোধিতা করেন। তাঁরা মনে করেন, এটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সংকীর্ণতার ফল, যে সেনাবাহিনী তালেবানের দখল করা এলাকায় নিজেরা শারীরিকভাবে ঝুঁকি নিতে চায় না।
এ খেলায় অন্য একটি হিসাব-নিকাশও আছে। যুক্তরাষ্ট্র এখনো মনে করে, উত্তর ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ হামলা একটি মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। এটা বাদ দেওয়া হলে সেনা আক্রমণের প্রয়োজন পড়বে। একটি প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিকোণও রয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তান কাউন্টার ইনসার্জেন্সি ফান্ডকে যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রতিরক্ষা দপ্তরে ট্রান্সফার করা হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তান সম্পর্কে লজিস্টিক সাপোর্টের হিসাবে মিলিটারি থেকে মিলিটারি আদান-প্রদানে পরিণত হয়েছে।
সংখ্যা নিয়ে মাতামাতি না করে পাকিস্তানের উচিত একটি স্বচ্ছতা দাবি করা, একটি লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্কের প্রস্তাব করা, যা কি না যুক্তরাষ্ট্রকে বলতে বাধ্য করবে, কারা মূলত লক্ষ্যবস্তু। নিউ আমেরিকান ফাউন্ডেশনের মতে, বেশির ভাগ শিকার হলো নিচু পর্যায়ের মিলিট্যান্ট। ২০১০ সালে ১১৮টি আক্রমণে ৬০০ থেকে এক হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু এদের মধ্যে মাত্র ১২ জন ছিল মিলিট্যান্ট নেতা।
পাকিস্তানে এ বিমান হামলা বিতর্ক পরিষ্কার হওয়া দরকার। যদি এমন হয় যে এ বিমান হামলা সত্যিকার অর্থে কোনো কাজে আসছে না তাহলে পাকিস্তানের উচিত হবে একটি কাউন্টার টেররিজম কৌশলকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা। বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের অভিযোগ যদি সত্যি হয়, ইসলামাবাদের উচিত হবে ড্রন প্রযুক্তি ট্রান্সফারের অনুরোধ বন্ধ করা। জনগণ যদি হতাহত হয়, তাহলে কে বা কারা এ প্রকল্প চালাচ্ছে সেটা আর বড় কথা থাকে না। আর যদি সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন আসে, তাহলে পাকিস্তানের একটি চূড়ান্ত আলোচনার জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত। দেখা উচিত কিভাবে সামরিক ও বেসামরিক সাহায্য পাকিস্তানের স্বভূমিকে অবমাননা করছে।

লেখক : ওয়াশিংটনে উড্রো উইলসন সেন্টারের পাকিস্তানি স্কলার।
দ্য ডন থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর : মহসীন হাবিব

No comments

Powered by Blogger.