লোহানের নতুন জীবন

স্বর্গের সিঁড়ি ভেঙে যেমন তরতর করে উঠে যাওয়া যায়, তেমনি নরকের আস্তাকুঁড়ে নিজেকে নামিয়ে আনতেও সময় লাগে না। শুনতে দার্শনিকের রাশভারী বচনের মতো লাগতে পারে। লিন্ডসে লোহানের কাছে এটাই এখন বাস্তবতা। মাত্র ১১ বছর বয়সে ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল হলিউডে। তা-ও ডিজনির মতো বড় নির্মাতাদের হাত ধরে। অভিনেত্রী,

পপ তারকা এবং মডেল—তিন মাধ্যমেই নিজেকে করে তুলেছিলেন দারুণ জনপ্রিয়। কাজ করেছেন টিভিতেও। স্বর্গের সিঁড়ি দ্রুত ভাঙতে গিয়েই হোঁচট। ধপ করে পড়ে গেলেন বৈতরণীতে। ভুল দানে জীবনের সাপলুডু খেলতে গিয়ে বারবার সাপের ছোবলে তলানিতে নামতে থাকা এই ২৫ বছর বয়সী এখন বলছেন, নোংরা জীবনটার খোলস ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন। এখন লোহানের জীবনে শুরু হচ্ছে সম্পূর্ণ নতুন এক অধ্যায়।
নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে জরিমানা দেওয়া, মাদক গ্রহণ, মাদকদ্রব্য বহন, লাগামছাড়া নৈশজীবন—রাতভর নাইট ক্লাবের পার্টিতে মজে থাকা—২০০৭ সাল থেকে পতনের ঢালু পথে নামতে শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত জোটে চুরির অপবাদও। গত বছর জানুয়ারিতে ক্যালিফোর্নিয়ার এক গয়নার দোকান থেকে নেকলেস চুরি করে ধরা পড়েন। এর আগেও বেশ কবার আদালত, সেই সূত্র ধরে পুনর্বাসন কেন্দ্রে যাওয়া লোহান আরও একবার শাস্তি পান।
বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেলেও এখনো তাঁকে সামাজিক কাজ করতে হচ্ছে। তা-ও লস অ্যাঞ্জেলেসের শবালয়ে। এ মাসেই এ কাজ থেকে মুক্তি পাবেন। অদৃশ্য শিকল ছুটে গেলেই আবার হয়তো ডানা ঝাপটাবে বুনো পায়রাটি। লোহানভক্তদের ভয় এটাই। কিন্তু তিনি আশ্বস্ত করলেন এই বলে, ‘জীবনে ভুল করে করে ভুলের পাহাড় জমেছে। সেটা স্বীকার করছি। কিন্তু আমি এখন স্বচ্ছ। জীবনকে নতুন করে শুরু করতে চাই।’
দ্য প্যারেন্ট ট্র্যাপ ছবি দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল। কাকতালীয় কী জানেন, লোহানের জীবনটা আসলে এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল শৈশবে, তাঁর বাবা-মায়ের ভঙ্গুর সম্পর্কের ফাঁদে পড়ে। লাগামছাড়া জীবনের খেসারত দিতে গিয়ে ক্যারিয়ারটাই চলে গিয়েছিল আইসিইউতে। হাতছাড়া হয়েছিল একের পর ছবি, কাজ। ‘২০১২ সালে আমার নবজন্ম হয়েছে’ ঘোষণা করা লোহান আবারও শুরু করেছেন কাজ। ‘স্যাটারডে নাইট লাইভ’ নামের একটি টিভি অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা শুরু করেছেন এ মাসের শুরু থেকে। হলিউড কিংবদন্তি এলিজাবেথ টেলরকে নিয়ে ছবি বানানো হচ্ছে, সেই ছবিতেও কাজ করবেন লোহান।
গত সপ্তাহে এনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘মিন গার্লস’ তারকা এমনও বলেছেন, এখন নাকি নৈশজীবনটার ওপর ঘেন্না ধরে গেছে, ‘মাস কয়েক আগে একজন বন্ধুর সঙ্গে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু খুবই অস্বস্তি হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, এই জিনিসও তো এর আগে এতবার করেছি। একদমই মজা লাগেনি। এখন আসলে অনেক বেশি ঘরকুনো হয়ে গেছি। রাতের পার্টি-ফার্টি এখন আর ভালো লাগে না।’
কেভিন ফেদারলাইনের সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর সোনালি চুল সব কেটে ফেলে মাথা ন্যাড়া করেছিলেন ব্রিটনি স্পিয়ার্স। অতটা ‘চরমপন্থী’ হননি লোহান। নিজের সোনালি চুলের রং পাল্টেছেন। চুলে এখন সকালের সূর্যোদয়ের লালচে আভা। সূর্যোদয় তো নতুন দিনের শুরুরও প্রতীক!
 রাজীব হাসান
তথ্য: বার্তা সংস্থা

No comments

Powered by Blogger.