গ্রামে গ্রামে লাশের মিছিল, মাতম by সত্যজিৎ ঘোষ

স্বজন হারানো মানুষের বিলাপ আর আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে শরীয়তপুরের নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ ও ডামুড্যা উপজেলার অনেকগুলো গ্রামের বাতাস। গত সোমবার রাতে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় লঞ্চডুবিতে নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগ এসব উপজেলার বাসিন্দা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পৌঁছেছে ৫০টি লাশ। এখনো নিখোঁজ আছে অনেক মানুষ।

জানা গেছে, লঞ্চডুবির ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ১১২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি লাশ মঙ্গলবার রাতে শরীয়তপুরের সুরেশ্বর লঞ্চঘাটে পৌঁছায়। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পৌঁছায় আরও ৩৪টি লাশ। স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসন লাশ পৌঁছে দিচ্ছে বাড়ি বাড়ি।
নড়িয়া উপজেলার পণ্ডিতসার, গোলার মাঠ, দিনারা, বাহেরকুশিয়া, শন্ডা, ইছাপাশা, সুরেশ্বর, কাঁচিকাটা, তেলীপাড়া, ঘড়িসার, বাংলাবাজার, চরলাউলানী, চরমোহন ও কাঠহুগলি; ভেদরগঞ্জ উপজেলার পুঁটিঝুড়ি, পুটিয়া, কার্তিকপুর, রামভদ্রপুর, ইকরকান্দি ও মহিষার এবং ডামুড্যা উপজেলার সিড্যা গ্রামে চলছে মাতম।
এলাকার মানুষ তিন দিনের শোক কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। গ্রামগুলোর প্রতিটি বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা ওড়ানো হয়েছে। গ্রামের মানুষ কালো ব্যাজ ধারণ করছে। মসজিদে মসজিদে চলছে কোরআন খতম ও দোয়া অনুষ্ঠান। এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গতকাল বুধবার ছুটি ঘোষণা করা হয়।
নড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঘড়িসার গ্রামের বাসিন্দা হাসানুজ্জামান বলেন, এত বড় শোক এলাকার মানুষ খুব সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবে না। এমন অনেক পরিবার আছে, যারা হারিয়েছে একাধিক আপনজন।
এখানকার প্রায় ৫০ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনেরা। সুরেশ্বর লঞ্চঘাটে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের সঙ্গে গতকাল কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, নড়িয়া উপজেলার দিনারা গ্রামের মাসুদ ছৈয়াল (৫৫), ছাব্বির ছৈয়াল (১৩), হাসেম ছৈয়াল (৫০), রিফাত (৮), মনির হোসেন শেখ (২৫), ঘড়িসার গ্রামের মোহাম্মদ আলী (৫০), বাংলাবাজার গ্রামের শাজাহান রাঢ়ী (২২), কামাল (৩০), ফারুক (৩৫), রুবেল (২৭), লিটন মিয়া (৩৫), চরমোহন গ্রামের শুভ মিয়া (১০), চরলাউলানী গ্রামের আলমগীর গাজী (৩৫), ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিষার গ্রামের আরিফা (২৪), ইকরকান্দি গ্রামের রাসিদা বেগম (৪০), ভেদরগঞ্জ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পুটিয়া গ্রামের নিলয় (২), সেলিম (৩০), তাসলিমা (২৫), স্নেহা (৪), সোনিয়া (২০), মীনা বেগম (১৮) নিখোঁজ রয়েছেন।
লঞ্চ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া লিটন ছৈয়াল বলেন, ‘আমি লঞ্চে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি পানির তোড়ে ভেসে যাচ্ছি। অন্য একটি লঞ্চের বয়ার সাহায্যে নিজে তীরে উঠতে পারলেও আমার ছেলে ও ভাই লঞ্চের সঙ্গে ডুবে যায়। এখনো তাদের কোনো সন্ধান পাইনি।’
নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘লঞ্চে যারা যাত্রী হয়েছিল, তাদের সবার খোঁজ মেলেনি। তবে আমাদের কাছে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই।’

No comments

Powered by Blogger.