কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মামলা-বিভিন্ন প্রশ্নে রাষ্ট্রপক্ষের জবাবে ট্রাইব্যুনালের অসন্তোষ

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তি উপস্থাপনকালে বিভিন্ন প্রশ্নের সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির ওপর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গতকাল বুধবার বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ অসন্তোষ জানান।

গতকাল ধার্য দিনে ট্রাইব্যুনালে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোহাম্মদ আলী। ট্রাইব্যুনাল জানতে চান, প্রথম অভিযোগের পক্ষে কোনো মৌখিক সাক্ষ্য আছে কি না? জবাবে কৌঁসুলি বলেন, মৌখিক সাক্ষ্য নেই। তবে ভোরের কাগজ-এ প্রকাশিত সংবাদ ও শাহরিয়ার কবিরের (একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি) লেখা একটি বইয়ে ঘটনাটি আছে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি গত ৭ মার্চ অভিযোগ উপস্থাপনকালে প্রথম অভিযোগে বলেছিলেন, একাত্তরে মিরপুর ১১ নম্বরের বি ব্লকের তালতলার বাসিন্দা ও সরকারি বাঙলা কলেজের ছাত্র শফিক পল্লব মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে লোকজন সংগঠিত করছিলেন। খবর পেয়ে কাদের মোল্লার নির্দেশে স্থানীয় রাজাকাররা পল্লবকে হাতে দড়ি বেঁধে মিরপুর ১ নম্বর থেকে টানতে টানতে ১২ নম্বরের ঈদগাহ মাঠে নিয়ে যায় এবং গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। তাঁর হাতের আঙুল কেটে ফেলা হয়। দুই দিন ঝুলিয়ে রাখার পর বুকে পর পর পাঁচটি গুলি করে তাঁকে হত্যা করা হয়। আরও দুই দিন তাঁকে ওই গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
গতকাল যুক্তি উপস্থাপনকালে ট্রাইব্যুনাল কৌঁসুলিকে বলেন, মিরপুর ১ নম্বর থেকে ১২ নম্বর পর্যন্ত অন্তত তিন মাইল জায়গা। এই জায়গা দিয়ে একজনের হাতে দড়ি বেঁধে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হলো, অথচ একটা সাক্ষী পাওয়া যায়নি? কী তদন্ত করেছেন? কৌঁসুলি বলেন, মৌখিক সাক্ষ্য না থাকলেও নথিপত্রের সাক্ষ্য আছে। ৪০ বছর আগের ঘটনা। পরে তদন্ত হয়েছে। হয়তো সাক্ষী পাওয়া যায়নি।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, সাক্ষী তো অবশ্যই আছে, কিন্তু আপনারা আনতে পারেননি। শাহরিয়ার কবিরকে কেউ একজন ঘটনাটি বলেছেন। যে লোক তাঁকে ঘটনাটি বলেছেন, তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে বলতে পারবেন না? আপনারা কী করেছেন? বই পেয়ে মনে করেছেন সব পেয়ে গেছি, তারপর সেখান থেকে ঘটনা তুলে ঘরে বসে লিখেছেন? ট্রাইব্যুনাল এ সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা আছেন কি না জানতে চান। তিনি উপস্থিত না থাকায় ট্রাইব্যুনাল বলেন, আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) তাঁকে এখানে ডাকবেন। আইন ও বিধিতে কৌঁসুলিদের তদন্তের বিষয় নিরীক্ষা করার ক্ষমতা দেওয়া আছে, কিন্তু তাঁরা তা করেননি। তদন্ত প্রতিবেদনে যা পেয়েছেন, হুবহু তা আনুষ্ঠানিক অভিযোগে তুলে দিয়েছেন।
একপর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল কৌঁসুলির কাছে জানতে চান, তিনি সব সাক্ষীর জবানবন্দি পড়েছেন কি না? কৌঁসুলি ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দিলে ট্রাইব্যুনাল বলেন, সাক্ষীর জবানবন্দির ১ থেকে ১০৫ পৃষ্ঠা পর্যন্ত কেন সংযুক্ত করা হলো? কৌঁসুলি বলেন, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি, ওই সময়ের নৃশংসতা তুলে ধরতে এটা সংযুক্ত করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধ এবং ওই সময়ের নৃশংসতা প্রমাণ করার কোনো দরকার নেই। এতে বিতর্কের কিছু নেই। এত বিশাল একটি বই দিয়েছেন, কিন্তু এর বেশির ভাগের সঙ্গে এই মামলার কোনো সম্পর্ক নেই।
যুক্তি উপস্থাপনের শেষ পর্যায়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে এক থেকে চার নম্বর অভিযোগের পক্ষে রয়েছে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ ও শাহরিয়ার কবিরের লেখা একটি বই। পাঁচ থেকে সাত নম্বর অভিযোগের পক্ষে নথিপত্রের সাক্ষ্য, মৌখিক সাক্ষ্য ও প্রত্যক্ষদর্শী আছে। তিনি কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আরজি জানান।
পরে ট্রাইব্যুনাল আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২১ মার্চ দিন ধার্য করেন। আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল কাদের মোল্লাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়নি।
নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উপস্থাপন চলছে: জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আলতাফ উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ উপস্থাপন গতকালও অব্যাহত রাখেন। দ্বিতীয় দিনে তিনি ৭৩ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগের ৫২ পৃষ্ঠা পর্যন্ত উপস্থাপন করেন। অভিযোগ উপস্থাপন অসমাপ্ত অবস্থায় বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়। মঙ্গলবার নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উপস্থাপন শুরু হয়।

No comments

Powered by Blogger.