ভারতের আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে by গাজীউল হাসান খান

ভারতের মতো একটি বড় দেশের প্রতিবেশী হওয়া কতটা সৌভাগ্যের ব্যাপার, তা বাংলাদেশের জনগণ এখন ক্রমেই আরো ব্যাপকভাবে উপলব্ধি করতে শুরু করেছে। নিজ স্বার্থ ছাড়া অন্য কোনো ব্যাপারে ভারত তার ক্ষুদ্র প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্ভবত কিছু পরামর্শ করারও ধার ধারে না।

তোয়াক্কা করে না ভারতের কোনো কর্মকাণ্ড কিংবা পরিকল্পনার কারণে অন্যদের কী সর্বনাশ হতে পারে, তার। নতুবা ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের পরপরই, অর্থাৎ ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ভারতের তৎকালীন সেচমন্ত্রী কে এল রাও কিভাবে একটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সরকারের সঙ্গে কোনো পরামর্শ ছাড়াই দুই দেশের মধ্যে প্রবহমান অভিন্ন নদ-নদীকে কেন্দ্র করে একতরফাভাবে ২ হাজার ৬৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি আন্তনদী সংযোগ খাল খননের প্রস্তাব করতে পারলেন? ভারতে তখনো কংগ্রেস সরকারই ক্ষমতায় ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল হিমালয় অববাহিকায় গঙ্গার সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র ও এর শাখা-প্রশাখা এবং গঙ্গার সঙ্গে মহানন্দার বিভিন্ন স্থানে বাঁধ নির্মাণ ও সংযোগ খাল খননের মাধ্যমে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার বর্গকিলোমিটার কৃষিজমিতে সেচ সুবিধা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে কৃত্রিমভাবে পানি প্রত্যাহার করা। ভারতের দক্ষিণ অববাহিকায়ও একইভাবে মহানন্দা, গোদাবরি, কৃষ্ণা ও কাবেরীর মধ্যে আন্তনদী সংযোগ খাল খননের প্রস্তাব করা হয়।
ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এ ধরনের বিশাল অথচ উদ্ভট আন্তনদী সংযোগ খাল খননের জল্পনা-কল্পনা করা হলেও তা কখনো বাস্তবে রূপ লাভ করতে পারেনি। কে এল রাওয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯৮২ সালে ভারতের জাতীয় পানি উন্নয়ন সংস্থাকে এ ব্যাপারে জরিপের ভিত্তিতে একটি সমীক্ষাপত্র পেশ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বার বার বিভিন্ন নদীর পানি প্রবাহের স্বাভাবিক গতিপথ পরিবর্তনের ফলে ভাটির দেশে কী ধরনের বৈজ্ঞানিক বা প্রাকৃতিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে, তা তখন হয়তো ভেবে দেখা হয়নি। তা ছাড়া উভয় দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ৫৪টি অভিন্ন নদীতে বাংলাদেশের সঙ্গে তেমন কোনো চূড়ান্ত পরামর্শ বা যৌথ সিদ্ধান্ত ছাড়াই ভারত যত্রতত্র বাঁধ নির্মাণ করার এক বিশাল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি এখন বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং জলাধার নির্মাণের লক্ষ্যে ভারত সরকার উত্তর-পূর্ব ভারতের নদ-নদীর ওপর ১৬টি বৃহৎ বাঁধ চালু করেছে এবং আরো আটটি বৃহৎ বাঁধ নির্মাণাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। এর পাশাপাশি ভারত আরো ৬৪টি বাঁধ নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছে, যার মধ্যে 'টিপাইমুখ বাঁধ' অন্যতম প্রধান প্রকল্প।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্মাণ করা হয় ফারাক্কা বাঁধ, যা চালু করা হয় ১৯৭৫ সালের ২১ জুলাই। অভিন্ন নদীর ওপর সেই বাঁধ নির্মাণের ফলে পদ্মার পানির প্রবাহ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এতে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান অত্যন্ত বিচলিত হয়ে সেই অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করার জন্য ভারতের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ নেন অত্যন্ত জরুরিভাবে। কিন্তু সেই ব্যাপারে ভারতের গড়িমসির কারণে তিনি জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ ও মধ্যস্থতা কামনা করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেই ঘটনায় শেষ পর্যন্ত ভারত জাতিসংঘের বাইরেই বাংলাদেশের সঙ্গে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু আজও তার চূড়ান্ত কোনো স্থায়ী ফয়সালা হয়নি। অথচ ইতিমধ্যে রাজশাহী অঞ্চলে পানির অভাবে চর জেগে জেগে এককালের প্রমত্ত পদ্মা এখন একটি শীর্ণ ধারায় পরিণত হয়েছে। মরে গেছে আশপাশের