অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক-চিনি-তেলের তেলেসমাতি

পবিত্র রমজানের আগেই চিনি ও ভোজ্যতেলের বাজারে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তা ঝড়ের পূর্বাভাস বলেই প্রতীয়মান হয়। সরকার বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ভোক্তাদের দাবি ছিল রমজানের আগে বাজার স্থিতিশীল রাখার। সরকার কিছু পণ্যের ওপর আমদানি শুল্কও কমিয়েছে।

কিন্তু বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি; বরং ডাল, পেঁয়াজ, ডিম ও দুধের দাম ঊর্ধ্বগতি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বুধবার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পর বাজার থেকে চিনি উধাও হয়ে গেছে। চিনির দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা। পাম অয়েল ও সয়াবিনের যথাক্রমে ৯৯ ও ১০৯ টাকা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেই তা করা হয়েছিল। তাহলে দাম কেন বাড়বে? কেন বাজারে চিনি পাওয়া যাবে না? ব্যবসায়ীরা বরাবরই পণ্যের দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেন। এবারেও চিনি ও ভোজ্যতেল নিয়ে যে তেলেসমাতি কাণ্ড হলো, এর পেছনে কাদের কারসাজি আছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি ও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
গত শুক্র ও শনিবার রাজধানীর অধিকাংশ বাজারে চিনি পাওয়া যাচ্ছিল না। দু-একটি দোকানে পাওয়া গেলেও সরকার-নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে কিনতে হয়েছে। খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, সরকার যে দাম ঠিক করে দিয়েছে, পাইকারি বাজারেই তার থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। শনিবার কয়েকটি মিল থেকে চিনি বাজারজাত শুরু হয়েছে। আজ থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এত দিন কি তারা নাকে তেল দিয়ে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন ছিল? তাদের নজরদারি থাকলে ব্যবসায়ীরা এভাবে ক্রেতাদের পকেট কাটতে পারতেন না।
ব্যবসায়ীদের অসাধুতা বা অতি মুনাফা বন্ধের উপায় বিকল্প বিপণনব্যবস্থা গড়ে তোলা। কোনো সরকারই সরকারি বিপণন-প্রতিষ্ঠান টিসিবিকে সচল ও সক্রিয় করেনি। কেন করেনি, তারও জবাব নেই। দীর্ঘদিন থেকেই টিসিবিকে সক্রিয় করার কথা বলা হলেও এর ওপর ভোক্তারা ভরসা রাখতে পারছেন না। রমজানের আগে প্রতিষ্ঠানটি যে ডাল ও খেজুর সরবরাহ করছে, তা অত্যন্ত নিম্নমানের, ক্ষেত্রবিশেষে খাওয়ার অনুপযোগী। মানুষ গাঁটের পয়সা দিয়ে নষ্ট জিনিস কিনবে কেন? জনগণের অর্থে কেনা এসব পণ্য যারা নষ্ট করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবস্থা নিতে হবে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও।
বাজার স্থিতিশীল রাখতে নিয়মিত তদারকির বিকল্প নেই। ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা ও শক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি নিয়মিত এবং ধারাবাহিক অভিযানও নিশ্চিত করতে হবে। দূর করতে হবে পণ্য পরিবহনে বাধা-বিপত্তি। পথে পথে ট্রাক থামিয়ে যে চাঁদাবাজি চলছে, তা-ও বন্ধ করা প্রয়োজন। সরকারের সামনে এখন কঠিন পরীক্ষা। তারা রমজানে ডাল, চিনি, খেজুর, পেঁয়াজ, ছোলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত এবং দাম স্থিতিশীল রাখতে পারবে, না অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে ভোক্তাদের জিম্মি থাকতে হবে?

No comments

Powered by Blogger.