অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা-রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করতে হবে

বিষয়টি ভাবতে গেলে বিস্মিত হতে হয়। স্বাধীনতার চার দশক পেরিয়ে এসেও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার কথা আমরা চিন্তাও করতে পারি না। অর্থনৈতিকভাবে একটি জাতিকে স্বাবলম্বী হতে হলে একটি রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন। প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক্যের।

দুই বছরের চেপে বসা শাসনের অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের নতুন করে গণতন্ত্রে ফেরার বয়সও তিন বছর হয়ে গেল। এবার অন্তত যা কাম্য ছিল, সেই রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সহনশীলতার পরিচয় আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত অনুপস্থিত। উপরন্তু দুই ভাগে বিভক্ত জনমতকে পুঁজি করে ফায়দা লোটার প্রবণতা যেন নতুন করে দেখা যাচ্ছে। এ প্রবণতা দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি তা দেশের অর্থনীতিকেও স্থিতিশীল হতে দিচ্ছে না। সিপিডির সাম্প্রতিক সে দিকগুলোই তুলে ধরা হয়েছে।
দেশের অর্থনীতি শুরু থেকেই পরনির্ভর। সাহায্যনির্ভর এই অর্থনীতিতে দেশ এখন পর্যন্ত নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেনি। যেকোনো উন্নয়নকাজের জন্য বিদেশি সহায়তার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়ে। বিদেশি সাহায্য বন্ধ হলে দেখা দেয় স্থবিরতা। এ অবস্থায় ভরসা রাখা যেতে পারে একমাত্র দেশীয় সম্পদের ওপর। আমাদের দেশীয় সম্পদ এত সীমিত। সীমিত সম্পদ সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সর্বোচ্চ ব্যবহারের উদাহরণ বিশ্বে আছে। সেখানে সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু আমাদের সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমরা কোনো ঐকমত্যে পৌঁছানো দূরের কথা, নিজেদের দুর্বলতা ও অদক্ষতা কাটিয়ে ওঠা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। এর পাশাপাশি সিদ্ধান্তহীনতা অনেক কিছু পিছিয়ে দিয়েছে। উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় বেড়েছে। অন্যদিকে উৎপাদনশীল ও অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় বেড়েছে। এসবের মূলে রয়েছে একধরনের দৈন্য। অর্থনৈতিক দৈন্যের পাশাপাশি রাজনৈতিক কারণেও অনুন্নয়ন খাতে ব্যয় বাড়ে। আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বিপুল ফারাক। মূল্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার কোনো উদ্যোগ নেই। প্রবৃদ্ধির ধারা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সেভাবে সৃষ্টি করা যায়নি। স্বাভাবিক কারণেই অর্থনীতিতে এর চাপ পড়বে। এর সঙ্গে রয়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের ঘাটতি। তার সঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা যোগ হলে দেশে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনোখানে বিনিয়োগ করতে গেলে আগে অবকাঠামোগত সুবিধা খুঁজবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে গ্যাস-বিদ্যুতের নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর পাশাপাশি দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে তার প্রভাব পড়ে বিনিয়োগে। বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে অর্থনীতিতে। বিনিয়োগের অন্যতম পূর্বশর্ত নিরাপত্তা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে নিরাপত্তাও বিঘি্নত হয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল না হওয়ার পেছনে বড় কারণ হলো অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এর পাশাপাশি সদিচ্ছা ও দক্ষতার অভাবও রয়েছে। কিন্তু এই ঝুঁকি কাটিয়ে উঠতে হবে। অর্থনীতিকে ঝুঁকিমুক্ত করতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে দেশকে।

No comments

Powered by Blogger.