পুরস্কারকন্যা বিদ্যা বালান


২০০৬ সাল। গুজব উঠেছিল, প্রথম ছবি পরিণীতার জন্য নতুন অভিনেত্রী বিদ্যা বালান পেতে যাচ্ছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। কিন্তু রটনা আর পরে ঘটনায় রূপ নেয়নি। বিদ্যা অবশ্য ভেঙে পড়েননি। আশায় বুক বেঁধেছিলেন—সময় তো পড়েই আছে। একটা সময় ঠিকই ঝুলিতে ভরে নেবেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার। ২০১০ সাল।

পা ছবির জন্য বেসরকারি সব পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান পেয়ে বিদ্যা নতুন স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিলেন। এবার বুঝি ভাগ্যের শিকে ছিঁড়বে। কিন্তু অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন এবং প্রযোজক অভিষেক বচ্চনের হাতে পুরস্কার এলেও বিদ্যার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সেবারও অধরা রয়ে যায়। গত বছরও একই ঘটনা ঘটে। ইশকিয়া ছবির জন্য বেসরকারি সব পুরস্কার পেয়েও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাননি বিদ্যা। গত বছরের দ্য ডার্টি পিকচার ছবির জন্য হেন কোনো পুরস্কার নেই, যা বিদ্যা পাননি—স্ক্রিন, জি সিনে, অপ্সরা, স্টারডাস্ট, গ্রেট উইমেন্স অ্যাওয়ার্ডসহ ডজন খানেক পুরস্কার। ফিল্ম ফেয়ার পুরস্কারে তো জনপ্রিয় এবং সমালোচক—দুই বিভাগে বিদ্যা পুরস্কার জিতে নেন একই ছবির জন্য। সবাই ঘোষণা দেন, এবার নিশ্চিত, বিদ্যা রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পাবেন। কিন্তু বিদ্যা মনকে বোঝান, এত বড় সম্মান পাওয়ার জন্য তাঁকে আরও সাধনা করতে হবে। কিন্তু ভাগ্যের খেলা বোঝা বড় দায়। ৭ মার্চ ঘোষিত ভারতের রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে বাঘা বাঘা সব মেধাবী অভিনেত্রীকে টপকে বিদ্যার নামই জ্বলজ্বল করে পুরস্কারের তালিকায়। প্রথমবারের মতো এ সম্মান পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বিদ্যা।
বিদ্যাকে এখন ‘পুরস্কারকন্যা’ও বলা যায়। যাঁরা অন্য নায়িকাদের ভক্ত, তাঁরা রীতিমতো বিদ্যার ওপর বিরক্ত। প্রতিবছরই তাঁকে পুরস্কার জিতে নিতে হবে? পরপর তিনবার বেসরকারি পুরস্কার ঝুলিতে ভরে রেকর্ড গড়তে হবে? অবশ্য বিদ্যাকে দোষ দিয়েই লাভ কী? পুরুষপ্রধান বলিউডে বিদ্যাই হিন্দি ছবির ইতিহাসে একমাত্র অভিনেত্রী, যাঁর পরপর পাঁচটি ছবি বক্স অফিস মাত করেছে, তা-ও টানা তিন বছর। ২০০৯-এ পা, ২০১০-এ ইশকিয়া, ২০১১তে নো ওয়ান কিলড জেসিকা, দ্য ডার্টি পিকচার, ২০১২তে কাহানি। উল্লেখ করার মতো বিষয়, শেষ চারটি ছবিই নারীপ্রধান। নারীপ্রধান ছবি চলে না—এই প্রবাদ বারবার মিথ্যা প্রমাণ করেছেন বিদ্যা। আহ্লাদিত হয়ে তাই অনেকেই তাঁকে নাম দিচ্ছেন ‘বলিউডের চতুর্থ খান’, ‘বক্স অফিস কুইন’, ‘হিরো ইন বলিউড: বিদ্যা বালান’ ইত্যাদি। পরিচালক অনুরাগ কশ্যপ বলেন, ‘বিদ্যা হচ্ছেন আমির খানের নতুন সংস্করণ। এতটা সাহসী অভিনেত্রী অনেক অভিনেতাকেও লজ্জায় ফেলে দেন।কাহানি ছবিতে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা চরিত্রে বিদ্যা যা অভিনয় দেখিয়েছেন, অপূর্ব! আগামী বছরও তাঁর জন্য সব পুরস্কার তোলা থাকবে, আমি নিশ্চিত।’
এ সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া আট কোটি রুপি বাজেটের ছবি কাহানি প্রথম তিন দিনেই প্রায় ১৪ কোটি রুপি ঘরে তুলে সুপারহিট ছবির তকমা গায়ে লাগিয়েছে। রেখা, জয়া বচ্চন, শাবানা আজমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, বিদ্যার তুলনা শুধু বিদ্যাই। স্বয়ং শাহরুখ খান কাহানি দেখে বলেন, ‘বিদ্যা আমাদের মেরিল স্ট্রিপ। করব, লড়ব, জিতব—বিদ্যার অভিনয় দেখে শিখব।’
শুধু বিদ্যা আছেন বলে কাহানি ছবিতে অমিতাভ বচ্চন প্রথমবারের মতো রবীন্দ্রসংগীত ‘তবে একলা চলো রে’ গেয়েছেন। ছবির নায়ক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আসলে আমি তো এ ছবির নায়িকা। বিদ্যা বালান ফ্রেমে থাকলে কোনো পুরুষ কি প্রধান হতে পারে? বিদ্যা এবং কলকাতা এ ছবির মূল নায়ক। থ্রিলার ছবি কাহানিতে বিদ্যা সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। লন্ডন থেকে কলকাতা আসেন নিখোঁজ স্বামীর খোঁজে। এ ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করেন কলকাতার পরমব্রত। কিন্তু স্বামীর খোঁজ দিতে পারে না কেউ-ই। এমনকি কলকাতার মাটিতে স্বামীর অস্তিত্বের সন্ধানও মেলে না। ছবির পরিচালক সুজয় ঘোষ বলেন, ‘দুর্গাপূজার মধ্যে কলকাতায় শুটিং করেছি। কলকাতার অলিগলিতে বিদ্যাকে যখনই শুটিং করতে বলেছি, বিদ্যা সানন্দে রাজি হয়েছেন। শত-সহস্র লোকের ভিড়েও বিদ্যা নিঃসংকোচে হেঁটে যেতে পারেন। অভিনয় করতে পারেন। আর এটাই বিদ্যার বিশেষত্ব।’ বিদ্যার হাতে এখন মাত্র একটি ছবি, রাজকুমার গুপ্তর কমেডি ছবি ঘনচক্কর (এমরান হাশমি)। আর প্রথম ছবির প্রযোজক বিধু বিনোদের ফেরারি কি সওয়ারি ছবিতে চিকনি চামেলি ধাঁচের আইটেম গান! প্রতিদিনই ডজন খানেক ছবি ফিরিয়ে দিচ্ছেন মিস বালান। কেন? ধারণা করা হচ্ছে, এ বছরই ইউটিভির সিইও সিদ্ধার্থ রায় কাপুরের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধবেন। যদি তা-ই হয়, আগাম অভিনন্দন বিদ্যা!
 রুম্মান রশীদ খান
[ইন্ডিয়া টুডে, জি নিউজ, আইবিএন লাইভ, টাইমস অব ইন্ডিয়া, বলিউড হাঙ্গামা ডট কম অবলম্বনে]

No comments

Powered by Blogger.