চরাচর-বিশ্বজুড়ে মাদক-বাণিজ্য by আজিজুর রহমান

তরল আফিম আঠা প্রক্রিয়া করে তৈরি হয় প্রাণঘাতী মাদক হেরোইন, যার মূল উৎসও পপি নামের উদ্ভিদ। আফিম পপির চাষ হয় এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে। একসময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও লাওস নিয়ে গঠিত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল এবং ইরান,

পাকিস্তান ও আফগানিস্তান নিয়ে গোল্ডেন ক্রিসেন্ট নামের এ দুটি অঞ্চল আফিম পপি উৎপাদনের জন্য বিশ্বজুড়ে কুখ্যাতি অর্জন করেছিল। তখন বিশ্বের ৬০ শতাংশ আফিম উৎপাদিত হতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল অঞ্চলে। লাতিন আমেরিকার মেঙ্েিকা, কলম্বিয়া, পেরু, পানামা, বলিভিয়াসহ কয়েকটি দেশে পপির চাষ হয়। ভারতেও আফিম পপির চাষ হয়। তবে তা ওষুধ তৈরিতে ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নিয়ে। আফগানিস্তান এখন শীর্ষ আফিম উৎপাদক দেশে পরিণত হয়েছে, আর মিয়ানমারের অবস্থান দ্বিতীয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গল অঞ্চলে মিয়ানমার এখনো প্রধান আফিম উৎপাদক দেশ। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শান প্রদেশে সবচেয়ে বেশি আফিম পপির চাষ হয়। এ অঞ্চল মূলত বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। চীন ও মিয়ানমারের সীমান্তে অবস্থিত ভারতের অরুণাচল রাজ্যের লোহিত উপত্যকা আফিম পপি চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। একে কোকেন ভ্যালিও বলা হয়। শত শত বছর ধরে ধর্মীয় কাজে এবং ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক অনুমতি নিয়ে এখানে পপির চাষ হচ্ছে। কলম্বিয়ায়ও বিপুল পরিমাণ কোকেন উৎপন্ন হয়। পেরু ও বলিভিয়ার উৎপাদন কিছুটা বাড়লেও পাঁচ বছরের মধ্যে গত বছরই সবচেয়ে কম কোকেন উৎপন্ন হয়েছে। আফগানিস্তান বর্তমানে বিশ্বের প্রধান আফিম পপি উৎপাদক দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৯২ শতাংশ উৎপাদিত হয় এই দেশে। দেশটির অভ্যন্তরে গোপন ল্যাবরেটরিতে আফিম থেকে মরফিন ও হোরোইন উৎপাদনের পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। মাঠপর্যায় থেকেই বছরে তিন হাজার ৫০০ টন আফিম ইরান ও পাকিস্তান হয়ে প্রথমে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এবং পরে ইউরোপসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আফগানিস্তানের দুই-তৃতীয়াংশ আফিমের চাষ হয় পাকিস্তান সীমান্ত লাগোয়া দক্ষিণাঞ্চলীয় হেলমান্দ প্রদেশে। দুর্গম এলাকা বলেই এখানে প্রবেশ ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ খুবই কঠিন কাজ। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বহুজাতিক বাহিনী আফগানিস্তানে প্রবেশের পর ব্রিটিশ সেনারা এলাকাটি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নিয়েছিল। কিন্তু আফিম পপির চাষ ঠেকাতে কার্যত তারা ব্যর্থ হয়।
আজিজুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.