নৌপরিবহনে নৈরাজ্য রোধ করুন-মর্মান্তিক লঞ্চ দুর্ঘটনা

গজারিয়ায় মেঘনার তীরে শোকের ছায়া দীর্ঘতর হচ্ছে। বাড়ছে লাশের সংখ্যা। তিন শতাধিক যাত্রীর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। কারণ, যাত্রীরা বলছেন, লঞ্চে ছিল চার শতাধিক যাত্রী। প্রাণে বেঁচেছে শ-খানেক। তাহলে বাকি তিন শতাধিক যাত্রীর ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা সহজেই অনুমান করা চলে।

ঝড়-দুর্যোগ ছাড়াই, শুধু বিবেকহীন কিছু নৌযান মালিক-চালকের নৈরাজ্যকর ও বেআইনি তৎপরতার জন্য এত নিরীহ মানুষকে অকালে মরতে হলো।
লঞ্চটিতে দিনে ৩৩২ জন ও রাতে ২২৫ জন যাত্রী বহন করার অনুমতি ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীবহন রোধের কোনো ব্যবস্থা যদি না থাকে, তাহলে যাত্রীর সংখ্যা বেঁধে দেওয়ার কী সার্থকতা থাকতে পারে? দুই বছর আগে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর রাতে মালবাহী কার্গো জাহাজসহ যেকোনো ধরনের জাহাজ চলাচল সম্পূর্ণ নিষেধ করে। কিন্তু অভিযুক্ত মালবাহী কার্গো জাহাজটি রাতের অন্ধকারে লঞ্চটিকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছে। কোথায় নৌপুলিশ, কোথায় প্রশাসন? তারা কি রাতে দায়িত্ব পালন করে না? তাহলে তাদেরও জবাবদিহি করতে হবে। দায় শুধু মালিক-চালকদেরই নয়, যাঁরা আইন প্রয়োগে অবহেলা করেন, তাঁদেরও। নৌপথে আইন প্রয়োগে গাফিলতির জন্যও কোনো না কোনো শাস্তির বিধান থাকতে হবে।
নৌচলাচল ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিশেষত, রাতে চালকেরা যেন বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি তাঁদের বিবেচনায় স্থান পায় না। শুধু মুনাফাতাড়িত হয়ে অতিরিক্ত মাল ও মানুষ তোলেন। অনেক লঞ্চচালক পরিবহন ব্যয় বাঁচানোর জন্য ঘুটঘুটে অন্ধকারেও হেডলাইট জ্বালান না, শুধু মাঝেমধ্যে লাইট জ্বালিয়ে দেখে নেন, সামনে কোনো বাধা আছে কি না। এর ফলে অন্য নৌযান বুঝতে পারে না সামনে বা পাশে কী আছে।
গঠিত তদন্ত কমিটি সব ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করুক। নিয়ম ভঙ্গের জন্য শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে বারবার একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটবে।
লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারবর্গের প্রতি জানাই আমাদের সমবেদনা। তাদের দ্রুত উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিলে শোকাহত পরিবারগুলো অন্তত কিছুটা সান্ত্বনা পাবে।

No comments

Powered by Blogger.