ছোট নদীগুলো। সেই অবস্থায় ভারত আবার হাত দিয়েছে বরাক নদীর সংযোগস্থলে 'টিপাইমুখ বাঁধ' নির্মাণের কাজে। এ ব্যাপারে বৃহত্তর সিলেটসহ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের তীব্র প্রতিবাদের মুখেও ভারতের প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রী বলে চলেছেন, টিপাইমুখে ভারত এমন কিছু করবে না, যাতে বাংলাদেশের ক্ষতি হতে পারে। এ অবস্থায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ভারত কি এখনো বাংলাদেশের ওপর ফারাক্কার প্রতিক্রিয়া লক্ষ করেনি? উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষকে রাজনীতিগতভাবে খুশি করার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যা-ই করছেন, তাতে ভূ-প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে যেমন বাংলাদেশ বাঁচবে না, তেমনি তাদেরও কেউ রক্ষা করতে পারবে না। ফলে সম্পূর্ণ ধ্বংস হতে পারে এই বিস্তীর্ণ জনপদ।
অভিন্ন নদীর পানি ব্যবহারের ব্যাপারে যেমন কিছু সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে, তেমনি রয়েছে জাতিসংঘের সনদ। পানিবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন ও সনদ অনুযায়ী ভাটির দেশে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে এমন কিছুই উজানের দেশ অভিন্ন নদ-নদীতে করতে পারবে না। বিভিন্ন নদীর ওপর একতরফাভাবে বাঁধ নির্মাণ কিংবা তার স্বাভাবিক প্রবাহকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়াও আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তির লঙ্ঘন বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। তা ছাড়া অভিন্ন নদীর ব্যাপারে হেলসিংকি ঘোষণা অনুযায়ী ভাটি অঞ্চলের দেশের অনুমতি ছাড়া উজানের দেশের পক্ষে কিছুই করা আইনসিদ্ধ হবে না। এ অবস্থায় গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের উচ্চ আদালত ভারতের প্রস্তাবিত আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা কিভাবে কার্যকর করা যেতে পারে? কারণ, সেখানে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, মহানন্দা ও গঙ্গার মতো বেশ কয়েকটি প্রধান অভিন্ন নদ-নদী রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের উচ্চ আদালত কি এই আদেশটি দেওয়ার আগে ২০১০ সালের ৩৭তম দিলি্ল বৈঠক এবং ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হাসিনা-মনমোহন শীর্ষ বৈঠকের সিদ্ধান্তকে মোটেও বিবেচনায় বা আমলে নেয়নি? রাজনীতিকরা অনেক সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে তাঁদের রাজনৈতিক স্বার্থে একতরফাভাবে অনেক প্রকল্পের ঘোষণা দিতে পারেন, যা উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের পক্ষে মোটেও সংগত নয়। ভারতের আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ভাটির দেশ বাংলাদেশের অভিন্ন নদীগুলো অবশ্যই নাব্যতা হারাবে। পানি প্রবাহের স্বল্পতায় পদ্মা, মেঘনা, তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র ক্রমেই গতি হারিয়ে বিরান ভূমিতে পরিণত হবে। অন্যান্য নদীতে পানিপ্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় দেখা দেবে সর্বনাশা ভাঙন এবং বৃদ্ধি পাবে লবণাক্ততা, যার প্রভাব উদ্ভিদ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর পড়বে মারাত্মকভাবে। ফলে বাংলাদেশের এক বিস্তীর্ণ অংশজুড়ে শুরু হবে মরুকরণপ্রক্রিয়া। প্রয়োজনীয় পানির অভাবে কৃষিকাজ দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তা ছাড়া যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের নৌ যোগাযোগ ও বাণিজ্যব্যবস্থা, তেমনি হুমকির মুখে পড়বে মৎস্যসহ অন্যান্য শিল্পের বিকাশ। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, অর্থাৎ হিমালয় অববাহিকায় রয়েছে বাংলাদেশের অভিন্ন নদীগুলো। সেই উৎসস্থলে বাঁধ নির্মাণ কিংবা সেখান থেকে সংযোগ খাল খননের প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, ভারতের উচ্চ আদালতের বিজ্ঞ বিচারপতিদের সেই ধারণা অবশ্যই রয়েছে বলে আমরা ভেবেছিলাম। ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খরা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং প্রয়োজনীয় সেচের পানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাব্য পথ হিসেবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ির শাসনামলে আন্তনদী সংযোগবিষয়ক একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেই প্রকল্পে ১৬টি খাল খননের মাধ্যমে মোট ৩৮টি নদ-নদীর মধ্যে আন্তসংযোগ স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছিল। তাতে ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন নদীগুলোর গতিপথ কৃত্রিমভাবে পরিবর্তন করার কথা বলা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের একটি উল্লেখযোগ্য বরখেলাপ।
তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে যখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যে চলছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত টানাপড়েন, ঠিক সেই হতাশাব্যঞ্জক মুহূর্তেই ভারতের উচ্চ আদালত প্রস্তাবিত আন্তনদী সংযোগ স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নের আদেশ দিয়েছে। সেই আদেশের সঙ্গে প্রকল্প বাস্তবায়ন উপলক্ষে একটি কমিশন গঠনের সুপারিশও করা হয়েছে। অতীতে বিজেপি সরকারের আমলে ভারতের আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পের কথা যখন প্রকাশ পায়, তখনই এর প্রতিবাদে বাংলাদেশের জনগণ সোচ্চার হয়ে উঠেছিল। ভারতের দক্ষিণপন্থী বিজেপি সরকারের পতনের পর, অর্থাৎ বর্তমান কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সংযুক্ত প্রগতিশীল জোট ক্ষমতা গ্রহণের পর তা অনেকখানি চাপা পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন সাম্যবাদী দল (সিপিএম) রাজ্য সরকারের পরাজয়ের পর তৃণমূল কংগ্রেসনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব নিয়ে তিস্তার পানিবণ্টনের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রস্তাবের বিরোধিতা করে তা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। অপরদিকে, পশ্চিমবঙ্গে কৃষিকাজের জন্য সেচের পানি বাড়ানোর লক্ষ্যে এ অঞ্চলে আন্তনদী সংযোগের ওপর বিশেষভাবে জোর দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এর ফলে ভারতের ব্যাপারে বাংলাদেশের জনমনে এক তীব্র অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠতে শুরু করেছে, যা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান মহাজোট সরকারের রাজনীতির ওপর এক বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, ভারতের উচ্চ আদালতের আন্তনদী সংযোগসংক্রান্ত আদেশ বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান অবস্থায় 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা'-এর মতোই আপতিত হয়েছে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি নিয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের সঙ্গেও বিশেষ আলোচনা প্রয়োজন। ব্রহ্মপুত্রের পানিপ্রবাহ নিশ্চিত রাখতে চীন সরকারের সঙ্গেও আলোচনা আবশ্যক। কারণ, এ বিষয়টির সঙ্গে বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে। দুই প্রতিবেশী দেশের সরকারি পর্যায়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আন্তনদী সংযোগ প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগেই তা নিষ্পত্তি না হলে প্রয়োজনে জাতিসংঘের শরণাপন্ন হতে হবে। তা ছাড়া আছে আন্তর্জাতিক আদালতও। কারণ, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের সনদের পরিপ্রেক্ষিতে অভিন্ন নদী ব্যবহারের বিষয়টি ভারত মনে হয় বুঝেও না বোঝার মতো আচরণ করছে। তাই প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রস্তাবিত আন্তনদী সংযোগ প্রকল্প অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মোটেও বাস্তবসম্মত কি না অথবা বৈজ্ঞানিক দিক দিয়ে এর ভূ-প্রাকৃতিক প্রভাব কতটা পড়বে, তা বিবেচনা না করে অভিন্ন নদী নিয়ে ভারতের একতরফা কার্যকলাপ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়টির মতো অভিন্ন নদ-নদীসংক্রান্ত ইস্যুটিরও চূড়ান্তভাবে একটি ফয়সালা হওয়া উচিত। নতুবা ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রকৃত অর্থে কোনো বন্ধুত্বই গড়ে উঠবে না। কারণ, দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন করে বন্ধুত্ব দিয়ে কী হবে? কার স্বার্থে সেই বন্ধুত্ব?
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
লন্ডন, ৬ মার্চ, ২০১২

No comments

Powered by Blogger.